মানিকগঞ্জে বিউটি গোস্বামী (৩৯) নামের এক নারী তার স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে গ্রেপ্তার অলোক রঞ্জন গোস্বামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রী বিউটি গোস্বামীকে নিজেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে এসির কার্টনে ভরে ভাড়া করা প্রাইভেট কারে ঢাকার উত্তরা থেকে মানিকগঞ্জের মিতরা-বরুন্ডি আঞ্চলিক সড়কে এগারোশ্রী এলাকায় ফেলে দেন তিনি।’ 

ঘটনার চারদিন পর ফরিদপুর থেকে মানিকগঞ্জ ডিবি পুলিশের একটি টিম স্ত্রী হত্যার অভিযোগে অলোক গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

জানা যায়, গত শুক্রবার মিতরা-বরুন্ডি আঞ্চলিক সড়কে এগারোশ্রী এলাকা থেকে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) কার্টন থেকে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের ছবি দেখে পরিবারের লোকজন নিশ্চিত করেন, উদ্ধার হওয়া মরদেহটি বিউটি গোস্বামীর। দুই সন্তানের জননী বিউটি গোস্বামী লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার নিহারঞ্জন গোস্বামীর মেয়ে। স্বামী অলোক রঞ্জনের সঙ্গে ঢাকার উত্তরায় বসবাস করতেন তিনি। অলোক রঞ্জন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরা গ্রামের মৃত প্রদীপ কুমার গোস্বামীর ছেলে। বিউটির লাশ উদ্ধারের পর দিন নিহতের বাবা নিহারঞ্জন গোস্বামী বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

মামলা হওয়ার পর ডিবিপুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে। ৭ এপ্রিল রাতে ফরিদপুর থেকে বিউটির স্বামী অলোক রঞ্জন গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অলোক রঞ্জন জানিয়েছেন, স্ত্রী বিউটির সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। অলোকের দাবি, বেশির ভাগ সময় ফেসবুক, অনলাইন বিজনেস ও লাইভ ভিডিও করে সময় কাটাতেন তার স্ত্রী বিউটি। এ কারণে দুই সন্তানকেও সময় দিতে পারতেন না। কিছু বললেই মা-বাবা তুলে গালাগালি করতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে বিউটি গোস্বামী রান্না করতে গেলে পেছন থেকে মুখ ও গলা চেপে ধরেন অলোক। পরে ছেড়ে দিলে মেঝেতে পড়ে মাথায় আঘাত পান ও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তার। পরে এসির কার্টনে ভরে রশি দিয়ে তা বাধা হয়। গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তির সহায়তায় একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করা হয়। প্রাইভেট কারটির পেছনের সিটে কার্টনটি বসিয়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে মানিকগঞ্জের মিতরা এলাকায় আসেন তারা। সহযোগীর মাধ্যমে কৌশলে প্রাইভেট কারচালককে সামনে ডেকে নেওয়া হয়। এর পর মানিকগঞ্জের মিতরা-বরুন্ডি আঞ্চলিক সড়কের এগারোশ্রী এলাকায় স্ত্রীর মরদেহটি ফেলে দেন অলোক। শেষে ওই  প্রাইভেট কারেই পালিয়ে যান তিনি ও সহযোগী।  

গ্রেপ্তার অলোক রঞ্জন গোস্বামীকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠায় হয়। পরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ স ত র ক হত য ম ন কগঞ জ র

এছাড়াও পড়ুন:

সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক

একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।

যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষক

চৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।

যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়

ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।

তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।

দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী

সম্পর্কিত নিবন্ধ