সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হুতিদের ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি হুতিদের দিক থেকে ছোড়া প্রতিটি গুলির জন্য ইরানকে দায়ী করবেন এবং এর জন্য ‘ভয়াবহ’ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

এদিকে ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে তাদের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় মারাত্মক হামলা করেছে। এ হামলায় ৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা বেড়েই চলছে। এ সংঘাত পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে গ্রাস করবে।

দ্বিতীয় মেয়াদের শাসনভার নেওয়ার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার করে ইরানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা এবং একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছেন।

১২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে ট্রাম্পের একটি চিঠি পৌঁছে দেন।

ইসরায়েলি সূত্র দাবি করেছে, চিঠিটা ছিল কঠোর। নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তির জন্য দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন। সেটা না হলে কঠোর পরিণতির জন্য সতর্ক করেছেন।

ইয়েমেনে মার্কিন হামলা এবং ইরানকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি কতটা, তা নিয়ে তেহরানকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়। যাহোক, ইরানের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।

খামেনি কি সরাসরি আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করবেন, নাকি কিছু শর্তের ভিত্তিতে সেটা গ্রহণ করবেন?

তেহরান কী জবাব দেবে, সেটা শুধু পারমাণবিক চুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যৎ সুসম্পর্ক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়বে।

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ট্রাম্পের চিঠির ইতিবাচক ও গঠনমূলক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। টেলিভিশন উপস্থাপক টাকার কার্লসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ট্রাম্প খোলামনে ইরানের জন্য ‘সবকিছু পরিষ্কার’ করার একটা সুযোগ চান এবং তাদের সঙ্গে আস্থা স্থাপন করতে চান। চিঠিতে ট্রাম্প বারবার করে বলেছেন, ‘আমি শান্তির প্রেসিডেন্ট। এটাই আমরা চাই। সামরিকভাবে এটা করার কোনো কারণ নেই। আমাদের আলোচনা করা উচিত।’

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে প্রায় দুই দশক কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। এ সময়ে বিশেষ করে পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজের অভিজ্ঞাতা আমার রয়েছে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ বছর ধরে গবেষণার অভিজ্ঞতাও আমার আছে। এসব অভিজ্ঞতা থেকে আমি একটি সফল কূটনীতির জন্য নির্ধারক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করেছি।

ট্রাম্প ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যকার ৪০ বছরের অচলাবস্থা ভেঙে দিতে পারেন। নিচের নীতিগুলো অনুসরণ করা হলে বৈরিতার অবসান ঘটানো সম্ভব হবে।

পারস্পরিক শ্রদ্ধা এখানে অপরিহার্য। ইরানিদের সভ্যতার বয়স সাত হাজার বছর। সভ্যতা নিয়ে তারা গর্বিত জাতি। হুমকি, অপমান, জবরদস্তির মাধ্যমে তাদের আলোচনার টেবিলে বসানো যাবে না। খামেনির ব্যক্তিত্ব ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

তেহরান কথার চেয়ে কাজের ওপর গুরুত্ব দেয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রচারণার সময় এবং তারপরে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক বিষয়ে এবং মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের বিরোধিতা করে ইতিবাচক ও গঠনমূলক বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি সর্বোচ্চ চাপ দেওয়ার নীতি এবং বৈরিতা বাড়ানোর নীতি আবার চালু করেন। কথা নয়, ওয়াশিংটন বাস্তবে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তার ওপর ইরানের সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে।
আলাপ-আলোচনার সুযোগ গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরান যে পারমাণবিক বোমা উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করতে না পারে, সেটাই তাঁর একমাত্র উদ্বেগ।

যাহোক, ৪ ফেব্রুয়ারির স্মারকে তিনি পারমাণবিক ইস্যু ছাপিয়ে আঞ্চলিক বিষয়, প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, মানবাধিকার ও সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয়গুলোও যুক্ত করেছেন।
যেকোনো সমন্বিত আলোচনা অবশ্যই ধাপে ধাপে করার জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে।

একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ চুক্তি দরকার। যদি ওয়াশিংটন এমন একটি চুক্তি চায়, যা মোটামুটিভাবে উভয় দেশের স্বার্থ পূরণ করে, তবে সেটি তেহরানের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

অবশেষে চুক্তির স্থায়িত্বটা গুরুত্বপূর্ণ। ১২ বছরের আলোচনার পর ইরান ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর রেজল্যুশন দ্বারা সমর্থিত হলেও ২০১৮ সালে ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট এসে যে নতুন চুক্তি থেকে বের হয়ে যাবে না, সেই নিশ্চয়তা নিয়ে ইরানের বড় ধরনের উদ্বেগ থাকবে।

সৈয়দ হোসেন মুসাভিয়ান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তা ও পারমাণবিক নীতি বিশেষজ্ঞ এবং ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সাবেক প্রধান।
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন

চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৩ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। লেনদেনে শেষে ডিএসইতে এ দিন ৩০০টি বা ৭৫.৩৮ শতাংশের বেশি শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরপতন হয়েছে।

এ দিন আগের কার্যদিবসের চেয়ে ডিএসইতে লেনদেন কমলেও সিএসইতে কিছুটা বেড়েছে। তবে উভয় পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম কমেছে।

আরো পড়ুন:

৭ কোটি টাকা সংগ্রহে লিও আইসিটি ক্যাবলসের কিউআইও’র আবেদন

বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আইসিএসবির প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অনেক দিন ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান দেখা গেলেও লেনদেন শেষে তা পতনে রূপ নেয়। সোমবার সকাল থেকেই ডিএসইএক্স সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় লেনদেনের শুরু হয়। লেনদেনের শেষ হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। তবে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন অনেক কমে গেছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৪.৮৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬১ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২.৩৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২১.৯৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে মোট ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪৫টি কোম্পানির, কমেছে ৩০০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৩টির।

ডিএসইতে মোট ৫১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৪৯.৫৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮৭.৯৭ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ২২৫ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ২.১৬ পয়েন্ট কমে ৮৯৬ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৪.২৫ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৬৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে মোট ১৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪২টি কোম্পানির, কমেছে ১২৬টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৫টির।

সিএসইতে ২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
 

ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ