তাপসের দখল করা জমি ফেরত পাচ্ছে না জেলা পরিষদ
Published: 2nd, April 2025 GMT
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র থাকা অবস্থায় ২০২৩ সালের মে মাসে ঢাকা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন কাঁটাবনের ২০ শতাংশ জায়গা দখল করেন তৎকালীন মেয়র ফজলে নূর তাপস। পরে শুরু করেন একটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই স্থাপনা সরিয়ে নিতে তিন দফায় চিঠি দিলেও সাড়া দিচ্ছে না ডিএসসিসি।
জেলা পরিষদের নথিতে দেখা যাচ্ছে, ওই জায়গায় ভবনের বেজমেন্টসহ অন্যান্য স্থাপনা সরিয়ে নিতে পরিষদ ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রথম চিঠি দেয় এ বছরের জানুয়ারির ২৯ তারিখে। ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখে দেওয়া হয় আরেকটি চিঠি। তৃতীয়বারের মতো চিঠি দেওয়া হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি। চিঠিতে সাড়া না পেয়ে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পাচ্ছে না সংস্থাটি।
মে মাসের ৮ তারিখ (২০২৩ সাল) হঠাৎ সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে আমাদের লোকজন তাড়িয়ে দিয়ে জায়গাটি দখল করে নেন। আমি থানায় যাই মামলা করতে। পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা করি। স্থানীয় মন্ত্রণালয়কে লিখেছিলাম এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।মেহেদি হাসান, ঢাকা জেলা পরিষদের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা২০২৩ সালের মে মাসে জায়গাটি যখন দখল করার ঘটনা ঘটে, তখন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন মেহেদি হাসান। তিনি এখন মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাঁটাবনের জায়গাটিতে আমরা একটি কনভেনশন সেন্টার করার জন্য মন্ত্রণালয়ের সব অনুমোদন শেষ করে টেন্ডারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে মে মাসের ৮ তারিখ হঠাৎ সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে আমাদের লোকজন তাড়িয়ে দিয়ে জায়গাটি দখল করে নেন।’
মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমি থানায় যাই মামলা করতে। পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা করি। স্থানীয় মন্ত্রণালয়কে লিখেছিলাম এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
ডিএসসিসির মেয়র থাকাকালে ২০২৩ সালের মে মাসে ঢাকা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন কাঁটাবনের ২০ শতাংশ জায়গা দখল করেন ফজলে নূর তাপস.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৩ স ল কর মকর ত র ল কজন ব যবস থ ড এসস স
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।