মহাসাগরের রং কি সত্যিই ভবিষ্যতে বেগুনি হয়ে যাবে
Published: 11th, April 2025 GMT
সমুদ্রের তীরে দাঁড়ালে আমরা নীল সমুদ্রে হারিয়ে যাই। পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মহাসাগর হওয়ায় মহাকাশ থেকে মহাসাগরগুলোকে হালকা নীল বিন্দুর মতো দেখা যায়। সম্প্রতি জাপানের একদল গবেষক মহাসাগরগুলোর রং ভবিষ্যতে বেগুনি হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন। মহাসাগরের রাসায়নিক পরিবর্তন ধীরে ধীরে হয়ে থাকে। পৃথিবীতে সালফারের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে বেগুনি রঙের মহাসাগর দেখা যেতে পারে। নেচার সাময়িকীতে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
গবেষকদের তথ্যমতে, পৃথিবীর বিভিন্ন মহাসাগর একসময় সবুজ রঙের ছিল। সাগরের রাসায়নিক পরিস্থিতি ও সালোকসংশ্লেষণের বিবর্তনের কারণে সমুদ্রের রঙে ভিন্নতা দেখা যায়। ভূত্বকের বিশেষ ধরনের শিলাপাথরে থাকা আয়রন প্রায় ৩৮০ থেকে ১৮০ কোটি বছর আগে আর্কেইয়ান ও প্যালিওপ্রোটেরোজোয়িক সময় থেকে ভূত্বকে জমা হতে শুরু করে। সেই সময়ের জীবন মহাসাগরের এককোষী জীবের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বিভিন্ন মহাদেশ তখন ধূসর, বাদামি এবং কালো পাথর ও পলির সমন্বয়ে এক অনুর্বর ভূখণ্ড ছিল। মহাদেশীয় শিলার ওপর বৃষ্টির পানির মাধ্যমে লোহা দ্রবীভূত হয়। এই লোহা পরে নদীর মাধ্যমে মহাসাগরে বাহিত হয়। লোহার অন্যান্য উৎস ছিল সমুদ্রের তলদেশে আগ্নেয়গিরি। এই লোহা পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুনআটলান্টিক মহাসাগর যেভাবে বদলে যাবে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪আর্কেইয়ান ইওন ছিল এমন এক সময় যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও মহাসাগরে গ্যাসীয় অক্সিজেনের অভাব ছিল। সেই সময়ই সূর্যের আলো থেকে শক্তি উৎপন্নকারী প্রথম জীব বিবর্তিত হয়েছিল। এই জীব অ্যানেরোবিক সালোকসংশ্লেষণ ব্যবহার করত। তখন বিভিন্ন জীব অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ করতে পারত।
অ্যানেরোবিক সালোকসংশ্লেষণের একটি উপজাত হলো অক্সিজেন গ্যাস। অক্সিজেন গ্যাস সমুদ্রের পানির লোহার সঙ্গে যুক্ত হয়। সমুদ্রের নোনা পানি লোহা ও অক্সিজেনকে রাসায়নিকভাবে নিরপেক্ষ করলে অক্সিজেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। প্রাথমিক সালোকসংশ্লেষণের কারণে গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট নামের একটি ঘটনা তৈরি হয়। সেই ঘটনা পৃথিবীর জটিল জীবন বিকাশের জন্য একটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সন্ধিক্ষণ বলা যায়। সেই ঘটনার মাধ্যমে অক্সিজেনবিহীন পৃথিবী অক্সিজেনের পৃথিবীতে পরিণত হয়। তখন মহাসাগর থেকে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন মুক্ত হয়।
আর্কেইয়ান ইওন যুগের সবুজ মহাসাগর ধীরে ধীরে নীল মহাসাগরে পরিণত হয়। জাপানের আগ্নেয় দ্বীপ আইও জিমার চারপাশের পানিতে অক্সিডাইজড লোহার কারণে সবুজ আভা ধারণ করতে দেখা যায়। সেই দ্বীপের চারপাশের সবুজ পানিতে নীল-সবুজ শৈবাল দেখা যায়। নীল-সবুজ শৈবাল আদিম ব্যাকটেরিয়া নয়। আর্কেইয়ান ইওন যুগে আধুনিক নীল-সবুজ শৈবালের পূর্বপুরুষেরা ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি বিবর্তিত হয়েছিল। সেই পূর্বপুরুষেরা সালোকসংশ্লেষণের জন্য পানির পরিবর্তে ফেরাস লোহাকে ইলেকট্রনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করত। তখন মহাসাগরে লোহার উচ্চমাত্রা ছিল।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।