সোলায়মান (আ.) ও হুদহুদ পাখির গল্প
Published: 16th, March 2025 GMT
আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের সুরা ফুরকানের ২১ থেকে সুরা শুআরা ও সুরা নামলের ১ থেকে ৫৯ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। ১৯তম পারা পড়া হবে। আজকের তারাবিতে আল্লাহর একাত্ববাদ, কোরআনের নেয়ামত, অবিশ্বাসীদের প্রশ্নের জবাব, আল্লাহর কুদরত, আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের গুণ, অপচয়, সোলায়মান (আ.) ও পিঁপড়ার ঘটনা, হুদহুদ পাখির সংবাদ সংগ্রহ, সাবার রানি বিলকিসের আত্মসমর্পণ, পূর্ববর্তী নবী ও তাঁদের জাতি, আল্লাহর নিয়ামত, অহংকার, ব্যবসায় সঠিক ওজন দেওয়া, মানুষের হক নষ্টের পরিণাম, বিভিন্ন জাতির ধ্বংসের বিবরণ, মুমিন জীবনে পরীক্ষা ও মুমিনদের পুরস্কার ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।
কোরআন কেন একসঙ্গে নাজিল হয়নি
আল্লাহ নবী-রাসুলদের ওপর বিভিন্ন কিতাব নাজিল করেছেন। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ চারটি কিতাব হলো তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কোরআন। রাসুলুল্লাহ (সা.
অবিশ্বাসীরা প্রশ্ন করল, তাওরাত ও ইনজিলের মতো কোরআন একবারে নাজিল হলো না কেন?
অবিশ্বাসীদের প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ সুরা ফুরকানের ৩২ নম্বর আয়াত নাজিল করেন। আল্লাহ বলেন, ‘অবিশ্বাসীরা বলে, তাঁর কাছে পুরো কোরআন একসঙ্গে অবতীর্ণ করা হলো না কেন? আমি এভাবেই অবতীর্ণ করেছি। তোমার হৃদয়কে তা দ্বারা সুদৃঢ় করার জন্য আমি তোমার কাছে তা ধীরে ধীরে পরিকল্পিত স্তরে ক্রমে ক্রমে আবৃত্তি করেছি।’
ধীরে ধীরে কোরআন নাজিলের মধ্যে বেশ উপকার রয়েছে। কোরআন মুখস্থ করা, অর্থ বোঝা, বিধান জানা এবং তা আমলে বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।
আরও পড়ুনমুসা ও খিজির (আ.)-এর চিত্তাকর্ষক গল্প২৩ মার্চ ২০২৪আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের বৈশিষ্ট্য
এ সুরার ৬৩ থেকে ৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহর বান্দাদের ১৪টি বৈশিষ্ট্যের আলোচনা এসেছে। বৈশিষ্ট্যগুলো হলো এক. তাঁরা পৃথিবীতে বিনয়ের সঙ্গে চলে। দুই. মূর্খদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। তিন. রাত জেগে ইবাদত করে। চার. জাহান্নামের আজাবের ভয়ে অন্তর কেঁপে ওঠে। পাঁচ. খরচ করার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে। ছয়. শুধু আল্লাহর ইবাদত করে। সাত. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না। আট. ব্যভিচার করে না। নয়. তওবা করে। দশ. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। এগারো. গীতবাদ্য ও খারাপ মজলিস থেকে দূরে থাকে। বারো. আল্লাহর কালাম যথাযথভাবে শোনে। তেরো. উত্তম স্ত্রী ও সন্তান লাভে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। চৌদ্দ. সঠিক পথের দিশা পেতে সাহায্য প্রার্থনা করে।
‘কবি’ শব্দে সুরার নাম
২২৭ আয়াতবিশিষ্ট সুরা শুআরা মক্কায় অবতীর্ণ। এটি কোরআনের ২৬তম সুরা। শুআয়া শব্দটি শায়ির শব্দের বহুবচন। শায়ির অর্থ কবি। সুরার শেষের কবিদের অবস্থা বর্ণনা করায় এর নাম শুআরা রাখা হয়েছে। সুরা শুআরার ১০ থেকে ১৯১ নম্বর আয়াতে মুসা-হারুন (আ.) ও ফেরাউনের কাহিনি, বাবাকে ছেলে ইবরাহিম (আ.)-এর দাওয়াত, নুহ (আ.)-এর জাতির বর্ণনা, হুদ (আ.) ও আদ জাতির কাহিনি, সামুদ জাতির ধ্বংসের ইতিহাস, লুত (আ.)-এর জাতির কাহিনি, শোয়াইব (আ.) ও মাদায়েনবাসীর বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বিবরণ রয়েছে।
সুরা নামলে পিঁপড়ার গল্প
কোরআনের ২৭তম সুরা নামল মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ৯৩। নামল অর্থ পিঁপড়া। এ সুরায় সোলায়মান (আ.)-এর সঙ্গে পিঁপড়ার কথোপকথনের বিবরণ রয়েছে, তাই এটিকে সুরা নামল বলা হয়।
সোলায়মান (আ.) ছিলেন তৎকালীন পৃথিবীর বাদশাহ ও অঢেল ধনসম্পদের অধিকারী। আল্লাহ তাঁকে বিশেষ জ্ঞান দান করেছিলেন। তিনি প্রাণীর ভাষা বুঝতেন।
একদিন তিনি সৈন্যবাহিনী নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। যেতে যেতে পিঁপড়াদের বসতি অতিক্রম করছিলেন। হঠাৎ থেমে গেলেন। শুনলেন, এক পিঁপড়া অন্য পিঁপড়াদের ঘরে প্রবেশের তাড়া দিচ্ছেন। সুলায়মান ও তাঁর বাহিনীর পায়ে পিষ্ট হওয়া থেকে বাঁচার সতর্কবার্তা দিচ্ছে। পিঁপড়ার কথা শুনে সুলায়মান হাসলেন। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন।
সুরা নামলের ১৮ ও ১৯ নম্বর আয়াতে এই ঘটনা বিবৃত হয়েছে এভাবে, ‘যখন সোলায়মান ও তাঁর বাহিনী পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক নারী পিঁপড়া বলল, হে পিঁপড়ারা, গর্তে প্রবেশ করো। এমন যেন না হয়, সোলায়মান এবং তার সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে, তোমরা তা টেরও পাবে না। সোলায়মান (আ.) পিঁপড়ার কথায় মৃদু হাসলেন।’
আরও পড়ুনজুমার খুতবা শুনে গাছের গুঁড়ি কেঁদেছিল, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪সোলায়মান (আ.) ও হুদহুদ পাখির গল্প
সোলায়মান (আ.)-এর রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হতো হুদহুদ পাখি। হুদহুদ পাখি বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করত। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে কী হচ্ছে, কী চিন্তাভাবনা চলছে, কোথায় কী ঘটছে, কোন রাজা কোথায় সৈন্য পাঠাচ্ছে, কেন পাঠাচ্ছে ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তিনি এই পাখি ব্যবহার করতেন। এ ছাড়া সুলায়মান (আ.) মরুভূমি বা জনমানবহীন প্রান্তরে বের হলে পানি অন্বেষণ করার কাজও সে করত।
নবী একবার পাখিটিকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তিনি পাখিটির ওপর বেশ রেগে গেলেন।
কোরআনে ঘটনার বর্ণনা এসেছে এভাবে, ‘একদিন সোলায়মান (আ.) পাখিদের খোঁজখবর নিলেন, এরপর বললেন, কী হলো, হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত? আমি অবশ্যই তাকে কঠোর শাস্তি দেব কিংবা হত্যা করব, যদি না সে অনুপস্থিত থাকার যথাযথ কারণ দেখায়। কিছুক্ষণ পর হুদহুদ এসে বলল, আপনি অবগত নন এমন একটি বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। আমি সাবা থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করেছি। আমি এক নারীকে সাবাবাসীর ওপর রাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেওয়া হয়েছে এবং তার একটা বিরাট সিংহাসন আছে। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলি সুশোভিত করে দিয়েছে…।’ (সুরা নামল, আয়াত: ২০-২৪)
আরও পড়ুনদোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ, কখন পড়তে হয়০২ জানুয়ারি ২০২৪সোলায়মান (আ.) আর রানি বিলকিসের কি বিয়ে হয়েছিল
সোলায়মান (আ.) হুদহুদের সংবাদ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইলেন। রানি বিলকিস ও তার লোকদের সূর্যপূজা ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদত করতে বললেন। তিনি হুদহুদ পাখির কাছে একটি চিঠি লিখে পাঠিয়ে দেন।
সব ভেবেচিন্তে তিনি রানি বিলকিস নবীর দরবারে এলেন। রাজপ্রাসাদের স্বচ্ছ কাচের সড়কে ভ্রমে পড়ে গেলেন এবং গোড়ালির কাপড় টেনে ওপরে তুলে ফেললেন। স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ দেখে রানি যারপরনাই বিস্মিত হলেন। এদিকে আবার নিজের সিংহাসন সোলায়মানের কাছে দেখে বিস্ময়ে তাজ্জব বনে গেলেন। পরে তিনি সোলায়মান (আ.)-এর ধর্মে দীক্ষিত হন।
সোলায়মানের সঙ্গে রানির বিয়ে হয়েছিল কি না, এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। ইবনে আসাকির ইকরিমা সূত্রে বলেন, ইমান গ্রহণের পর রানি বিলকিসের সঙ্গে সুলায়মান (আ.)-এর বিয়ে হয়েছিল। তবে কেউ কেউ এ মতের বিরোধিতা করেছেন। সুরা নামলের ২৮ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াতে এ ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।
রায়হান রাশেদ: লেখক ও আলেম
আরও পড়ুনএক সাহাবিকে নিয়ে ১৬ আয়াত নাজিল হয়২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অব শ ব স অবত র ণ ক রআন র আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক
একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।
যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষকচৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।
যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।
তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।
দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী