বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে মার্কিন সাময়িকী আইপিডি
Published: 27th, March 2025 GMT
যাচাই-বাছাই ছাড়াই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রকাশ করছে মার্কিন সাময়িকী ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট (আইপিডি)। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এবং সুদের হার ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এসব চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়তে থাকা বাংলাদেশিরা প্রশ্ন তুলতে পারেন- দেশের আর্থিক খাত গভীর সংকটে, এ সময় আহসান মনসুরের মেয়ে কীভাবে এত বিলাসী জীবনে চলেন?। আহসান মনসুরই-বা কীভাবে তিনতলা কাঁচ ও স্টিলের ‘ফার্মহাউসে’ নিশ্চিন্তে থাকেন, যখন সবার পকেট কাটা পড়ছে?’ এই কথাগুলো টিম লারকিন নামে গত ৩১ জানুয়ারি আইপিডি প্রকাশ করা হয়। লেখায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সম্পদ খতিয়ে দেখলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে সেই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। তবে টিম লারকিন নামের ব্যক্তি অস্তিত্ব আছে কিনা, তা নিশ্চিত নয়।
মাসব্যাপী অনুসন্ধানে ডিসমিসল্যাব দেখতে পায়, আইপিডি ওয়েবসাইটে বাংলাদেশবিষয়ক যেসব লেখা সাম্প্রতিক সময়ে ছাপা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত ১০ লেখা এ ধরনের। যেখানে লেখকদের নামে প্রকাশিত হয়েছে যাদের কোনো সত্যিকার পরিচয় পাওয়া যায়নি। অনেক সময় তাদের প্রোফাইল ছবি নেওয়া হয়েছে শাটারস্টকের মতো স্টক ফটো সাইট থেকে। এই ভুয়া লেখকদের অন্তত দুটি লেখা যাচাই না করেই বাংলাদেশি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়েছে। এগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তার আওয়ামী লীগের দলীয় পেজগুলো থেকেও শেয়ার করা হয়েছে, যার ফলে এসব বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা আরও ছড়িয়ে পড়ে।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.
গত ২৪ মার্চ দ্য গার্ডিয়ান জানায়, যুক্তরাজ্যের সংসদের ‘অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন রেসপনসিবল ট্যাক্স অ্যান্ড করাপশন’-এর এমপিরা এক সেশনের আগে একাধিক ই-মেইল পেয়েছেন, যেগুলোতে মনসুরের মেয়ের সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এবং আইপিডির নিবন্ধের লিংক দেওয়া হয়। ই-মেইলগুলো এসেছে একটি সাংবাদিক ও একটি ব্রিটিশ পাবলিক রিলেশনস ফার্মের পক্ষ থেকে। ব্রিটিশ পত্রিকাটি সেই কথিত সাংবাদিকের কোনো খোঁজ পায়নি। অন্যদিকে পিআর ফার্মটি জানায়, তারা কোনো ক্লায়েন্টের হয়ে কাজ করেছে তা বলবে না।
ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধানে আইপিডির সম্পাদকীয় দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়া যাচাই করতে ডিসমিসল্যাব নিজেই দুটি ভুয়া নিবন্ধ আইপিডিতে জমা দেয়—একটি আন্দোলনকারীদের প্রতি জাতিসংঘের সম্ভাব্য পক্ষপাত নিয়ে, অন্যটি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নতুন দল, জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রশংসা করে। দুটি লেখাই তৈরি করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে। দুটি নিবন্ধেই আগে খারিজ হওয়া মিথ্যা তথ্য রাখা হয়েছিল। আইপিডি তার মধ্যে জাতিসংঘ সম্পর্কিত লেখাটি প্রকাশ করেছে, অন্যটি প্রকাশ করেনি।
এসব বিষয়ে ডিসমিসল্যাবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশ্ন করা হলে আইপিডির সম্পাদক জন লাইম্যান ই-মেইলে জানান, তাদের প্ল্যাটফর্ম লেখকদের সঙ্গে বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাজ করে এবং স্বীকার করেন কিছু ভুয়া লেখক হয়তো থেকে গেছে। কারণ তাদের প্রায় ৩ হাজার কনট্রিবিউটর রয়েছে।
তিনি আরও জানান, অনেক লেখক কখনো কখনো নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন, যা তিনি মেনে নেন। কিন্তু এসব লেখকদের পরিচয় যাচাই করেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল খকদ র ন বন ধ সরক র আহস ন মনস র আইপ ড
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।