Samakal:
2025-09-17@21:23:40 GMT

গোদের উপর বিষফোড়া

Published: 10th, April 2025 GMT

গোদের উপর বিষফোড়া

এক যুগেরও অধিক সময় পূর্বে হালদা নদীর ফটিকছড়িতে ‘রাবার ড্যাম’ স্থাপনের ক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কথা হইলেও উহাই এখন কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হইয়াছে। কেবল তাহাই নহে, বুধবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উক্ত স্থাপনার কারণে খোদ নদীটিই শুষ্ক হইয়া মৃতবৎ।

শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় মিঠাপানির মৎস্যের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রজননক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে। তদুপরি পানি সংকটে দীর্ঘ এলাকাব্যাপী সেচও ব্যাহত হইতেছে। অর্থাৎ রাবার ড্যামের নেতিবাচক প্রভাব উহার উজান ও ভাটি উভয় এলাকায় ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান। 

আমরা জানি, পার্বত্য চট্টগ্রামের বদনাতলী পর্বত হইতে উৎপন্ন হইয়া হালদা নদী ফটিকছড়ির মধ্য দিয়া চট্টগ্রামে প্রবেশ করিয়াছে। এশিয়ার অন্যতম মিঠাপানির এই মৎস্য প্রজননক্ষেত্রের ফটিকছড়ি অংশ পানিশূন্য হইবার কারণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়িয়াছে। উহার দুই তীরের বাসিন্দাদের চাষাবাদ ও পানি সংকটও চরমে উঠিয়াছে। ফটিকছড়িতে হালদা নদীর পানিশূন্যতার জন্য রাবার ড্যামকে দায়ী করিয়াছেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড.

মঞ্জুরুল কিবরিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, রাবার ড্যামের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নামিয়া যাইতেছে। বাঁধটি অপসারণের সুপারিশ করা হইলেও কিছু শিল্প গ্রুপের কারণে তাহা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নাই। আমরা বিস্মিত, ৩১ মার্চ বাঁধটি খুলিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হইলেও উহা মান্য করা হয় নাই। 

হালদা নদীর এই সংকটের কারণে মাতৃমৎস্য ডিম্ব না ছাড়িবার আশঙ্কা রহিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, গত বৎসর একই কারণে রুই জাতীয় মৎস্যের প্রত্যাশিত ডিম্ব মিলে নাই। হালদার প্রজননকাল এপ্রিল, মে ও জুন মাসে নদীর এহেন দুরবস্থা অশনিসংকেত। যথায় দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হালদার সুরক্ষা জরুরি অগ্রাধিকার পাওয়া ন্যায্য ছিল, তথায় নদীটি লইয়া প্রশাসনের উদাসীনতা হতাশাব্যঞ্জক। দেশের অর্থনীতিতেও হালদা নদীর অবদান অনস্বীকার্য। এই নদী হইতে প্রতি বৎসর যেই পরিমাণ নিষিক্ত ডিম্ব সংগ্রহ করা হয়, উহা জাতীয় অর্থনীতিতে কয়েকশ কোটি টাকার অবদান রাখে।

পানি ও কৃষি সম্পদের মূল্য বিবেচনায় লইলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হালদার অবদান কয়েক সহস্র কোটি টাকা অতিক্রম করিবে। বস্তুত জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় হালদা নদীর যেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান, উহা নিছক অর্থের অঙ্কে পরিমাপ করা যাইবে না। হালদা নদীতে এখনও বিদ্যমান গাঙ্গেয় শুশুকের বিরল প্রজাতিও নদীটিতে বিবিধি সংকটের কারণে বিপন্নপ্রায়।

রাবার ড্যামের কারণে হালদা নদী যদ্রূপ সংকটে পতিত, তদ্রূপ আরও বিবিধ কারণে হালদার জীববৈচিত্র্য অস্তিত্বের ঝুঁকিতে পড়িয়াছে। মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রচালিত নৌযান, নিষিদ্ধ জাল ও খননযন্ত্র লইয়া উদ্বেগ থাকিলেও সেইগুলি বন্ধ হয় নাই। নদীটিতে দূষণের উৎসও নেহাত কম নহে। আমরা মনে করি, গুরুত্ব বিবেচনায় নদীটির সুরক্ষা অগ্রাধিকার হিসাবে লইতে হইবে। হালদাকে বিপর্যয় হইতে রক্ষা করিতে হইলে প্রশাসন, স্থানীয় নাগরিক, বেসরকারি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে হালদা কর্তৃপক্ষ গঠন এবং এই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি।

তবে সর্বাগ্রে হালদার উপর রাবার ড্যামের যেই বিষফোড়া রহিয়াছে, উহার অপসারণ অগ্রাধিকাররূপে গ্রহণ করিতে হইবে। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রশাসনকে এই ক্ষেত্রে কঠোর হইবার বিকল্প নাই। যেই রাবার ড্যাম হালদার ন্যায় নদী ধ্বংসের উৎস, যেই বাঁধ কৃষকের ক্ষতির কারণ, উহাকে আর কোনো যুক্তিতে বহাল রাখিবার অবকাশ নাই। সুতরাং হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় লইয়া ফটিকছড়ির রাবার ড্যাম এখনই অপসারণ করিবার ব্যবস্থা লওয়া হউক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবদ ন মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ