রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি কার্যকরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সর্বশেষ বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। বৈঠকটি সোমবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়। শিগগির যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে। উভয় দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা মনে করেন, আলোচনার ধারাবাহিকতায় ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আলোচনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। বৈঠকে কৃষ্ণসাগরে একটি ‘সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি’ নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা হয় বলে জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।     

বৈঠকে রুশ মধ্যস্থতাকারীদের প্রধান গ্রিগোরি কারাসিন এএফপিকে গতকাল মঙ্গলবার ওই তথ্য জানান। বৈঠকে তিনি রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তাঁর বক্তব্য, বৈঠকে গভীর ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছাতে এখনও সময় লাগবে। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাব। জাতিসংঘসহ আরও দেশ এই আলোচনায় যুক্ত হবে। হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র জানিয়েছে, শান্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপে অগ্রগতি হচ্ছে ও শিগগির একটি ‘ইতিবাচক ঘোষণা’ আশা করা হচ্ছে।

এদিকে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে সৌদিতে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল গতকালও বৈঠক করেছে। তবে যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে রাশিয়াকে বিশ্বাস করতে চাইছে না ইউক্রেন। দেশটির রাষ্ট্রপতির চিফ অব স্টাফের উপদেষ্টা সের্হি লেশচেঙ্কো দাবি করেছেন, নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার হাতে ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মস্কো নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। ফলে শান্তি আলোচনা শেষমেশ অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। এর আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মস্কো শান্তি আলোচনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করতে চায়। 

এর মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়া ১৩৯টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে ও ইস্কান্দার-এম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে বহু অবকাঠামোর ক্ষতি ও ৮৮ জন আহত হয়েছে। শতাধিক ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিও করেছে কিয়েভ। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মস্কো একদিকে নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে ফাঁপা বক্তব্য বাদ দিয়ে মস্কোকে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে সোমবার রাতে রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণাধীন লুহানস্কে গোলাবর্ষণ করে ইউক্রেন। এই হামলায় তিন রুশ সাংবাদিকসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। এই হামলার কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ সাংবাদিক হত্যার নিন্দা জানিয়েছে।  

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া। তবে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দেয় মস্কো। বিবিসি, রয়টার্স ও আলজাজিরার খবর। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল পরর ষ ট র ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ