চার্চিলের নাতি ব্রিটিশ সরকারকে বলেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে
Published: 19th, March 2025 GMT
উইনস্টন চার্চিলের নাতি লর্ড নিকোলাস সোয়েমস ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটেনের রাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গ নিয়ে চলমান বিতর্কে তাঁর এই আহ্বানকে গুরুত্বপূর্ণ হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সাবেক কনজারভেটিভ এমপি লর্ড নিকোলাস সোয়েমস ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত শুক্রবার দেশটির আইনসভার উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ব্রিটিশ স্বীকৃতি সমর্থন করে তোলা একটি বিলের পক্ষে বক্তব্য দেন তিনি।
এ সময় লর্ড নিকোলাস বলেন, ইসরায়েল অবৈধভাবে যে ভূখণ্ড দখল করেছে, সেখানে ১৯৬৭ সালের সীমান্তরেখা অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এটা করলে ব্রিটিশ সরকার আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি তাদের ন্যায্য প্রতিশ্রুতি, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে পারবে।
৭৭ বছর বয়সী নিকোলাসের নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টি ইসরায়েলের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু তিনি দলের বিপরীতে গিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।
একতরফাভাবে নয়, বরং ‘সঠিক সময়ে’ একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করে ব্রিটেনের লেবার পার্টির সরকার।
লর্ড নিকোলাসের কথার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। কেবল রাজনীতিতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণেই নয়, বরং পারিবারিক ইতিহাসের কারণেও তিনি ব্রিটিশ রাজনীতিতে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তাঁর দাদা উইনস্টন চার্চিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বিরুদ্ধে দেশকে বিজয় এনে দিয়েছিলেন। চার্চিল সম্ভবত ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্য ব্রিটেন প্যালেস্টাইন প্রকল্পের সংসদীয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে লর্ড নিকোলাস ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়াকে ‘দৃঢ়ভাবে জাতীয় স্বার্থে এবং নৈতিকভাবে সঠিক’ বলে বর্ণনা করেন। দ্য ব্রিটেন প্যালেস্টাইন প্রকল্পের আগের নাম ছিল বেলফোর প্রকল্প। লর্ড নিকোলাস এই প্রকল্পের একজন পৃষ্ঠপোষক।
লর্ড নিকোলাসের মতে, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান প্রায় অসম্ভব। শান্তি আলোচনাও ঝিমিয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে তা কূটনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। এ ধরনের পদক্ষেপ সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটা সুস্পষ্ট বার্তা দেবে যে বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটেনকে তার কূটনৈতিক প্রভাব এবং ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এই রাজনীতিক বলেন, জাতিসংঘ সদস্যপদের জন্য ফিলিস্তিনের দাবিকে সমর্থন করতে যুক্তরাজ্যের ব্যর্থতা নীতিগতভাবে ভুল। সেটা ওই অঞ্চলে ব্রিটেনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও প্রভাবকে ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি ওই অঞ্চলে ব্রিটেনের ঐতিহাসিক ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে ব্রিটেনের ওপর বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে।
লর্ড নিকোলাস যুক্তরাজ্যকে ‘ইসরায়েলের জন্মের সময় ধাত্রী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর জারি করা বেলফোর ঘোষণাপত্রে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদি জনগণের জন্য একটি দেশ প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ওই দেশে যাঁরা ইহুদি নন, তাঁদের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার রক্ষার কথাও বলা হয়েছিল ওই ঘোষণাপত্রে।
আরও পড়ুনফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি যেসব প্রশ্নে আটকে আছে২৪ মে ২০২৪ঔপনিবেশিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯২১ সালে উইনস্টন চার্চিলের বিরুদ্ধে বেলফোর ঘোষণা বাস্তবায়নের অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরে যুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ইসরায়েল সৃষ্টির পক্ষে ছিলেন। ১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসার পর তিনি দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলপন্থী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছিলেন।
চার্চিলের নাতি লর্ড নিকোলাস গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, বেলফোর ঘোষণায় বর্ণিত ফিলিস্তিনের অ-ইহুদি সম্প্রদায়ের অধিকার স্পষ্টতই সমুন্নত রাখা হয়নি। এটি একটি ঐতিহাসিক অবিচার, যার ভার ব্রিটেনের ওপর এসে পড়বে। তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যকে দ্বিমুখী নয়; বরং সমান অবস্থান বজায় রাখতে হবে। আমরা ফিলিস্তিনিদের একই অধিকার অস্বীকার করে ইউক্রেনের জনগণের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা রক্ষা করতে পারি না।’
আরও পড়ুনফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে রিয়াদে আরব বিশ্বের নেতারা১১ নভেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র ট শ সরক র প রকল প ইসর য় ল র জন ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।