রমজানের শেষ দশক যেভাবে কাটাতেন নবীজি (সা.)
Published: 21st, March 2025 GMT
যদিও শেষ দশক বলা হয়, তবে পাঠকের এটা অবিদিত নয় যে, এই দশক মানে পূর্ণ দশদিন দশ রাত নয় চান্দ্রমাসের হিসেবে মাস উনত্রিশ দিনে হলে নয় দিনও হতে পারে। বিশ রমজান দিবাগত রাত থেকে শেষ দশকের সূচনা হয়। একে অনেকেই ‘নাজাতের রাত’ বলে অভিহিত করে থাকেন। একটি দুর্বল সনদের হাদিসে রয়েছে রমজানের প্রথম দশদিন রহমত, দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাত এবং তৃতীয় দশদিন নাজাতের উপহার প্রদান করা হয়ে থাকে। শেষ দশকে নবীজির (সা.
ইবাদতে বেশি শ্রম দেওয়া
রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফের ‘অবকাশ’ যাপন করতেন নবীজি (সা.)। তিনি রাতের ইবাদতে অত্যধিক শ্রম দিতেন, যা অন্য সময় দেখা যেত না। রমজান মাসের শেষ দশকে নবীজি (সা.) এত বেশি ইবাদত করেছেন যা অন্য সময়ে করেননি। ( মুসলিম, হাদিস: ১১৭৫)
আরেকটি হাদিসে আছে, রমজানে লোকেরা মসজিদে নামাজ আদায় করত...(দীর্ঘ হাদিসের একাংশে আছে, তিনি সকলকে সম্বোধন করে এরশাদ করেন, ‘লোক সকল, আল-হামদুলিল্লাহ, আজ রাত আমি গাফিলতি যাপন করি নি। এবং তোমাদের অবস্থানও আমার অবিদিত নয়।’ (আবু দাউদ: ১,৩৭৪)
আরও পড়ুনযেমন ছিল মহানবীর (সা.) ইফতার১০ মার্চ ২০২৫পূর্ণ রাত্রি জাগরণ
রমজানের শেষ দশক আসলে নবীজি (সা.) পরনের কাপড় শক্ত করে বেঁধে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। পরিবারের সকলকে তিনি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস: ২০২৪)
‘লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন’ কথাটির অর্থ হলো তিনি এ দিনগুলোতে স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন। মুসলিমের অভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে, রমজানের শেষ দশদিনে নবীজি (সা.) কোমর বেঁধে ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতেন। নিজে জাগতেন এবং পরিবারের লোকজনকেও জাগিয়ে তুলতেন। (বুখারি, হাদিস: ২,০২৪, মুসলিম, হাদিস: ১,১৭৪)
আবু যর (রা.) কাছ থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে রাত্রিজাগরণের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়:
‘আমরা রাসুলের সঙ্গে রমজানে সিয়াম পালন করেছি, সাত দিবস অবশিষ্ট থাকা অবধি তিনি আমাদের নিয়ে রাত্রি জাগরণ করলেন না। (সপ্তম রাত্রিতে) তিনি আমাদের নিয়ে রাতের এক-তৃতীয়াংশ অবধি রাত জাগরণ করলেন। ষষ্ঠ রাত্রিতে তিনি আমাদের নিয়ে রাত যাপন করলেন না। পঞ্চম রাত্রিতে তিনি অর্ধ রাত্রি অবধি নামাজে কাটালেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, পুরো রাতই যদি আপনি আমাদের নিয়ে নফল আদায় করতেন! আবু যর বলেন, রাসুল বললেন, ইমাম প্রস্থান করা অবধি যে ব্যক্তি তার নামাজ আদায় করে, তার জন্য পুরো রাত যাপনের সওয়াব লিখে দেওয়া হয়। অতঃপর চতুর্থ রাত্রিতে তিনি আমাদের নিয়ে যাপন করলেন না। তৃতীয় রাত্রিতে তিনি তার পরিবার-পরিজন, স্ত্রীগণ ও লোকদের সবাইকে একত্র করলেন এবং আমাদের নিয়ে এতটা সময় রাত্রি জাগরণ করলেন যে সাহরির সময় অতিক্রান্তের ভয় হল। (আবু দাউদ: ১৩,৭৭০)
হাদিস বিশারদেরা বলেন, ‘শেষ দশ দিনে রাত্রি জাগরণ করা’টা প্রমাণ করে, প্রথম বিশ দিন রাসুল পূর্ণ রাত্রি জাগরণ করতেন না—কিছু সময় ইবাদত করতেন, কিছু সময় ঘুমাতেন। কিন্তু শেষ দশ দিনে তিনি, বিছানায়ও যেতেন না। রাতের পুরোভাগেই ইবাদত করতেন।
আরও পড়ুন যেমন ছিল মহানবীর (সা.) সাহরি১১ মার্চ ২০২৫লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান
লাইলাতুল কদর নামের এ দশ দিনের মধ্যে রয়েছে বলে বহু হাদিসে প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং শেষ দশকে কঠোর পরিশ্রম ও রাত্রিজাগরণের অন্যতম কারণ যে ছিল ‘কদর’ অনুসন্ধান, তা তিনি বিভিন্ন সময় বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন।
ইতিকাফের আমল
এই দশদিনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, নবীজি (সা.) এ-সময় মসজিদে ইতিকাফ করতেন। প্রয়োজন ব্যতীত তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না। ইবনে ওমর রা. বলেন, নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৭২)
আরও পড়ুনসাহরির যে ৭টি বিধান মনে রাখা জরুরি১২ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র ন য় র শ ষ দশক পর ব র দশ দ ন করত ন করল ন
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।