‘চড়কের উৎসব, গাজনের গান।/সেই সঙ্গে বর্ষ হইল অবসান।’ চৈত্রের শেষ, বৈশাখের শুরু। বিবিধ উৎসবের রঙে বর্ণময় বর্ষবিদায়ী দিন। চৈতালি ফসলের ঘ্রাণে মেতে ওঠা গ্রামে লাগে পুরাতনী পার্বণের ধুম। গাজন, চড়ক, নীল উৎসব, খেজুর ভাঙা, তালতলার শিরনি আরও নানা আয়োজন। মাসজুড়ে চলে শিব-গৌরী নৃত্য, গাজনের বাদ্য, ঘোড়দৌড়, ষাঁড়ের লড়াই, লাঠিখেলা আর বাহারি মেলা। সনাতনী পাড়াগুলোয় শিব শিব রব। ‘সংক্রান্তি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো সূর্য বা গ্রহাদির এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন বা সঞ্চার। চৈত্রসংক্রান্তি হলো চৈত্র মাসের শেষ দিন। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও, কালের পরিক্রমায় বাঙালি উৎসবে পরিণত হয়েছে। এদিন পুরোনো বছরের আবর্জনা ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়। ঘরদোর, আসবাবের পাশাপাশি গ্রামের কাঁচামাটির ঘরগুলো এঁটেল মাটিতে লেপে পরিপাটি করা হয়। গৃহবধূর হাতের আলতো পরশে হরিদ্রাভ হয়ে ওঠে মাটির আঙিনা। বাড়িজুড়ে ছেয়ে যায় শুদ্ধ-শুভ্রতার এক নান্দনিক পরশ। চৈত্রের কাঠফাটা রোদে পানির জন্য যখন পঙ্খী জলধি কান্দে, তখন কৃষক গায়– ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই.
গাজন উৎসব: গাজন একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন লোকউৎসব। এ অনুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র শিবঠাকুর। শিবভক্ত সন্ন্যাসীদের আনন্দ-উল্লাসের শব্দ গর্জনের মতো শোনায়। এই গর্জন থেকে গাজন হয়েছে। অন্য মতে, গাজন গ্রামের সাধারণ উৎসব। ‘গ্রামজন’ গ্রামের মানুষ। এ ‘গ্রামজন’ থেকে ‘গাজন’ হয়েছে। পুরাণ মতে, শিবভক্ত রাজা বাণ চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিন ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহকারে শিবপূজা করতেন। উত্তরবঙ্গের এই রাজা এদিন শিবকে তুষ্ট করার জন্য রক্তদান করেছিলেন নিজের বুক থেকে। ধর্মমঙ্গল কাব্যের রানী রঞ্জাবতী গাজন পালন করতেন। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, গাজন উৎসবের দিনে দেবী হরকালীর সঙ্গে শিবের বিয়ে হয়। জাত-কুল ভেদাভেদ ভুলে শৈব সংস্কৃতির এ উৎসবে শামিল হয় সবাই। গাজন উৎসবের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় নীলপূজা, চড়ক, খেজুর ভাঙা, হর-গৌরী নৃত্যসহ নানা আচারাদি।
নীলপূজা: এটি মূলত নীল-নীলাবতী বা শিব-দুর্গার বিয়ে উৎসব। সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তির চড়ক উৎসবের আগের দিন নীলপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নীলকে সুসজ্জিত করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে গীতবাদ্য সহযোগে পরিবেশিত হয় অষ্টক গান। এ সময় নিজের সন্তানের মঙ্গল কামনা করে নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করেন নারীরা। ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’– অন্নদা মঙ্গল কাব্যের ঈশ্বরী পাটনীর মতো দেবী অন্নপূর্ণার কাছে বাংলার মায়েদের মনের এ চিরন্তন প্রার্থনা যেন ধরা পড়ে এতে।
কালীকাছ: চৈত্রসংক্রান্তির আগের দিন হয় হর-গৌরীর পূজা। তারপর শুরু ‘কালীকাছ’ খেলা। কালীর মুখোশ পরে হাতে তরবারি নিয়ে যুদ্ধের তালে নাচই হলো ‘কালীকাছ’। এ সময় কালী সেজে আগুনের ওপর নৃত্য করতে দেখা যায় ভক্তকে।
জেলেপাড়া ও কাঁসারি পাড়ার সঙ: সঙ ও চড়ক ছিল একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সঙে অংশগ্রহণকারী অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষ শ্লেষবাণে বিদ্ধ করতেন তথাকথিত কলকাতার বাবুদের। সেই সময়ে চড়কে প্রায় কিংবদন্তিতুল্য জনপ্রিয়তা পেয়েছিল জেলেপাড়া এবং কাঁসারিপাড়ার সঙ। ১৮৬৮-এর ১৩ এপ্রিলের ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ খবরের কাগজের একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, সেবার সঙের বহর ছিল অন্তত এক মাইল, চলেছিল ৯ ঘণ্টাব্যাপী।
সঙে গান-বাজনা-মশকরা-পুতুল নাচ-মূকাভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হতো সমাজের নানা অসংগতি। ভিড় করত আট থেকে আশি বছরের সবাই। বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বাংলাদেশের সঙ প্রসঙ্গে’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ১৯১৭ সালের চৈত্রসংক্রান্তির দিন জেলেপাড়ার সঙের একটি বিশেষ গান রচিত হয়েছিল। ‘বিদ্যার মন্দিরে সিঁদ’ নামে গানটি রচিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
বিদ্যার মন্দিরে এ সিঁদ কেটেছে কোন চোরে?/সখীরা নেকী নাকি পড়লো ফাঁকি/কেউ দেখেনি ঘুমের ঘোরে...।
বোলান গান: বোলান বাংলার এক প্রাচীন লোকগান। শিবের গাজন উপলক্ষে বোলান গান গাওয়া হয়। বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি গবেষক ওয়াকিল আহমদ তাঁর ‘বাংলার লোকসংস্কৃতি’ বইতে লিখেছেন, বোলান গান বাঁধা হয় পালার আকারে। এতে লঘু, গুরু উভয় বিষয়েরই স্থান আছে। গুরু বিষয় খণ্ডগীতি আর লঘু বিষয় রঙপাচালি নামে পরিচিত। এখানে একটি দল যখন গায়, অন্য দল ধুয়া দেয়। এভাবে এগিয়ে চলে বোলান।
শিব-গৌরীর নাচ: চৈত্র মাসে শিবের গাজনকে কেন্দ্র করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাচের দল। ব্যোম ভোলে, ঢাকের বাদ্যি আর শিঙা ধ্বনি। সন্ন্যাসীদের কণ্ঠে সমস্বরে ধ্বনিত হয়, ‘হর গৌরী প্রাণনাথ, মাথার উপরে জগন্নাথ, এইবার উদ্ধার করো শিব শিব শিব...।’ মাসব্যাপী চলে এ আয়োজন। শিব-পার্বতী সেজে নেচে গেয়ে ফসল সংগ্রহ করা হয়। চৈত্রসংক্রান্তিতে লাগানো হয় কালীর ভোগে।
খেজুর ভাঙা: শিবকে তুষ্ট করার জন্য চৈত্রসংক্রান্তির দিন খেজুর ভাঙা উৎসবে ভক্তরা আত্মহারা হন। এ দিনে নারীরা একটি নির্দিষ্ট খেজুর গাছের গোড়ায় দুধ এবং ডাবের জল ঢেলে পূজা করেন। পূজা শেষে সন্ন্যাসী দলনেতা খালি গায়ে গাছে ওঠেন। এরপর সন্ন্যাসী দলের বাকিরা কাঁটাযুক্ত খেজুর পাতার ওপরে দাঁড়িয়ে নাচে। গাছে ওঠা সন্ন্যাসী দলনেতা খেজুর গাছ থেকে খেজুর ভেঙে ভক্তদের মাঝে বিলাতে থাকেন।
তালতলার শিরনি: চৈত্রসংক্রান্তিতে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলে কেনা হতো চাল, গুঁড়, দুধ। সংগৃহীত সেই দুধ, চাল, গুঁড় গাঁয়ের সবচেয়ে উঁচু গাছের নিচে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানেই বড় হাঁড়িতে চড়িয়ে পাক করা হতো শিরনি। তা খেতে গাঁয়ের মানুষ জমায়েত হতো গাছতলায়। বেশির ভাগ সময় তাল গাছ উঁচু হওয়ায় তার নিচে শিরনি রান্না হতো বলে লোকমুখে এটি ‘তালতলার শিরনি’ নামে পরিচিত।
আমানি: এটি নববর্ষের একটি প্রাচীন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান। এটি প্রধানত কৃষকের পারিবারিক অনুষ্ঠান। চৈত্র মাসের শেষ দিনের সন্ধ্যারাতে গৃহকর্ত্রী এক হাঁড়ি পানিতে স্বল্প পরিমাণ অপক্ব চাল ছেড়ে দিয়ে সারারাত ভিজতে দেন এবং তার মধ্যে কচি আমের পাতাযুক্ত ডাল বসিয়ে রাখেন। পহেলা বৈশাখের সূর্য ওঠার আগে ঘর ঝাড়ু দিয়ে গৃহকর্ত্রী সেই হাঁড়ির পানি সারা ঘরে ছিটিয়ে দেন। সেই ভেজা চাল সবাইকে খেতে দিয়ে আমের কচি পাতা হাঁড়ির পানিতে ভিজিয়ে পরে বাড়ির সবার গায়ে ছিটিয়ে দেন।
চৈত্রসংক্রান্তি মেলা: সুপ্রাচীন কালের ঐতিহ্যের ধারা বহন করছে চৈত্রসংক্রান্তির মেলা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ এক মিলন মেলাও বটে। এখনও সংক্রান্তির দিনে নানা জায়গায় মেলা বসে। মান্দার শংকরী মণ্ডপ মেলা, ৩০০ বছরের পুরোনো কালীদহের মেলা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এসব মেলাকে ঘিরে আয়োজিত হয় কবিগান, পালাগান, কুস্তি, বলীখেলা, ঘোড়দৌড়, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ প্রভৃতি। এ যেন লোকজীবনের বহুমাত্রিক আনন্দ।
চৈত্রের খাদ্যাচার: মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, ছাতু, পায়েস, শরবত– এসবের পাশাপাশি চৈত্রসংক্রান্তির খাদ্য তালিকায় থাকে নিরামিষ। তৈরি হয় চৌদ্দ প্রকার শাক। থানকুনি, তেলাকুচা, হেলেঞ্চা, ঢেঁকি, সেঞ্চি, কচু, নটে শাক, গিমা, বতুয়া, প্রভৃতি মিশেলে রান্না করেন গ্রামের নারীরা। অনেক পরিবার পাচন রান্না করেন। খাওয়া হয় আম-ডাল। কোনো কোনো মুসলিম পরিবারে এদিন বাড়তি ভাত রান্না করা হতো। বছরের প্রথম দিন মোট ভরে সেই বাসি ভাত দেওয়া হতো ছেলেমেয়েদের। লোকবিশ্বাস, এতে সারাবছর ভাতের অভাব হবে না।
শত আনন্দের পাশাপাশি বছরের শেষ দিনটি ছিল গ্রামীণ কৃষকের জন্য হাসির আড়ালে নীরব কান্না। দায় পরিশোধ আর খাজনা আদায়ের খড়গের কথা তো অস্বীকার করা যায় না। তবে এসব কেবল রীতি, আচার, অনুষ্ঠান হিসেবে বিচার্য নয়। শত শত বছর ধরে চলা লোকজীবনের এ চর্চা আমাদের শিকড়কে গভীরে প্রোথিত করেছে। আমাদের প্রাণের শিকড় ডুবে থাকা মাটিতে ঐতিহ্যের ডালপালা মেলে ধরে চৈত্রের শেষ দিনটি। v
তথ্যসূত্র
১. নববর্ষ ও বাংলার লোকসংস্কৃতি, সম্পাদনা: আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ
২. হুতোম প্যাঁচার নকশা, কালী প্রসন্ন সিংহ
৩. বাংলার লোকসংস্কৃতি, ওয়াকিল আহমদ
৪. উপজাতীয় নন্দন সংস্কৃতি, জাফার আহমদ হানাফী
৫. গ্রামীণ লোকমেলার সন্ধান বরেন্দ্র অঞ্চল, সাবরিনা হাসনাত
৬. বাংলাদেশের সঙ প্রসঙ্গে, বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ত রস ক র ন ত র অন ষ ঠ ন উৎসব র র জন য বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের পর এবার বিদেশেও ঈদের সিনেমার মুক্তি
প্রথম দিন থেকে প্রশংসিত হচ্ছে ঈদে মুক্তি পাওয়া ঢাকাই সিনেমাগুলো। দ্বিতীয় সপ্তাহেও সিনেমা দেখতে বেশির ভাগ প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাচ্ছে দর্শকদের দীর্ঘ লাইন। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদের সিনেমার বিদেশ যাত্রা। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার অর্ধশতাধিক হলে মুক্তি পেয়েছে ঈদের আলোচিত সিনেমা ‘তাণ্ডব’। ঈদে মুক্তি পাওয়া ছয় ছবির মধ্যে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ এর দর্শক সাড়া বেশি। সিনেমাটি মুক্তির এক সপ্তাহ পরও টিকিট সংকট রয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই তাণ্ডব সিনেমার বিদেশে মুক্তির খবর এলো। শুক্রবার থেকে ইউরোপ আমেরিকা ও কানাডার অর্ধশত সিনেমা হলে চলছে সিনেমাটি। সিনেমাটির ওভারসিজ রিলিজের দায়িত্বে রয়েছে বায়োস্কোপ ফিল্মস।
প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার রাজ হামিদ ও রুবনা রশীদ খান জানিয়েছেন–ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডায় প্রথম সপ্তাহে মোট অর্ধশত সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে তাণ্ডব। তারা বলেন, ‘শাকিব খানের ছবির ক্ষেত্রে সবসময়ই একটু বড় পরিসরেই ভাবতে হয়। কারণ, তাঁর ফ্যানবেজটা বিশাল। এবারেও তাঁর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তবে এবারের ছবিটি নিয়ে আমরা ভিন্ন স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছিলাম। একই সঙ্গে আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। নিউইয়র্কের কিউ গার্ডেন সিনেমাস ও শোকেস ফারমিংডেল এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের লেমলি নর্থ হলিউডসহ ভার্জিনিয়া, বোস্টন, সান ফ্রানসিসকো, শিকাগো এবং ডালাসের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। বিদেশে বাংলা সিনেমার প্রসারে বহু বছর ধরেই কাজ করছে বায়োস্কোপ ফিল্মস।
তাণ্ডব সিনেমার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ৫০তম পরিবেশনা পূর্ণ করতে যাচ্ছে। তাই বড় পরিসরেই ভিন্নভাবে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনেই সিনেমাটি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে মুক্তির দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ হামিদ। এদিকে সুড়ঙ্গ ও তুফানের পর রায়হান রাফীর তাণ্ডব বিদেশি দর্শকদের কাছে দারুণ দর্শক টানবে বলে মনে করা হচ্ছে। ছবিটি নিয়ে রায়হান রাফী বলেন, ‘তাণ্ডব পয়সা উসুল সিনেমা। দেশের হলে হলে তাণ্ডবের অগ্রিম টিকিট সোল্ড আউট। সিনেমাটিতে একাধিক চমক রয়েছে; যা নিয়ে তেমন কিছুই বলতে চাই না। আশা করি, ছবিটি দর্শকরা হলে এসে দেখবেন এবং চমকগুলো উপভোগ করবেন।’
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, একটি টেলিভিশন চ্যানেলে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে সিনেমার গল্প। ছবির গল্প রচনায় রয়েছেন পরিচালক নিজেই এবং চিত্রনাট্য করেছেন আদনান আদিব খান ও রায়হান রাফী যৌথভাবে। সিনেমাটিতে শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, জয়া আহসান, সাবিলা নূর, ফজলুর রহমান বাবু, সুমন আনোয়ার, সিয়াম আহমেদসহ একাধিক তারকা।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশের সিনেমা ‘উৎসব’। তৃতীয় সপ্তাহ (২০ জুন) থেকে সিনেমাটি দেখা যাবে কানাডার ‘সিনেপ্লেক্স’, যুক্তরাষ্ট্রের ‘এএমসি’, ‘রিগ্যাল’, ‘সিনেমার্ক’ এবং যুক্তরাজ্যের ‘সিনেওয়ার্ল্ড’ চেইনে। সিনেমাটির আন্তর্জাতিক পরিবেশনা করছে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো। তারা জানায়, ২১ জুন ‘উৎসব’ মুক্তি পাবে অস্ট্রেলিয়াতেও।চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত উপন্যাস ‘অ্যা ক্রিসমাস ক্যারল’-এর ছায়া অবলম্বনে তানিম নূর নির্মাণ করেছেন ‘উৎসব’ সিনেমাটি। এক কৃপণ ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গল্প।
এক উৎসবের রাতে অতীতের তিন ব্যবসায়িক অংশীদারের আত্মা তাঁর সামনে এসে হাজির হয়। তারা তাঁকে নিয়ে যায় নিজের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের স্মৃতির ভেতরে। সেই অভিজ্ঞতায় বদলে যেতে থাকে মানুষটি। সেখানে জাহিদ হাসান রয়েছেন কৃপণ ব্যক্তির ভূমিকায়। তিন আত্মার চরিত্রে দেখা গেছে জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী ও অপি করিমকে। আরও অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, ইন্তেখাব দিনার, সাদিয়া আয়মান, সৌম্য জ্যোতি প্রমুখ।
তানিম নূর জানান, প্রথম সপ্তাহে (১২ জুন) ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্টার সিনেপ্লেক্সের সবগুলো শাখায় ‘উৎসব’ সিনেমার শো ছিল ৯টি। দ্বিতীয় সপ্তাহ (১৩ জুন) থেকে শো সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩টি। এবার দেশের বাইরেও প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে সিনেমাটি। আশা করছি, দেশের মতো বিদেশের মাটিতেও সাড়া জাগাবে সিনেমাটি।
দক্ষিণ আমেরিকাসহ আরও অনেক দেশে মুক্তির প্রস্তুতি চলছে ‘নীলচক্র’ সিনেমার। মিঠু খান পরিচালিত চলচ্চিত্রটির ইতোপূর্বে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে আমেরিকান ফিল্ম মার্কেটে।
সিনেমার প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ ও মন্দিরা চক্রবর্তী। এটি মন্দিরার দ্বিতীয় ছবি। ‘নীলচক্র’ সিনেমাটি ক্রাইম ঘরানার, যেখানে ইন্টারনেট জগতের নেতিবাচক দিককে তুলে ধরা হয়েছে। মানবকল্যাণে ইন্টারনেটের তাৎপর্যবহুল অবদান থাকলেও এর গহিনে রয়েছে ভয়াবহ ফাঁদ। এই ফাঁদে পড়ে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়, এমনকি প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটে। এমনি প্রেক্ষাপটের ওপর নির্মিত হয়েছে সিনেমার কাহিনি। শুভ-মন্দিরা ছাড়াও সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন শিরীন আলম, ফজলুর রহমান বাবু, খালেদা আক্তার কল্পনা, প্রিয়ন্তী ঊর্বী, দীপান্বিতা মার্টিন, শাহেদ আলী, মনির আহমেদ শাকিল, মাসুম রেজওয়ান এবং টাইগার রবি।
উত্তর আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে মুক্তি পাবে ঈদের সিনেমা ‘ইনসাফ’। এমনটিই জানিয়েছেন নির্মাতা সঞ্জয় সমাদ্দার। ছোট পর্দার দর্শকনন্দিত অভিনেতা মোশাররফ করিম, তারকা অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ ও শরিফুল রাজ আছেন অ্যাকশন ও থ্রিলার গল্পকেন্দ্রিক সিনেমাটিতে।
ওয়েব চলচ্চিত্রের বাইরে বাংলাদেশে এটি ফারিণের দ্বিতীয় ছবি। প্রথমবারের মতো ফারিণ ফর্মুলা ছবির নায়িকা হয়েছেন তিনি। এখানে তাঁর বিপরীতে রয়েছেন শরিফুল রাজ। খলনায়কের ভূমিকায় দেখা যাবে মোশাররফ করিমকে। এ ছাড়াও ঈদে মুক্তি পাওয়া আরও একটি সিনেমার বিদেশে মুক্তির কথা রয়েছে।