ভোরে মাঠে নামছে মেসিহীন আর্জেন্টিনা
Published: 21st, March 2025 GMT
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোরে উরুগুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামছে আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি।
ইজনুরির কারণে এই ম্যাচে অবশ্য খেলতে পারবেন না আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসি। কোচ লিওনেল স্কালোনি এই ম্যাচে মেসির বিকল্প খেলোয়াড়ের খোঁজ করছেন।
শুধু মেসি নন, ইনজুরির কারণে গঞ্জালো মন্তিয়েল, জিওভানি লো সেলসো ও পাওলো দিবালাকেও দলে রাখা হয়নি। বুধবার নিশ্চিত করা হয় যে, লাওতারো মার্টিনেজও উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের বিপক্ষের ম্যাচগুলোতে খেলতে পারবেন না।
আরো পড়ুন:
শেষ মুহূর্তে মেসির গোল, কোয়ার্টার ফাইনালে মায়ামি
কোচের ঘাড় চেপে ধরে লঘু শাস্তি মেসির
গোলপোস্টের নিচে নির্ভরযোগ্য এমিলিয়ানো মার্টিনেজ শুরু থেকে খেলবেন। রাইট-ব্যাকে থাকবেন নাহুয়েল মোলিনা। আর লেফট-ব্যাকে দেখা যাবে নিকোলাস তাগলিয়াফিকোকে।
অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডি তার ১২৪তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামবেন। তার সঙ্গে রক্ষণভাগে থাকতে পারেন টটেনহ্যাম হটস্পারের ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, যিনি চলতি মাসের শুরুতে ইনজুরি থেকে ফিরেছেন।
মিডফিল্ডে লিভারপুলের অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার খেলবেন, যিনি ক্লাবের হয়ে ইএফএল কাপ ফাইনালের হার ভুলে যেতে চাইবেন। তার সঙ্গে থাকবেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের রদ্রিগো ডি পল ও চেলসির এনজো ফার্নান্দেজ।
মেসির অনুপস্থিতিতে স্কালোনি ডান উইংয়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে একজনকে শুরুর একাদশে রাখবেন। জুলিয়ানো সিমিওনে ও আনহেল কোরেয়া—দুজনই জায়গার জন্য লড়াই করছেন, তবে কোরেয়া কিছুটা এগিয়ে থাকতে পারেন। কারণ, তাকে মেসির অনুপস্থিতিতে ১০ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়েছে।
জুভেন্টাসের নিকোলাস গঞ্জালেস বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণে ভূমিকা রাখবেন। সেপ্টেম্বরের পর এটি হবে তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কারণ, ২০২৪ সালের শেষ চারটি বাছাইপর্বের ম্যাচ তিনি ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি।
এদিকে, চলতি মৌসুমে ৪৪টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ২৩ গোল করা ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড জুলিয়ান আলভারেজ আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দেবেন এবং উরুগুয়ের বিপক্ষে তার ক্লাব ফর্ম ধরে রাখার চেষ্টা করবেন।
আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য একাদশ:
গোলরক্ষক: মার্টিনেজ।
ডিফেন্ডার: মোলিনা, রোমেরো, ওটামেন্ডি ও তাগলিয়াফিকো।
মিডফিল্ডার: ডি পল, ম্যাক অ্যালিস্টার ও ফার্নান্দেজ।
আক্রমণভাগ: কোরেয়া, গঞ্জালেস ও আলভারেজ।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল আর জ ন ট ন আর জ ন ট ন
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।