রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক বেলা
Published: 30th, March 2025 GMT
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া এলাকার গৃহবধূ স্বরভানু বেগম (৫৫)। পা পিছলে পড়ে গিয়ে বাঁ হাতে ব্যথা পেয়েছেন। তিনি চিকিৎসা নিতে মেয়ে ও জামাতার সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। জরুরি বিভাগে তাঁকে এক্স–রে করতে বলা হয়েছিল। টেকনোলজিস্ট না থাকায় হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি ১০ বছর ধরে বন্ধ। ১৫০ টাকা সরকারি খরচের এক্স-রে তাঁকে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ৩৫০ টাকায় করতে হয়েছে। পরে হাসপাতালে এসে তিনি ভাঙা হাতের ব্যান্ডেজ করেন।
রাজাপুরে বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক হাটের দিন থাকায় অন্যান্য দিনের তুলনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ অনেক বেশি ছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা রোগের ধরন অনুযায়ী রোগীদের বিভিন্ন কক্ষে চিকিৎসকদের কাছে পাঠাচ্ছেন।
জরুরি বিভাগ সামলাচ্ছেন নাজনিন সুলতানা নামের একজন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা। তিনি রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসক–সংকটের কারণে কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের ২৭টি পদের মধ্যে ১৭টি পদই শূন্য। সিনিয়র কনসালট্যান্ট আছেন মাত্র দুজন। গাইনি বিভাগের একজনমাত্র জুনিয়র কনসালট্যান্ট অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
ভবনের প্রধান ফটকের সামনেই এক নারী কর্মী হাসপাতালের ফার্মেসিতে বসেছেন। চিকিৎসকেরা রোগীদের যে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন, তার কিছু অংশ তিনি বিতরণ করছেন। আর যে ধরনের ওষুধ হাসপতালের তালিকায় নেই, তা বাইরে থেকে কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
সকাল থেকে ভবনের দ্বিতীয় তলায় চিকিৎসককে দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন অন্তত ২৫ জন অন্তঃসত্ত্বা। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সেখানে কথা হয় উপজেলার চর হাইলাকাঠি গ্রামের শান্তা আক্তারের (১৯) সঙ্গে। তিনি সকাল নয়টা থেকে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী যদি আড়াই ঘণ্টা ধরে একজন চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন, তাহলে তাঁর শরীরের কী অবস্থা দাঁড়ায়!
সকাল থেকে বহির্বিভাগে চার শতাধিক রোগী অবস্থান করছিলেন। তিনজন চিকিৎসক উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স কর মকর ত চ ক ৎসক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আরো পড়ুন:
নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা
১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের আগে একটা মানবাধিকার কমিশন ছিল, কিন্তু সেটি কার্যত দন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। নিয়োগ পদ্ধতিতে ত্রুটি, এখতিয়ারে ঘাটতি এবং নেতৃত্বের দুর্বলতায় প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এবার সেটিকে সত্যিকারের এখতিয়ারসম্পন্ন, ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”
তিনি জানান, নতুন অধ্যাদেশে মানবাধিকার কমিশনের কাঠামো, এখতিয়ার ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কমিশন একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নিশ্চিত করতে আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করা হবে এবং প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বাছাই কমিটি সুপারিশ করবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নিয়োগ পদ্ধতিটা এমনভাবে করেছি যাতে অভিজ্ঞ, যোগ্য ও মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় মানুষরা কমিশনে জায়গা পান।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি এবং প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত মানবাধিকারগুলোকেও এই কমিশনের এখতিয়ারে আনা হয়েছে। এর ফলে কমিশন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।”
অধ্যাদেশে কমিশনের এখতিয়ার বহুলাংশে বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে শৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাতেও কমিশন তদন্ত করতে পারবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “আগের কমিশনের এখতিয়ারে গুরুতর সীমাবদ্ধতা ছিল, বিশেষ করে শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে। এবার সেই সীমাবদ্ধতা দূর করা হয়েছে।”
এছাড়া, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা আইনসহ মানবাধিকার সংরক্ষণমূলক যেকোনো আইনের বাস্তবায়নের দায়িত্ব মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আলাদা করে ‘গুম কমিশন’ গঠনের প্রয়োজন হবে না বলে তিনি জানান।
অধ্যাদেশে কমিশনের আদেশ প্রতিপালনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “এখন থেকে কমিশনের সুপারিশ বা নির্দেশ উপেক্ষা করা যাবে না। এর বাধ্যবাধকতা আইনি কাঠামোয় যুক্ত করা হয়েছে।”
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসের।
ঢাকা/এসবি