কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাতভর অবস্থানের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের
Published: 13th, April 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রশাসনিক ভবনের সামনে সারা রাত অবস্থান করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার বিকেলে কুয়েট প্রশাসনের কাছে রাত আটটার মধ্যে হল খুলে দেওয়ার আবেদন জানান শিক্ষার্থীরা। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রশাসন থেকে কোনো রকম সাড়া না পেয়ে শিক্ষার্থীরা নতুন ঘোষণা দেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনরাত আটটার মধ্যে কুয়েটের আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের৩ ঘণ্টা আগেপ্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘হলের তালা হলের তালা, খুলতে হবে খুলে দাও’, ‘হল ভ্যাকান্ট মানি না মানব না’, ‘আমার ঘর খুলে দাও খুলতে হবে’, ‘আপস না সংগ্রাম সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘দালালি না রাজপথ রাজপথ রাজপথ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে হল খুলে দেওয়ার দাবিসংবলিত নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, দুপুরের পর থেকে তাঁরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন। রাত আটটার মধ্যে প্রশাসনের কাছে তাঁরা হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তবে প্রশাসন থেকে তাঁদের আবেদনে কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। এ কারণে তাঁরা রাতভর প্রশাসনিক ভবনের সামনেই অবস্থান করবেন। আগামীকাল সকালে তাঁরা নতুন কর্মসূচি জানাবেন।
প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাঁরা বিছানা পেতে শুয়ে বসে ছিলেন। তাঁদের আরেকটি অংশ পাশেই ক্রিকেট খেলছিলেন।
এদিকে কুয়েটের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার রাতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এম এম এ হাসেম রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ রাতের মধ্যে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। পরবর্তী পদক্ষেপ কুয়েট প্রশাসন নেবে।’
এর আগে বেলা সোয়া তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। বেলা দুইটার দিক থেকে শিক্ষার্থীরা দু–একজন করে কখনো আবার ছোট ছোট দলে কুয়েট প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হতে থাকেন। নতুন করে কোনো শিক্ষার্থী এলে আগে থেকে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা তাঁদের হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান। তখন কুয়েটের প্রধান ফটকের বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষক কথা বলতে যান। এ সময় শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে না ঢোকার অনুরোধ করেন।
ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ পর বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের দপ্তরের কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। এ সময় শিক্ষকেরা জানান, হল বন্ধ হয়েছে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে। তাই হল খুলতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত লাগবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের প্রায় দুই মাস পর কয়েক দিন ধরে কুয়েট ক্যাম্পাসে আবার উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বন্ধ থাকা ক্যাম্পাসে সবাই একসঙ্গে হলে ওঠার ঘোষণা দেওয়ায় এ উত্তেজনার কারণ। শিক্ষার্থীরা যাতে বন্ধ ক্যাম্পাসে না ফেরেন, এ বিষয়ে তৎপরতা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিক সভা, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি, বিজ্ঞপ্তি জারি ও অভিভাবকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে না পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র অবস থ ন হল খ ল আটট র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।