ক্যানসারে ভুগে গত বছরের ২৭ অক্টোবর বড় বোনের স্বামী মারা যান। ভাই নেই। দুই বোন আর মা–বাবার সংসার। সংসারের হাল ধরতে রিয়া মজুমদার (২৪) জানুয়ারি মাসে গোল্ডস্যান্ডস নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পাশাপাশি চলছিল স্নাতকোত্তরের লেখাপড়া। মা–বাবার মুখে হাসি ফোটাতে চাওয়া রিয়া ঝরে গেলেন অকালেই।

লালখান বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে রিয়া মারা যান। খুলশীর অফিস থেকে বের হওয়ার আগে মা মমতা মজুমদারকে ফোন করেছিলেন তিনি। জানতে চেয়েছিলেন মায়ের দাঁতের ব্যথা কমেছে কি না। মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে জামালখানের বাসায় ফেরার কথা ছিল তাঁর। তবে সড়কেই থেমে যায় রিয়ার জীবন।

আজ বুধবার সকালে নগরের বলুয়ার দীঘি মহাশ্মশানে রিয়ার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মা মমতা ও বাবা সুনীল মজুমদার কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। তাঁরা বারবার বলছিলেন, ‘আমাদের একটু সুখে রাখার জন্য মেয়ে চাকরি নিয়েছিল। কিন্তু সেই সুখ আর রইল না।’

রিয়ার জ্যাঠা ও বাবা-কাকারা একসঙ্গে চট্টগ্রামের জামালখান এলাকায় থাকেন। জ্যাঠা সুশীল কুমার মজুমদার বলেন, ‘মেয়েটি পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে চেয়েছিল। ছাত্রী হিসেবেও খুব ভালো ছিল। তাঁর মা–বাবা এখন কাঁদতে কাঁদতে শয্যাশায়ী।’ তিনি আরও বলেন, ‘অফিস থেকে বের হওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে রিয়ার কথা হয়। দাঁতব্যথার ওষুধ নিয়ে আসার কথা ছিল মায়ের জন্য। কিন্তু লালখান বাজারে বাসের চাপায় সে মারা যায়।’

খুলশী থেকে ৭ নম্বর রুটের একটি বাসে রিয়া ইস্পাহানি মোড়ে নামেন। তখন পেছন থেকে অপর একটি বাস তাঁকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। রিয়ার গলায় ঝুলছিল অফিসের পরিচয়পত্র। সেটিও রক্তে মাখামাখি ছিল। অফিসের মাধ্যমে রিয়ার মৃত্যুর সংবাদটি জানেন স্বজনেরা।

রিয়ার জ্যাঠা সুশীল মজুমদার বলেন, ‘তাঁর মাথার ওপর দিয়ে বাস চলে যায়। খুবই মর্মান্তিক মৃত্যু। তাঁর বড় বোন জয়ার বরও কয়েক মাস আগে ক্যানসারে মারা গেছে। এখন মেয়েটিও চলে গেল। এত শোক কীভাবে আমরা সইব।’

দুর্ঘটনার পর পুলিশ বাসটি জব্দ করেছে, তবে চালক পালিয়ে গেছেন। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া সৎকার করা হয়েছে। চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।

রিয়া মজুমদারের কর্মস্থল গোল্ডস্যান্ডস রিয়েল এস্টেটের এজিএম একারামুল আজিম চৌধুরী বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলশীর অফিস থেকে বের হন রিয়া। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। জানুয়ারিতে তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। সুশীল কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েটির বিয়ের চিন্তাভাবনাও করছিলাম আমরা। কিন্তু সে সময়ও দিল না। শেষ হয়ে গেল সব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র একট

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ