যশোর শহরের পুলেরহাট এলাকায় মুক্তেশ্বরী নদীর দুই তীর কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করে একটি লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর নিচের অংশে থাকা কংক্রিট আর লোহার অবকাঠামোয় আটকে গেছে নদীর পানির প্রবাহ। এতে একদিকে পানি থাকলেও অন্য পাশ শুকিয়ে মাটি বেরিয়ে গেছে। এখন সেই মাটিও কেটে নেওয়া হচ্ছে।

অনুমোদনহীন এ সেতু নির্মাণ করেছে বেসরকারি আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে এই লোহার সেতুর মাধ্যমে নদীর গলা চেপে মৃত্যুঘণ্টা বাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

অস্থায়ীভাবে লোহার বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যখন স্থায়ীভাবে সেতুটি নির্মাণ করা হবে, তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হবেআদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক ফজলুল হক

২০২০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোর কার্যালয় থেকে মুক্তেশ্বরী নদী দখলের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় ১৬টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির ছয়টি কাঁচা ও একটি পাকা বাড়ি, আদ্–দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দখলে কাঁচা-পাকা মিলিয়ে সাতটি এবং অপর দুই ব্যক্তির আরও দুটি অবৈধ স্থাপনার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমি আদ্–দ্বীনের দখলে রয়েছে।

ওই তালিকায় বলা হয়েছে, ৯৭ ফুট প্রস্থ ও ২৪২ ফুট দৈর্ঘ্যের নদীর অংশে আদ্–দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাততলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই অংশে মসজিদ, লোহার সেতু ও কয়েকটি কাঁচা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনায় ৬১ শতক নদীর জমি তাদের দখলে রয়েছে বলে দেখানো আছে।

সেতুটি কবে নির্মাণ করা হয়েছে, সেই তথ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি। তবে বছর তিনেক আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান। তাঁরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে লোহার সেতুটি নির্মাণের ফলে নদীর পানির স্বাভাবিক স্রোত বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে নদীর ওই অংশ শুকিয়ে যাচ্ছে।

দুই তীরে যাতায়াতের জন্য মুক্তেশ্বরীর বুকে কংক্রিট জমিয়ে লোহার একটি সেতু বসানো হয়েছে। ওই সেতুর পাটাতন সমতল ভূমি থেকে কয়েক ফুট নিচু। সেতুর তলা আটকে নদীর ভাটি অংশ শুকিয়ে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নদীর বুকের মাটি কেটে মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরে ফেলে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে।

মুক্তেশ্বরী নদীর অংশ দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্থায়ীভাবে লোহার বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যখন স্থায়ীভাবে সেতুটি নির্মাণ করা হবে, তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হবে।’ নদীর মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের অংশে যাতে সব সময় পানি থাকে, এ জন্য নদীর বুক থেকে মাটি কেটে নদীর স্বাভাবিক গতিধারা ঠিক রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়।’

গত ৯ মার্চ সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর আধা কিলোমিটার অংশ দখল করে বেসরকারি এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর এক তীরে ৫০০ শয্যার সাততলা হাসপাতাল ভবন, মসজিদ ও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা; অপর তীরে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, মিলনায়তনসহ অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে। দুই তীরে যাতায়াতের জন্য মুক্তেশ্বরীর বুকে কংক্রিট জমিয়ে লোহার একটি সেতু বসানো হয়েছে। ওই সেতুর পাটাতন সমতল ভূমি থেকে কয়েক ফুট নিচু। সেতুর তলা আটকে নদীর ভাটি অংশ শুকিয়ে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নদীর বুকের মাটি কেটে মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরে ফেলে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই নদীর জায়গা দখল করে লোহার সেতু নির্মাণ করেছে আদ্–দ্বীন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া অংশটুকু তারা ময়লা পরিষ্কার করবে, এমন একটি আবেদন করেছিলেন। তবে সেটি অনুমতি দেওয়া হয়নি। নদীর মাটি কাটার খবর পেয়ে লোক পাঠিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, মুক্তেশ্বরী নদী দখলের তালিকায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালও রয়েছে। দ্রুতই দখল উচ্ছেদের নোটিশ পাঠানো হবে।

ভৈরব নদের শাখা নদী মুক্তেশ্বরী চৌগাছা দিয়ে যশোর শহরে প্রবেশ করেছে। এই নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের বর্ষার পানি নিষ্কাশিত হয়। নদীটি ভবদহ বিলে গিয়ে মিশেছে।

যশোর নদী রক্ষা কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, যখন নদী দখল করে হাসপাতাল নির্মাণ শুরু হয়; তখন থেকে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। অথচ যাদের সম্পদ, তারা এটি রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রশাসন নদী রক্ষায় কোনো উদ্যোগ না নিলে নতুন কর্মসূচি নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ ন র ম ণ কর ম ক ত শ বর

এছাড়াও পড়ুন:

সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক

একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।

যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষক

চৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।

যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়

ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।

তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।

দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী

সম্পর্কিত নিবন্ধ