অ্যাতলেটিকোর ঘরের মাঠে রিয়ালের সুযোগ আছে?
Published: 12th, March 2025 GMT
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রথম লেগ শেষে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের হুলিয়ান আলভারেজ রীতিমত একটা হুমকি দিয়ে রাখলেন নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে। আর্জেন্টাইন এই স্ট্রাইকার জানালেন, ‘এখনও ৯০ মিনিট বাকি আছে’। এতেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে আজ রাতে, (১২ মার্চ, ২০২৫) চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ফিরতি লেগেটা, একটা মহারণে পরিণত হতে যাচ্ছে।
প্রথম লেগে ২-১ ব্যবধানে জেতার পরও রিয়ালের এগিয়ে থাকাটাকে ঠুনকো মনে হচ্ছে। কারণ আজ রাতের লড়াইটা যে, অ্যাতলেটিকোর মাঠ মেত্রোপলিটানোতে। চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় লেগটা ঘরের মাঠে পাওয়াটাকে অ্যাডভান্টেজ হিসেবেই গণ্য করা হয়। তবে প্রতিপক্ষ যখন রিয়াল আর আসরতা যখন চ্যাম্পিয়নস লিগ, তখন অ্যাতলেটিকোর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ নেই।
ঘরের মাঠ মেত্রোপলিটানোতে অ্যাতলেটিকো প্রায় ৭০ শতাংশ ম্যাচই জিতেছে। তবে এই মাঠে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের বিপক্ষে তারা মাত্র ৩৩ শতাংশ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেছে। তবে এরপরআও চ্যাম্পিয়নস লিগে কিছুই পূর্বানুমান করা যায় না। বিশেষ করে এই ধরনের হাইভোল্টেজ ম্যাচে তো একদম না।
আরো পড়ুন:
জয়ের পর আনচেলত্তি জানালেন, নজর কেবল ‘তিন পয়েন্টে’
সুন্দরের গান গেয়ে মাদ্রিদ ডার্বিতে এগিয়ে রিয়াল
এই ম্যাচের আগে স্প্যানিশ লা লিগার সবশেষ ম্যাচে ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে দুই দলের। গেটাফের মাঠে গিয়ে দিয়াগো সিমিওনের অ্যাতলেটিকো ২-১ ব্যবধানে হেরে এসেছে। একই ব্যবধানে রায়ো ভায়াকানার বিপক্ষে ম্যাচ জিতেছে কার্লো আঞ্চেলত্তির রিয়াল।
গেটাফের বিপক্ষে প্রথমার্ধে চোটে পড়ার কারণে বিরতির পর আর মাঠে দেখা যায়নি অ্যাতলেটিকোর আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পলকে। চোটে আছেন দলটির গুরুত্বপূর্ণ ফরাসি সেন্টারব্যাক ক্লেমেন ল্যাঙলেট। তবে আশা করা হচ্ছে রিতালের বিপক্ষে এই দুই ফুটবলারকেই আজ পাবে লস রজাব্ল্যাঙ্কসরা। তবে সিমিওনের যে কশল তাতে শক্তির এবং ফিটনেসের বড্ড প্রয়োজন হয়। সেই জায়গাটায় এই দুই জন কতটা কার্যকরী হবে সেটা বিশাল প্রশ্ন। আর যদি ল্যাঙলেটের স্থানে রবিন লে নরমান্ড খেলেন তবে আগের ম্যাচের মতই এই জোন দিয়ে রিয়াল সকল আক্রমণ সাজাবে।
লস ব্ল্যাঙ্কসদের বয়সভিত্তিক দলে থেকে প্রত্যাখিত হওয়া আলভারেজ সবসময়ই রিয়ালের বিপক্ষে তাঁতিয়ে থাকেন। ৬ ম্যাচ খেলে এই আর্জেন্টাইন মাদ্রিদের সাদাদের বিপক্ষে পেয়েছেন ৩ গোল। অন্যদিকে এই ২৫ বছর বয়সী স্ট্রাইকারের কাছে ২০২২ বিশ্বকাপ হারানো কিলিয়ান এমবাপেও কোনভাবেই আজ রাতের লড়াই হারতে চাইবেন না। আগের লেগে গোল না পাওয়া ফরাসি উইঙ্গার এই ম্যাচে গোল ক্ষরা কাটাতে চাইবেন।
তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউটে রিয়ালের ‘এক্স ফ্যাক্টর’ বরাবরই রদ্রিগো। এই মৌসুমে ইতিমধ্য্যেই ৫ গোল ও ২ অ্যাসিস্ট করেছেন। বিশেষ মুহুর্তে দলের প্রয়োজনে সবার আগেই এগিয়ে আসেন এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। আগের ম্যাচেও এক নান্দনিক গোল করেছিলেন এই ফুটবলার।
তবে রিয়ালের বর্তমান গোল স্কোরারদের রেকর্ড অ্যাতলেটিকোর বিপক্ষে মোটেই সুবিধা না। ভিনিসিয়ুস ও এমবাপে যথাক্রমে ১৬ ও ২ ম্যাচে করেছেন একটি করে গোল। অন্যদিকে অ্যাতলেটিকোর বিপক্ষে ১৪ ম্যাচ খেলা রদ্রিগোর গোল ৩টি। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে রিয়ালের সবচেয়ে ভালো রেকর্ড ব্রাহিম দিয়াজের। এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ৮ ম্যাচে করেছেন পেয়েছেন ৩ গোল।
রিয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগে বরাবরই অতুলনীয়। তবে আজ রাতের ম্যাচের আগে অ্যাতলেটিকোর পক্ষে কথা বলছে তাদের সাম্প্রতিক ইতিহাস। লস রোকাব্ল্যাঙ্কসরা গত মৌসুমে শেষ ষোলোতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ ১-০ ব্যবধানে হেরে এসেছেও ঘরের মাঠে ভালো খেলে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ য ম প য়নস ল গ আতল ত ক ম দ র দ চ য ম প য়নস ল গ ঘর র ম ঠ ব যবধ ন আজ র ত
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।