Samakal:
2025-08-01@20:15:38 GMT

গোদের উপর বিষফোড়া

Published: 10th, April 2025 GMT

গোদের উপর বিষফোড়া

এক যুগেরও অধিক সময় পূর্বে হালদা নদীর ফটিকছড়িতে ‘রাবার ড্যাম’ স্থাপনের ক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কথা হইলেও উহাই এখন কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হইয়াছে। কেবল তাহাই নহে, বুধবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উক্ত স্থাপনার কারণে খোদ নদীটিই শুষ্ক হইয়া মৃতবৎ।

শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় মিঠাপানির মৎস্যের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রজননক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে। তদুপরি পানি সংকটে দীর্ঘ এলাকাব্যাপী সেচও ব্যাহত হইতেছে। অর্থাৎ রাবার ড্যামের নেতিবাচক প্রভাব উহার উজান ও ভাটি উভয় এলাকায় ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান। 

আমরা জানি, পার্বত্য চট্টগ্রামের বদনাতলী পর্বত হইতে উৎপন্ন হইয়া হালদা নদী ফটিকছড়ির মধ্য দিয়া চট্টগ্রামে প্রবেশ করিয়াছে। এশিয়ার অন্যতম মিঠাপানির এই মৎস্য প্রজননক্ষেত্রের ফটিকছড়ি অংশ পানিশূন্য হইবার কারণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়িয়াছে। উহার দুই তীরের বাসিন্দাদের চাষাবাদ ও পানি সংকটও চরমে উঠিয়াছে। ফটিকছড়িতে হালদা নদীর পানিশূন্যতার জন্য রাবার ড্যামকে দায়ী করিয়াছেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড.

মঞ্জুরুল কিবরিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, রাবার ড্যামের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নামিয়া যাইতেছে। বাঁধটি অপসারণের সুপারিশ করা হইলেও কিছু শিল্প গ্রুপের কারণে তাহা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নাই। আমরা বিস্মিত, ৩১ মার্চ বাঁধটি খুলিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হইলেও উহা মান্য করা হয় নাই। 

হালদা নদীর এই সংকটের কারণে মাতৃমৎস্য ডিম্ব না ছাড়িবার আশঙ্কা রহিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, গত বৎসর একই কারণে রুই জাতীয় মৎস্যের প্রত্যাশিত ডিম্ব মিলে নাই। হালদার প্রজননকাল এপ্রিল, মে ও জুন মাসে নদীর এহেন দুরবস্থা অশনিসংকেত। যথায় দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হালদার সুরক্ষা জরুরি অগ্রাধিকার পাওয়া ন্যায্য ছিল, তথায় নদীটি লইয়া প্রশাসনের উদাসীনতা হতাশাব্যঞ্জক। দেশের অর্থনীতিতেও হালদা নদীর অবদান অনস্বীকার্য। এই নদী হইতে প্রতি বৎসর যেই পরিমাণ নিষিক্ত ডিম্ব সংগ্রহ করা হয়, উহা জাতীয় অর্থনীতিতে কয়েকশ কোটি টাকার অবদান রাখে।

পানি ও কৃষি সম্পদের মূল্য বিবেচনায় লইলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হালদার অবদান কয়েক সহস্র কোটি টাকা অতিক্রম করিবে। বস্তুত জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় হালদা নদীর যেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান, উহা নিছক অর্থের অঙ্কে পরিমাপ করা যাইবে না। হালদা নদীতে এখনও বিদ্যমান গাঙ্গেয় শুশুকের বিরল প্রজাতিও নদীটিতে বিবিধি সংকটের কারণে বিপন্নপ্রায়।

রাবার ড্যামের কারণে হালদা নদী যদ্রূপ সংকটে পতিত, তদ্রূপ আরও বিবিধ কারণে হালদার জীববৈচিত্র্য অস্তিত্বের ঝুঁকিতে পড়িয়াছে। মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রচালিত নৌযান, নিষিদ্ধ জাল ও খননযন্ত্র লইয়া উদ্বেগ থাকিলেও সেইগুলি বন্ধ হয় নাই। নদীটিতে দূষণের উৎসও নেহাত কম নহে। আমরা মনে করি, গুরুত্ব বিবেচনায় নদীটির সুরক্ষা অগ্রাধিকার হিসাবে লইতে হইবে। হালদাকে বিপর্যয় হইতে রক্ষা করিতে হইলে প্রশাসন, স্থানীয় নাগরিক, বেসরকারি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে হালদা কর্তৃপক্ষ গঠন এবং এই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি।

তবে সর্বাগ্রে হালদার উপর রাবার ড্যামের যেই বিষফোড়া রহিয়াছে, উহার অপসারণ অগ্রাধিকাররূপে গ্রহণ করিতে হইবে। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রশাসনকে এই ক্ষেত্রে কঠোর হইবার বিকল্প নাই। যেই রাবার ড্যাম হালদার ন্যায় নদী ধ্বংসের উৎস, যেই বাঁধ কৃষকের ক্ষতির কারণ, উহাকে আর কোনো যুক্তিতে বহাল রাখিবার অবকাশ নাই। সুতরাং হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় লইয়া ফটিকছড়ির রাবার ড্যাম এখনই অপসারণ করিবার ব্যবস্থা লওয়া হউক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবদ ন মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ