কেরানীগঞ্জে দিনদুপুরে কুপিয়ে ও গুলি করে ব্যবসায়ীকে হত্যা
Published: 22nd, March 2025 GMT
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ‘জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে’ দিনদুপুরে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও একজন। আজ বেলা দেড়টার দিকে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের গোলামবাজার বড় মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জুবায়ের হোসেন (৩৬) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা উত্তরপাড়া মসজিদপাড় এলাকার বাসিন্দা এবং নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। এ ঘটনায় আহত বাবু খান (২৮) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা সোয়া একটার দিকে গোালামবাজার এলাকায় নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে (আবু বকর সিদ্দীক এন্টারপ্রাইজ) বসে ছিলেন জুবায়ের। এ সময় বাবুও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। হঠাৎ স্থানীয় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি সেখানে ঢুকে অতর্কিতভাবে তাঁদের ওপর হামলা চালান। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে জুবায়েরকে পেছনে থেকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তাঁরা। এ সময় একটি চায়ের দোকানে ঢুকে প্রাণে বাঁচার আকুতি জানান জুবায়ের। তখন দলটির সদস্যরা সেখান থেকে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে এনে মাথা, বুকের ডান পাশ ও পিঠের বাঁ পাশে গুলি করেন। এরপর তাঁরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন জুবায়ের ও বাবুকে উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জুবায়েরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আর গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন বাবু।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোলামবাজার বড় মসজিদ এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, জুবায়ের নির্মাণসামগ্রীর পাশপাশি জমি বেচাকেনার ব্যবসাও করতেন। আওয়ামী লীগের আমলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা তাঁতী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক ঢালী ওরফে মোল্লা ফারুক গোলামবাজার এলাকায় একটি জমি দখল করেন। ওই জমির মালিকানা নিয়ে মোল্লা ফারুকের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা সেন্টুর মিয়ার বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি ওই জমি দেখভালের জন্য জুবায়েরকে দায়িত্ব দেন সেন্টু। আজ শনিবার সকালে জুবায়েরের উপস্থিতিতে ওই জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়। এতে জুবায়েরের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মোল্লা ফারুকের নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওমর ফারুকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
ঘটনার পর ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, কী কারণে এবং কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত আরও ৩, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।