পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৮ বস্তা টাকা, গণনা চলছে
Published: 12th, April 2025 GMT
চার মাস ১১দিন পর আবার খোলা হলো কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স। এবার মসজিদের ১১টি সিন্দুক বা দানবাক্স খুলে পাওয়া গেছে ২৮ বস্তা টাকা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭ টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এ সময় মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল সেনাবাহিনী, পুলিশ, ও আনসার সদস্যরা। এ সময় মসজিদটি ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়।
দানবাক্সের টাকাগুলো বস্তায় ভরে কড়া নিরাপত্তায় মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই টাকাগুলো গণনার কাজ শুরু হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর খোলা হয়েছিল মসজিদের দানবাক্স। তখন পাওয়া যায় রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪টাকা।
মসজিদের দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে বসা মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সামনে বস্তা থেকে টাকা ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। আর এগুলো ভাঁজ করে গুনছে তারা। গণনার কাজে সহযোগিতা করছেন মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও ব্যাংকের লোকজন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জেসমিন আক্তারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করছেন। গণনার কাজে দুটি মাদ্রাসার প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৮০ জন কর্মী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সাড়ে ৪শ লোক টাকা গণনার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
গত ১৭ আগস্ট আরেকবার খোলা হয়েছিল দানবাক্স। তখন পাওয়া যায় ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। এর আগে গত ২০ এপ্রিল সিন্দুক খুলে পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। তারও আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পাওয়া যায় ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা।
মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাধারণত তিন মাস পর পর দানবাক্স খোলা হয়। এবার চার মাসের বেশি সময় পর দানবাক্স খোলা হয়েছে। এ কারণে টাকার পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম জানান, দেশি টাকা ছাড়াও বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রূপার অলঙ্কারও উল্লেখযোগ্যা পরিমাণ পাওয়া গেছে। এগুলো গণনা করতে সন্ধ্যা, এমনকি রাতও হয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। ২০২৪ সালে আজ নিয়ে তিনবার খোলা হলো সিন্দুক। আগের দুবারে পাওয়া যায় ১৪ কোটি ১১লাখ ১৮ হাজার ৯৬০ টাকা। নভেম্বর পাওয়া গিয়েছিল ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করেন। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে। দান করেন মোটা অঙ্কের টাকা। টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বইও দান করেন লোকজন।
তবে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে প্রাপ্তির আনন্দ, না-পাওয়ার বিরহ বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে।
জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে থাকে মসজিদ কমিটি। যে কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক।
মসজিদের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, দানের টাকায় মসজিদের নিয়মিত খরচ চালিয়ে ব্যাংকে জমানো হচ্ছে। ব্যাংকে জমা আছে ৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। মসজিদ ঘিরে এখানে ছয়তলাবিশিষ্ট একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে ৫০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবে। এরমধ্যে পাঁচ হাজার নারীর জন্য আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরো বিভিন্ন আয়োজন। এ জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে ডিজাইন ও নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।
ঢাকা/রুমন/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মসজ দ র দ ন গণন র ক জ য় মসজ দ দ ন কর ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে