ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ আরও যেভাবে বাড়ছে
Published: 25th, March 2025 GMT
সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কের বরফ গলার সম্ভাবনাকে আরও দুর্বল করেছে। প্রথমটি হলো, বেলুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে সন্ত্রাসী হামলা ও ছিনতাই। দ্বিতীয়টি হলো, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক পডকাস্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালানোর অভিযোগ। এসব নতুন কিছু নয়। তবে এর পুনরাবৃত্তি দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী কূটনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠাকে আরও কঠিন করে দিল।
বেলুচিস্তানের সন্ত্রাসী ঘটনার পর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র এতে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ভারত দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে এবং বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সাহায্য করছে।
ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের হস্তক্ষেপের অভিযোগ করে আসছে। এর একটা প্রমাণ তো আছে—২০২৬ সালে গ্রেপ্তার হওয়া ‘র’ কর্মকর্তা কুলভূষণ যাদব। পাকিস্তানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন বালুচ গোষ্ঠীকে সহায়তার কথা স্বীকার করেছিলেন তিনি। ভারত অবশ্য এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বরং পাকিস্তানকে নিজেদের সমস্যার দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতীয় নেতৃত্ব মনে করছে যে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভালো। বিজেপি সরকার পাকিস্তানকে নিরন্তর ‘শত্রু’ হিসেবে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। তাহলে তাদের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা আরও শক্তিশালী হবে।১৬ মার্চ এক পডকাস্টে মোদি পাকিস্তান সম্পর্কে দীর্ঘ মন্তব্য করেন। তিনি দুই দেশের উত্তেজনার জন্য পাকিস্তানের ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদ’ ও মিথ্যা শান্তি প্রচেষ্টাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ভারত শান্তির চেষ্টা করলেও পাকিস্তান প্রতারণা করেছে। তিনি পাকিস্তানকে ‘সংকটের কেন্দ্র’ বলে অভিহিত করেন। এই বক্তব্য মোটেও অভিনব নয়। তবে এ ধরনের মন্তব্য দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি ধারণা তৈরি করে রেখেছে ভারত। মোদি তা আরও জোরালো করলেন। বক্তব্যে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার দায় সম্পূর্ণ পাকিস্তানের ওপর চাপানো হয়েছে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দায়িত্বও পাকিস্তানের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকে মনে করেন, পাকিস্তান দুর্বল সময় পার করছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে ভারত। বেলুচিস্তানের সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতীয় গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত প্রচার-প্রচারণাও এটাই ইঙ্গিত করে।
এ পরিস্থিতি দুই দেশের সম্পর্ককে অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে দুই দেশের আনুষ্ঠানিক আলোচনা বন্ধ। সেই সঙ্গে বর্তমান উত্তেজনার কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে, উভয় পক্ষের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি এড়াতে সরাসরি না হলেও কিছু সংলাপ কার্যকর হতে পারে।
পাকিস্তান এ ধরনের একটি ব্যবস্থা চালুর পক্ষে আগ্রহী। অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু আলোচনাও চলেছে। সেগুলোয় দুই দেশের সাবেক কর্মকর্তারা এবং বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে লন্ডনে এমন এক বৈঠকে পাকিস্তানের প্রস্তাবে ভারতীয় পক্ষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। বরং তারা বলেছে, জুলাইয়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বা সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে দুই প্রধানমন্ত্রী আলোচনার জন্য কিছু সময় রেখে দিতে পারেন। তবে তা নির্ভর করছে, তারা আদৌ দেখা করবেন কি না, সে সিদ্ধান্তের ওপর।
কাশ্মিরের গান্ডারবল জেলায় চেকপয়েন্টে প্রহরারত এক ভারতীয় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ সদস্য,.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী শহীদ মিনার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে মিছিল করছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ‘দুর্দিনের আসলাম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ‘আসলাম ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়।
বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী হন। দীর্ঘ সময় তিনি জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। অথচ এখন সুসময়ে দল তাঁকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা দলের এ সিদ্ধান্ত মানেন না। তাই প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর জায়গা থেকে মহাসড়কে উঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা অন্তত সীতাকুণ্ডের ৩০টি স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
ঘোষিত প্রার্থী কাজী মুহাম্মদ সালাউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাঁকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।
ফৌজদারহাট পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের মাথা, ফৌজদারহাট, জলিল গেইট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রয়েছে। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।