পোশাক রপ্তানিতে প্রথম সারিতে, বিদেশি জামার প্রতি কেন ঝোঁক
Published: 6th, April 2025 GMT
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্থান যেখানে দ্বিতীয়, সেখানে দেশের বড় উৎসবগুলোতে দেশি পোশাকের চাহিদা কি পেরেছে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে? প্রতিবছরই শোনা যায় ক্রেতাদের পছন্দের জামার হরেক নাম; কিন্তু সবই বিদেশি। হয় ভারত নতুবা পাকিস্তানি। এই সাংস্কৃতিক প্রভাব থেকে আমরা কবে মুক্ত হব?
এক/দুই দিন পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদকে ঘিরে দেশের ছোট-বড় সব শপিংমলে লক্ষ করা যায় উপচে পড়া ভিড়। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শপিংমলে নজর কাড়ে পাকিস্তানি, আফগানিসহ ইন্ডিয়ান বাহারি ডিজাইনের নানা পোশাক। ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষেও রয়েছে এগুলো। দেশি পোশাকের নাম শুনলে যেন কিছুটা মলিন ভাব ফুটে ওঠে তাঁদের চোখেমুখে। দেশের সংস্কৃতি এমন এক স্থানে গিয়ে ঠেকেছে, যেন পাকিস্তানি ড্রেস ছাড়া মেয়েদের আর আফগানি পাঞ্জাবি ছাড়া ছেলেদের ঈদই জমে না।
শপিংমলগুলোতে প্রবেশ করলেই ভারতীয় তানা-বানা শাড়ি, পাকিস্তানি থ্রি-পিস, সারারা-গারারা, লাক্সারি শিফনসহ অন্যান্য পোশাকের চাহিদায় যেন ভুলেই গিয়েছি আমাদের ঢাকাইয়া মসলিন, নারায়ণগঞ্জ–সোনারগাঁয়ের জামদানি, রাজশাহীর সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁত, কুমিল্লার খাদি, মিরপুরের বেনারসি, সিলেট–মৌলভীবাজারের মণিপুরি, সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি–গামছা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম–রাঙামাটির তাঁতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পোশাকের ঐতিহ্য।
অথচ আমাদের দেশি এসব বস্ত্র হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বহন করে আসছে। আদিকাল থেকে দেশি তাঁতিদের পরম মমতায়, নিখুঁত হাতে বোনা নানা রং, বর্ণ ও ডিজাইনের এসব পোশাক দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও খ্যাতি অর্জন করছিল। বিদেশি শাসকদেরও এসব তৈরি পোশাকের ওপর ছিল বিশেষ নজর। আমাদের এই জামদানি, মসলিন নিয়ে নানা ধরনের মিথেরও প্রচলন রয়েছে।
অথচ দিন দিন বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে এক অসম প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই গৌরবোজ্জ্বল তাঁতশিল্প। তাঁতিরা ধীরে ধীরে সরে আসছেন তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পেশা থেকে। তাই আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁতশিল্প ও শিল্পী, দুটোকেই বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
সংস্কৃতির প্রবহমানতা খারাপ নয়। তবে বিদেশি সংস্কৃতির ভিড়ে নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধরে রাখার দায়বদ্ধতা জাতি হিসেবে আমাদের ওপরই বর্তায়। যদিও বর্তমানে জামদানির আভিজাত্য কিছুটা ফিরে এসেছে, তবে সেটাকে উৎসবগুলোতেও বিদেশি সংস্কৃতির পাশাপাশি সমুন্নত করে রাখা প্রয়োজন।
সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং সবার দেশি বস্ত্রের প্রতি ভালোবাসা ও নিজস্ব ঐতিহ্যকে ধারণ করার মধ্য দিয়েই আমাদের এ হারানো ঐতিহ্যকে দেশ এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। দেশের গৌরবোজ্জ্বল এই বস্ত্র ও তাঁতশিল্পকে যুগ যুগ ধরে সমুন্নত রাখা আমাদের দায়িত্ব।
প্রবহমান সমুদ্রের মতো বয়ে চলা পোশাক–সংস্কৃতির উৎকর্ষে ঢেউ তুলুক বাংলার বস্ত্রশিল্প।
ফারহা খানম
শিক্ষার্থী
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি