দেশে সবার জন্য কিস্তিতে মুঠোফোন কেনার সুবিধা নেই
Published: 2nd, April 2025 GMT
একটি বাসার নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন মো. জিয়া। তিন বছর আগে একটি স্মার্টফোন কিনেছিলেন তিনি, সেটি এখন আর ঠিকভাবে কাজ করে না। কলেজপড়ুয়া ছেলেও পড়াশোনার কাজের জন্য মুঠোফোন কিনতে চাচ্ছে। কিন্তু তাঁর পক্ষে একসঙ্গে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করে মুঠোফোন কেনার সামর্থ্য নেই।
জিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ১০ হাজার টাকার মুঠোফোন যদি কিস্তিতে কেনার সুবিধা থাকত, তাহলে তিনি কিনতেন কি না। জিয়া বলেন, তাহলে এখনই সে সুবিধা তিনি নিতেন। কিন্তু জিয়ার মতো মানুষের আগ্রহ থাকলেও তাঁর জন্য এই কিস্তি সুবিধা নেই।
জাপানের মতো উন্নত বিশ্বের দেশেও জনসাধারণের কিস্তিতে মুঠোফোন কেনার সুবিধা আছে। সে দেশে মোবাইল অপারেটররা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সিম লক রেখে কিস্তিতে ফোন বিক্রি করে। এমনকি ভারতেও এ সুবিধা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ সুবিধা চালু করার দাবি দীর্ঘদিনের। একবার এই সুবিধা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েও তা কার্যকর হয়নি। শুধু ক্রেডিট কার্ডধারীরা কিস্তি সুবিধায় নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় মুঠোফোন কিনতে পারেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্মার্টফোন ব্যবহারে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। ব্যবহার বাড়াতে সবার জন্য কিস্তিতে মুঠোফোন কেনার সুবিধা চালু করা প্রয়োজন।
প্রায় দুই বছর আগে সিম লক রেখে গ্রাহকের কাছে মুঠোফোন বিক্রি করতে পারবে, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিটিআরসি। সেখানে শর্ত ছিল, মুঠোফোনের মধ্যে দুটি সিমের একটি লক রেখে বিক্রি করতে পারবে অপারেটররা। স্থানীয়ভাবে মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে স্মার্টফোন কিনতে হবে। কিস্তির ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট হবে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। কিস্তি হবে ৩ থেকে ১২ মাস মেয়াদি। স্মার্টফোনের দাম পরিশোধের পর লক করা সিমের স্লটটি খুলে দিতে হবে। কিন্তু পরবর্তী সময় এ সুবিধা কার্যকর করা যায়নি।
অপারেটর সূত্রে জানা গেছে, একটি সিম উন্মুক্ত রেখে মুঠোফোন বিক্রি করলে অপারেটরের জন্য তা সুবিধাজনক নয়। কারণ, একটি সিম উন্মুক্ত থাকলে গ্রাহক তখন পছন্দের অপারেটরই ব্যবহার করবেন। অপারেটরদের চাওয়া হলো, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দুটি সিম লক রেখেই মুঠোফোন বিক্রির সুবিধা চালু করা হোক। আবার সিম লক রেখে মুঠোফোন বিক্রির ক্ষেত্রে ছোট অপারেটররা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে বলেও তাদের আপত্তি আছে।
আরও পড়ুনদেশের ৭০% পরিবার এখন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী০৬ জানুয়ারি ২০২৫মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহার কম হওয়ার অন্যতম কারণ হলো গ্রাহকদের আর্থিক সক্ষমতার অভাব। এ ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক অপারেটররা হ্যান্ডসেটসহ ‘বান্ডেল অফার’ দিতে পারে, এতে স্বল্প আয়ের গ্রাহকের জন্য স্মার্টফোন কিনতে সহায়ক হবে। তবে গ্রাহককে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অফার প্রদানকারী অপারেটরের পরিষেবা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
প্রতিবেশী ও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে স্মার্টফোনের গ্রাহক কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, সহজলভ্য নয়। একদিকে যেমন কিস্তিতে কেনা সবার জন্য সুবিধাজনক নয়, তেমনি মুঠোফোনের দামও বেশি।
মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ) গত বছরের অক্টোবরে ‘দ্য স্টেট অব মোবাইল ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে শহরের ৪১ শতাংশ এবং গ্রামের ২৬ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। যেখানে ভারতের শহরে ৫২ শতাংশ ও গ্রামের ৪০ শতাংশ এবং পাকিস্তানের শহরে ৪৬ শতাংশ ও গ্রামের ৩৬ শতাংশ মানুষের স্মার্টফোনের মালিকানা আছে।
আরও পড়ুনমুঠোফোন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ, কিন্তু জনপ্রিয় হয়নি কেন৩১ মার্চ ২০২৫প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে মুঠোফোনের দাম দ্বিগুণ। শুল্ক-করের কারণে দাম বেড়ে যায়। আমদানি করা একটি স্মার্টফোনের ওপর প্রায় ৫৯ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়। আবার দেশে উৎপাদিত ফোনের ওপরও সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশের বেশি শুল্ক ও কর দিতে হয়। এসব কারণে দেশে অবৈধ মুঠোফোনের বাজার বড় হয়ে গেছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.
কিস্তিতে মুঠোফোন কেনা প্রসঙ্গে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বিটিআরসি একসময় একটি সিম লক রেখে মুঠোফোন বিক্রির সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু এতে গ্রাহক আরেকটি সিমে অন্য অপারেটরের সিম ব্যবহার করায় যারা ফোন দিচ্ছে তাদের লাভ হয় না। অপারেটরদের অনেকেই দুটি সিমই লক করার আবেদন করেছিল। কিন্তু এতে ছোট অপারেটররা ক্ষতির মুখে পড়ে বলে জানায়। বিটিআরসি তাদের সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে স্টাডি করতে বলেছে। দুটি সিম লক করে দিলে কী ধরনের প্রভাব পড়ে অথবা সিম লক না করে পুরো সেট লক করে দেওয়ার পদ্ধতি কাজে আসে কি না, তা নিয়ে বিটিআরসি কাজ করবে। তবে বিটিআরসি এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ন ক নত ব ট আরস গ র হক ক জ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।