মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহর সৃষ্টিতে ছিল ফেরেশতা ও জিন। ইবলিস আগুনের তৈরি। থাকত ফেরেশতাদের সঙ্গে। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করত। ফলে ইবলিস জিন নাকি ফেরেশতা—এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি যখন ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা করো; তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে অমান্য করল ও অহংকার করল । তাই সে অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হলো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩৪)
ইবলিসকে কেন সিজদা করতে বলা হলো
ইবলিসকে কেন ফেরেশতাদের সঙ্গে সিজদা করতে আদেশ করা হলো, সে কি ফেরেশতা? আল্লাহতায়ালা আদমকে সৃষ্টির আগেই ফেরেশতাদের আদেশ দিয়ে রেখেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং আমি যখন আদমের সৃষ্টি সম্পন্ন করব এবং তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সামনে সিজদায় পড়ে যেও’ (সুরা সাদ, আয়াত: ৭২)।
তখন ইবলিস সেই মজলিশেই উপস্থিত ছিল। তাই ইবলিস ফেরেশতা না হলেও সে ওই আদেশের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আরও পড়ুনসুরা আরাফে আছে ইবলিসের কাহিনি ১৮ জুলাই ২০২৪ইবলিস জিন হওয়ার প্রমাণ
ইমাম রাজি (রহ.
এক. ইবলিসের সৃষ্টি আগুন থেকে। কোরআনে এসেছে, ইবলিস বলেছে, ‘তুমি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছ আর তাকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছ কাদা মাটি দিয়ে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১২)
দুই. ইবলিসের ছেলেমেয়ে আছে, সে বংশবিস্তার করে। ফেরেশতারা এর থেকে মুক্ত। তাদের স্ত্রী-সন্তান নেই। তাদের মধ্যে নেই নারী-পুরুষের বিভাজনও। অথচ আল্লাহ ইবলিস সম্পর্কে বলেছেন, ‘তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে ওকে ও ওর বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছ?’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ৫০)
তিন. ফেরেশতারা আল্লাহর সব আদেশ মেনে চলে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাদের (ফেরেশতাদের) যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং যা আদেশ করা হয় তা-ই করে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৬)
আল্লাহ কোরআনে অধিকাংশ স্থানে ইবলিসকে ‘শয়তান’ বলে সম্বোধন করেছেন। শয়তান শব্দটি দিয়ে কট্টরভাবে অবাধ্য হওয়াকে বোঝায়। (আত-তাফসিরুল কাবির, ফখরুদ্দিন রাজি, ২/৪২৯-৩০)
তা ছাড়া ‘আল্লাহতায়ালা জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াহীন আগুন থেকে’ (সুরা রহমান, আয়াত: ১৫), আর ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে নুর বা আলো থেকে (মুসলিম, হাদিস: ২৯৯৬)।
আরও পড়ুনইবলিসের কাহিনি১২ মে ২০২৪ইবলিস কোন শ্রেণির জিন
ইবনে আবদিল বার (রহ.) বলেছেন, জিনদের বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে, ১. সাধারণ জিনদের বলা হয় জিন্নি। ২. যেসব জিন মানুষের সঙ্গে বাসাবাড়িতে অবস্থান করে, তাদের বলা হয় আমির। ৩. যেসব জিন বাচ্চাদের সামনে আবির্ভূত হয়, তারা আরওয়াহ। এটি রুহ শব্দের বহু বচন। ৪. যেসব জিন খারাপ হয়ে যায় এবং মানুষের ক্ষতি করতে চায়, তারা শয়তান। ৫. যেসব শয়তানের দুষ্কৃতি খুব বেড়ে যায়, তাদের বলে মারিদ। ৬. যারা শক্তিশালী ও দুশ্চরিত্র হয়ে ওঠে, তাদের বলা হয় ইফরিত। (আত-তামহিদ, ইবনে আবদিল বার, ১১/১১৭-১১৮)
আরও পড়ুনএকদল জিন পবিত্র কোরআন শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন২০ নভেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ র শত দ র ত দ র বল আল ল হ শয়ত ন
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?