মুক্তেশ্বরীর বয়ে চলায় বাধা অনুমোদনহীন সেতুটি
Published: 6th, April 2025 GMT
যশোর শহরের পুলেরহাট এলাকায় মুক্তেশ্বরী নদীর দুই তীর কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করে একটি লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর নিচের অংশে থাকা কংক্রিট আর লোহার অবকাঠামোয় আটকে গেছে নদীর পানির প্রবাহ। এতে একদিকে পানি থাকলেও অন্য পাশ শুকিয়ে মাটি বেরিয়ে গেছে। এখন সেই মাটিও কেটে নেওয়া হচ্ছে।
অনুমোদনহীন এ সেতু নির্মাণ করেছে বেসরকারি আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে এই লোহার সেতুর মাধ্যমে নদীর গলা চেপে মৃত্যুঘণ্টা বাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
অস্থায়ীভাবে লোহার বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যখন স্থায়ীভাবে সেতুটি নির্মাণ করা হবে, তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হবেআদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক ফজলুল হক২০২০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোর কার্যালয় থেকে মুক্তেশ্বরী নদী দখলের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় ১৬টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির ছয়টি কাঁচা ও একটি পাকা বাড়ি, আদ্–দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দখলে কাঁচা-পাকা মিলিয়ে সাতটি এবং অপর দুই ব্যক্তির আরও দুটি অবৈধ স্থাপনার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমি আদ্–দ্বীনের দখলে রয়েছে।
ওই তালিকায় বলা হয়েছে, ৯৭ ফুট প্রস্থ ও ২৪২ ফুট দৈর্ঘ্যের নদীর অংশে আদ্–দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাততলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই অংশে মসজিদ, লোহার সেতু ও কয়েকটি কাঁচা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনায় ৬১ শতক নদীর জমি তাদের দখলে রয়েছে বলে দেখানো আছে।
সেতুটি কবে নির্মাণ করা হয়েছে, সেই তথ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি। তবে বছর তিনেক আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান। তাঁরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে লোহার সেতুটি নির্মাণের ফলে নদীর পানির স্বাভাবিক স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে নদীর ওই অংশ শুকিয়ে যাচ্ছে।
দুই তীরে যাতায়াতের জন্য মুক্তেশ্বরীর বুকে কংক্রিট জমিয়ে লোহার একটি সেতু বসানো হয়েছে। ওই সেতুর পাটাতন সমতল ভূমি থেকে কয়েক ফুট নিচু। সেতুর তলা আটকে নদীর ভাটি অংশ শুকিয়ে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নদীর বুকের মাটি কেটে মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরে ফেলে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে।মুক্তেশ্বরী নদীর অংশ দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্থায়ীভাবে লোহার বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যখন স্থায়ীভাবে সেতুটি নির্মাণ করা হবে, তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হবে।’ নদীর মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের অংশে যাতে সব সময় পানি থাকে, এ জন্য নদীর বুক থেকে মাটি কেটে নদীর স্বাভাবিক গতিধারা ঠিক রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়।’
গত ৯ মার্চ সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর আধা কিলোমিটার অংশ দখল করে বেসরকারি এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর এক তীরে ৫০০ শয্যার সাততলা হাসপাতাল ভবন, মসজিদ ও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা; অপর তীরে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, মিলনায়তনসহ অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে। দুই তীরে যাতায়াতের জন্য মুক্তেশ্বরীর বুকে কংক্রিট জমিয়ে লোহার একটি সেতু বসানো হয়েছে। ওই সেতুর পাটাতন সমতল ভূমি থেকে কয়েক ফুট নিচু। সেতুর তলা আটকে নদীর ভাটি অংশ শুকিয়ে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নদীর বুকের মাটি কেটে মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরে ফেলে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই নদীর জায়গা দখল করে লোহার সেতু নির্মাণ করেছে আদ্–দ্বীন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া অংশটুকু তারা ময়লা পরিষ্কার করবে, এমন একটি আবেদন করেছিলেন। তবে সেটি অনুমতি দেওয়া হয়নি। নদীর মাটি কাটার খবর পেয়ে লোক পাঠিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, মুক্তেশ্বরী নদী দখলের তালিকায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালও রয়েছে। দ্রুতই দখল উচ্ছেদের নোটিশ পাঠানো হবে।
ভৈরব নদের শাখা নদী মুক্তেশ্বরী চৌগাছা দিয়ে যশোর শহরে প্রবেশ করেছে। এই নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের বর্ষার পানি নিষ্কাশিত হয়। নদীটি ভবদহ বিলে গিয়ে মিশেছে।
যশোর নদী রক্ষা কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, যখন নদী দখল করে হাসপাতাল নির্মাণ শুরু হয়; তখন থেকে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। অথচ যাদের সম্পদ, তারা এটি রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রশাসন নদী রক্ষায় কোনো উদ্যোগ না নিলে নতুন কর্মসূচি নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ ন র ম ণ কর ম ক ত শ বর
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ