তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সারা বিশ্বে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্থান যেখানে দ্বিতীয়, সেখানে দেশের বড় উৎসবগুলোতে দেশি পোশাকের চাহিদা কি পেরেছে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে? প্রতিবছরই শোনা যায় ক্রেতাদের পছন্দের জামার হরেক নাম; কিন্তু সবই বিদেশি। হয় ভারত নতুবা পাকিস্তানি। এই সাংস্কৃতিক প্রভাব থেকে আমরা কবে মুক্ত হব?

এক/দুই দিন পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদকে ঘিরে দেশের ছোট-বড় সব শপিংমলে লক্ষ করা যায় উপচে পড়া ভিড়। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শপিংমলে নজর কাড়ে পাকিস্তানি, আফগানিসহ ইন্ডিয়ান বাহারি ডিজাইনের নানা পোশাক। ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষেও রয়েছে এগুলো। দেশি পোশাকের নাম শুনলে যেন কিছুটা মলিন ভাব ফুটে ওঠে তাঁদের চোখেমুখে। দেশের সংস্কৃতি এমন এক স্থানে গিয়ে ঠেকেছে, যেন পাকিস্তানি ড্রেস ছাড়া মেয়েদের আর আফগানি পাঞ্জাবি ছাড়া ছেলেদের ঈদই জমে না।

শপিংমলগুলোতে প্রবেশ করলেই ভারতীয় তানা-বানা শাড়ি, পাকিস্তানি থ্রি-পিস, সারারা-গারারা, লাক্সারি শিফনসহ অন্যান্য পোশাকের চাহিদায় যেন ভুলেই গিয়েছি আমাদের ঢাকাইয়া মসলিন, নারায়ণগঞ্জ–সোনারগাঁয়ের জামদানি, রাজশাহীর সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁত, কুমিল্লার খাদি, মিরপুরের বেনারসি, সিলেট–মৌলভীবাজারের মণিপুরি, সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি–গামছা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম–রাঙামাটির তাঁতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পোশাকের ঐতিহ্য।

অথচ আমাদের দেশি এসব বস্ত্র হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বহন করে আসছে। আদিকাল থেকে দেশি তাঁতিদের পরম মমতায়, নিখুঁত হাতে বোনা নানা রং, বর্ণ ও ডিজাইনের এসব পোশাক দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও খ্যাতি অর্জন করছিল। বিদেশি শাসকদেরও এসব তৈরি পোশাকের ওপর ছিল বিশেষ নজর। আমাদের এই জামদানি, মসলিন নিয়ে নানা ধরনের মিথেরও প্রচলন রয়েছে।

অথচ দিন দিন বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে এক অসম প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই গৌরবোজ্জ্বল তাঁতশিল্প। তাঁতিরা ধীরে ধীরে সরে আসছেন তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পেশা থেকে। তাই আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁতশিল্প ও শিল্পী, দুটোকেই বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।

সংস্কৃতির প্রবহমানতা খারাপ নয়। তবে বিদেশি সংস্কৃতির ভিড়ে নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধরে রাখার দায়বদ্ধতা জাতি হিসেবে আমাদের ওপরই বর্তায়। যদিও বর্তমানে জামদানির আভিজাত্য কিছুটা ফিরে এসেছে, তবে সেটাকে উৎসবগুলোতেও বিদেশি সংস্কৃতির পাশাপাশি সমুন্নত করে রাখা প্রয়োজন।

সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং সবার দেশি বস্ত্রের প্রতি ভালোবাসা ও নিজস্ব ঐতিহ্যকে ধারণ করার মধ্য দিয়েই আমাদের এ হারানো ঐতিহ্যকে দেশ এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। দেশের গৌরবোজ্জ্বল এই বস্ত্র ও তাঁতশিল্পকে যুগ যুগ ধরে সমুন্নত রাখা আমাদের দায়িত্ব।

প্রবহমান সমুদ্রের মতো বয়ে চলা পোশাক–সংস্কৃতির উৎকর্ষে ঢেউ তুলুক বাংলার বস্ত্রশিল্প।

ফারহা খানম

শিক্ষার্থী

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ