ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা ও উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত মুসলিম ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল পাসের প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক নেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিজেপির ওই নেতা সংগঠনটির সংখ্যালঘু মোর্চার মণিপুর সভাপতি।

সোমবার জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় শাসক জোটের সদস্যরা তুমুল বিক্ষোভ দেখান এ নিয়ে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) পক্ষ থেকে আইনের বিরোধিতা করে এক প্রস্তাব গ্রহণ করার কথা জানানো হলে স্পিকার আবদুল রহিম রাথের বলেন, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে এখন মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব নয়। স্পিকারের এই রুলিংয়ের পর সভায় স্লোগান শুরু হয়। বিরোধী নেতা বিজেপির সুনীল শর্মা বলেন, পার্লামেন্ট বিল পাস করেছে। রাষ্ট্রপতি বিলে সই করার পর তা আইন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। এই অবস্থায় বিধানসভার কোনো এখতিয়ারই নেই ওই আইন নিয়ে আলোচনা করার, প্রস্তাব গ্রহণের।

ভারতে যখন কোনো ব্যক্তি মুসলিম আইনের আওতায় ধর্মীয় বা দাতব্য কারণে তার সম্পত্তি দান করেন, তখন সেটাকেই বলে ওয়াক্ফ সম্পত্তি। এর মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, আশ্রয়কেন্দ্র বা শুধু জমি– সব কিছুই থাকতে পারে। যে কাজের জন্য সেটি দান করা হয়েছে, সেটি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ওয়াক্ফ সম্পত্তি ব্যবহার করা যায় না এবং এটি কাউকে বিক্রি বা হাতবদলও করা যায় না। ভারতের পার্লামেন্ট গত সপ্তাহে উত্তপ্ত তর্কবিতর্কের পর যে মুসলিম ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিলটি পাস করায়, দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা শত শত কোটি ডলার মূল্যের যাবতীয় ওয়াক্ফ সম্পত্তি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হবে, তার পুরো পদ্ধতিটাই এখন বদলে যেতে চলেছে। তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।

সোমবার এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানায়, রোববার সন্ধ্যায় বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার মণিপুর সভাপতি আসকার আলীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। বিতর্কিত ওয়াক্ফ সংশোধনী আইনকে সমর্থন করার অভিযোগে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার এই ঘটনা ঘটে। রোববার রাজ্যের বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। থৌবাল জেলার লিলং এলাকায় ১০২ নম্বর জাতীয় সড়কে আয়োজিত এক সমাবেশে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত থাকলেও পরে আধাসামরিক বাহিনী এবং অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর পাহারায় আলিয়া মাদ্রাসা এলাকা দিয়ে লিলং হাওরেবিতে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। লিলং হচ্ছে সমগ্র রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার এলাকা। 

গতকাল স্থানীয় সময় সকাল থেকেই বিভিন্ন মুসলিম এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে এই ধরনের পদক্ষেপকে মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের মনোবল ভেঙে ফেলা এবং যে কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ ও সমাবেশ করা থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। 
কিছু এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছোটখাটো সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। থৌবালের ইরোং চেসাবাতে সোমবার নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মূলত নিরাপত্তা বাহিনী মুসলিমদের একটি সমাবেশকে জোরপূর্বক বন্ধ করে দিতে চাইলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

পিটিআইর খবরে বলা হয়েছে, ভারতে ওয়াক্ফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক মামলা রুজু হলেও সুপ্রিম কোর্ট জরুরি ভিত্তিতে তা শুনতে অস্বীকার করেন। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার এজলাসে মামলার দ্রুত শুনানির অনুরোধ জানান আইনজীবী কপিল সিবাল।

জামায়াত-ই-উলেমা হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানির রুজু করা মামলার আইনজীবী কপিল সিবাল প্রধান বিচারপতিকে বলেন, এই আইনের বিরোধিতা করে বহু মামলা দায়ের হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান বিচারপতি যেন দ্রুত তা লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেন ও সওয়াল শোনেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই থানায় ডেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স মব র আইন র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ