ভারতের মদদেই হাসিনা স্বৈরাচার হয়েছেন: এ্যানি
Published: 5th, April 2025 GMT
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, “হাসিনা একদিনে স্বৈরাচার হননি। ভারতের মদদেই হাসিনা দিনে দিনে স্বৈরাচার হয়ে উঠেছিলেন। হাসিনার গুম, খুনের পেছনেও ভারতের মদদ ছিল।”
তিনি বলেন, “গত ১৫-১৬ বছর এদেশে গুম, খুন হয়েছে। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনেও শত-শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সবই ভারতের মদদেই হয়েছে। ভারত নিজেদের স্বার্থেই বারবার নৌকাকে ক্ষমতায় রেখে ছিল। নির্বাচনে আগে তাদের সচিব-কর্মকর্তারা এসে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সব কলাকৌশল করে যেতেন।”
শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের উত্তর মজুপুর সনাতনী দেবালয়ের আয়োজনে মাদাম স্নানঘাটে অষ্টমী স্নান ও হরিনাম যজ্ঞ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারকে তারেক রহমানের পক্ষে সহায়তা
ইউনূস-মোদির বৈঠক আশার আলো দেখাচ্ছে: মির্জা ফখরুল
এ্যানি বলেন, “ভারতের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে সেসব কথা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যা। বাংলাদেশের হিন্দুরা ৫ আগস্টের পরে আগের চেয়ে বহুগুণে ভালো আছেন। আসলে ভারত নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশের হিন্দুদের ব্যবহার করতে চাচ্ছে। যা বাংলাদেশের হিন্দুরা কখনো কামনা করে না।”
তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগ হিন্দুদের নিজেদের সম্পত্তি মনে করতো। হিন্দুরা আওয়ামী লীগের সময়ই বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের বাড়ি, দোকানপাট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই দখল করেছে। তারেক রহমান ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন, সেখানে সব ধর্মের কথা বলা আছে। বাংলাদেশের হিন্দু-খ্রিস্টান ও মুসলমানসহ সবাই মিলে মিশে থাকবেন, কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র সৃষ্টি করেছেন। সব ধর্মের মানুষকে নিয়েই তিনি রাজনীতি করেছেন।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের লক্ষ্মীপুর শাখার সভাপতি শংকর মজুমদা, ডা.
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ আওয় ম ল গ
এছাড়াও পড়ুন:
উপন্যাসের জন্ম ও প্রধান চরিত্র দন কিহোতের মধ্যস্থতা
বাইবেলের পরে সবচেয়ে অনূদিত ও পঠিত বই মিগেল দে সেরভানতেস সাভেদরার ‘দন কিহোতে দে লা মানচা’ কিংবা ‘দন কিহোতে’। রচনাটির আঙ্গিকের চেয়ে বিষয়বস্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বোদ্ধারা। কেননা বিষয়গত কারণেই সোয়া চার শ বছর ধরে তা সারা দুনিয়ার সাহিত্যরসিকের মন জয় করে আসছে। বিশেষ করে আখ্যানের প্রধান চরিত্র খ্যাপাটে দন কিহোতের উদ্ভট, হাস্যকর, অত্যাশ্চর্য ও রোমাঞ্চকর খেয়ালি কর্মকাণ্ডগুলো। সেরভানতেস তাঁর আখ্যানে ‘যুক্তিহীনের যুক্তি’ দিয়ে এমন এক জগৎ উন্মোচন করেন, যা শুধু বিস্ময়কর নয়, আধুনিক ও চিরকালীনও। উদ্ভবের পর থেকে যে জীবন মানুষ যাপন করে আসছে সেই অসহায়ত্ব, প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা, নিয়তির দুর্লঙ্ঘনীয় রহস্য, সম্পর্কের জটিলতা, বৈপরীত্য আর সীমাহীন নির্বোধতা প্রভৃতি নানা মাত্রিকতায় এতে হাজির হয়েছে। তাই সচেতন পাঠকমাত্রই দন কিহোতের দুনিয়ায় নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন, তিনি যে দেশের যে কালের হোন না কেন। এমন সৃষ্টি সেরভানতেসের পক্ষে সম্ভব হয় এই কারণে যে তাঁর কালটা ছিল একদিকে স্পেনের সমৃদ্ধি ও বুদ্ধিবৃত্তির স্বর্ণযুগ এবং অন্যদিকে কলহ, যুদ্ধ, আত্মম্ভরী ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের যুগও। জীবনাভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও নিজ জীবনের ট্র্যাজেডি থেকেও সারভানতেস জীবনকে এমন নির্মোহভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন—জীবন ও জগৎকে ঠাট্টা-রসিকতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, কাহিনি শেষে দন কিহোতের গভীর জীবনোপলব্ধি—একটা গভীর সত্যে পৌঁছানো। স্পেনের অপর বিখ্যাত লেখকেরা, যেমন নাট্যকার লোকে দে ভেগা, কবি ফ্রাই লুইস দে লেওন, কেভোদা প্রমুখ এমন সময় ও অভিজ্ঞতা ফুঁড়েই বেরিয়ে এসেছিলেন। এঁরা সবাই সম্মিলিতভাবে রেনেসাঁর আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবমনের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। পুরোনো যুগের ভাঙন এবং নতুন যুগের আবির্ভাবে স্পেন তখন সত্যি দিশাহারা ছিল।
বাইবেলের পরে সবচেয়ে অনূদিত ও পঠিত বই মিগেল দে সেরভানতেস সাভেদরার ‘দন কিহোতে দে লা মানচা’ কিংবা ‘দন কিহোতে’। রচনাটির আঙ্গিকের চেয়ে বিষয়বস্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বোদ্ধারা। কেননা বিষয়গত কারণেই সোয়া চার শ বছর ধরে তা সারা দুনিয়ার সাহিত্যরসিকের মন জয় করে আসছে।আখ্যানে দেখা যায়, মধ্যযুগের ইউরোপীয় নাইটদের নিয়ে লেখা শিভালরিক রোমান্স পড়ে নিজের ভেতর এক কাল্পনিক জগৎ সৃষ্টি করেছিলেন লা মানচার গ্রামের জনৈক আলোনসো কিহানো। ফলে গরিব এই ভদ্রলোক নিজে নাইট হয়ে ওঠেন একদিন দন কিহোতে নাম নিয়ে। তাই কিহানোর হাড় জিরজিরে ঘোড়াটা হয়ে গেল ডাকসাইটে রোসিনান্তে, বাড়ির পুরোনো পোশাক পেল নাইটদের পরিচ্ছদের মর্যাদা। এটা-সেটা দিয়ে বর্ম, হাত-পায়ের সুরক্ষার কভার, এমনকি শিরস্ত্রাণও জোগাড় হয়ে গেল তাঁর। হয়তো বাড়ির কেউ আগে সৈনিক বা ডাকাত ছিল, তাই সহজে মিলে গেল এত সব। দন কিহোতে একদিকে যেমন ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার’ গোছের, অন্যদিকে জীবনে গুটিকয় মানুষ ছিল তাঁর নামমাত্র পরিজন। যেমন উনিশ বছর বয়সী এক ভাতিজি/ভাগনি, চল্লিশোর্ধ্ব এক গৃহপরিচারিকা, মাঠে কাজ করার এক লোক আর দুই বন্ধু: একজন গ্রামের অধস্তন পাদরি, অপরজন এক নাপিত। দন কিহোতের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, আপাত যৌনতায় অনভিজ্ঞ, নিজের ধারণায় নাইটদের শুদ্ধ প্রতিনিধি তিনি। যদিও কাছাকাছি থাকেন এমন এক গাট্টাগোট্টা চাষি মেয়ে আলদোনসা লোরেনসোর দিকে তাঁর বিশেষ নজর আছে। এই নারীকেই দন কিহোতে দুলসিনিয়া দেল তোবোসো নামক জনৈক অভিজাত ও মহীয়সী হিসেবে ভাবতে থাকেন। যিনি আবার তাঁর সুখস্বপ্নের আদর্শ নায়িকা। দন কিহোতে সব ধরনের পাগলামির ঊর্ধ্বে উঠে একসময় পরিচালিত করেন উদ্ভট সব নাইটসুলভ অভিযান।
স্পেনের জাতীয় গ্রন্থাগারের বাইরে সেরভানতেসের ভাস্কর্য