চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসবে। গতকাল রোববার এ কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, চীনের ওপর তাঁর পাল্টা শুল্কারোপ থেকে স্মার্টফোন ও কম্পিউটার যে ছাড় পেয়েছে, তা স্বল্প সময়ের জন্য।

ট্রাম্প সেমিকন্ডাক্টর সেক্টরে বাণিজ্যব্যবস্থা নতুন করে শুরু করতে চান। তবে এই ক্ষেত্রে কয়েকটি কোম্পানি শুল্কে কিছুটা সুবিধা পাবে বলেও যোগ করেছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুনচীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ১৪৫ শতাংশ১০ এপ্রিল ২০২৫

ওয়েস্ট পাম বিচ থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার পথে এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের আরও বলেছেন, ‘আমরা অন্যান্য অনেক কোম্পানির জন্য এটা কম জটিল করতে চেয়েছি। কারণ, আমরা নিজেদের চিপ, সেমিকন্ডাক্টর এবং অন্যান্য জিনিস আমাদের দেশেই তৈরি করতে চাই।’

স্মার্টফোনসহ কিছু পণ্যের ওপর তারপরও করছাড় থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে বলেছেন, ‘আপনাকে কিছুটা নমনীয় হতেই হবে। কারও এতটাও অনমনীয় হওয়া উচিত না।’

গত ২ এপ্রিল বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ওপর নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। পরে ট্রাম্প ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখে বাকি শুল্কারোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন।

আরও পড়ুনস্মার্টফোন ও কম্পিউটার নতুন শুল্কের বাইরে রাখার ঘোষণা ট্রাম্পের১২ এপ্রিল ২০২৫

কিন্তু ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর ওই ১০ শতাংশ শুল্কও কার্যকর হবে না। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সংস্থা কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার পেট্রল থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

এমনকি চীনের ওপর শুল্ক স্থগিত না করে তা আরও বাড়ানো হলেও তাদের ইলেকট্রনিক পণ্য শুল্কের বাইরে রাখা হয়েছে। চীন ট্রাম্পকে শুল্ক সম্পূর্ণ বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে।

আরও পড়ুনএবার মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল চীন১১ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা শুল্ক ‘সম্পূর্ণ বাতিল’ করার আহ্বান চীনের৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

উপন্যাসের জন্ম ও প্রধান চরিত্র দন কিহোতের মধ্যস্থতা

বাইবেলের পরে সবচেয়ে অনূদিত ও পঠিত বই মিগেল দে সেরভানতেস সাভেদরার ‘দন কিহোতে দে লা মানচা’ কিংবা ‘দন কিহোতে’। রচনাটির আঙ্গিকের চেয়ে বিষয়বস্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বোদ্ধারা। কেননা বিষয়গত কারণেই সোয়া চার শ বছর ধরে তা সারা দুনিয়ার সাহিত্যরসিকের মন জয় করে আসছে। বিশেষ করে আখ্যানের প্রধান চরিত্র খ্যাপাটে দন কিহোতের উদ্ভট, হাস্যকর, অত্যাশ্চর্য ও রোমাঞ্চকর খেয়ালি কর্মকাণ্ডগুলো। সেরভানতেস তাঁর আখ্যানে ‘যুক্তিহীনের যুক্তি’ দিয়ে এমন এক জগৎ উন্মোচন করেন, যা শুধু বিস্ময়কর নয়, আধুনিক ও চিরকালীনও। উদ্ভবের পর থেকে যে জীবন মানুষ যাপন করে আসছে সেই অসহায়ত্ব, প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা, নিয়তির দুর্লঙ্ঘনীয় রহস্য, সম্পর্কের জটিলতা, বৈপরীত্য আর সীমাহীন নির্বোধতা প্রভৃতি নানা মাত্রিকতায় এতে হাজির হয়েছে। তাই সচেতন পাঠকমাত্রই দন কিহোতের দুনিয়ায় নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন, তিনি যে দেশের যে কালের হোন না কেন। এমন সৃষ্টি সেরভানতেসের পক্ষে সম্ভব হয় এই কারণে যে তাঁর কালটা ছিল একদিকে স্পেনের সমৃদ্ধি ও বুদ্ধিবৃত্তির স্বর্ণযুগ এবং অন্যদিকে কলহ, যুদ্ধ, আত্মম্ভরী ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের যুগও। জীবনাভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও নিজ জীবনের ট্র্যাজেডি থেকেও সারভানতেস জীবনকে এমন নির্মোহভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন—জীবন ও জগৎকে ঠাট্টা-রসিকতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, কাহিনি শেষে দন কিহোতের গভীর জীবনোপলব্ধি—একটা গভীর সত্যে পৌঁছানো। স্পেনের অপর বিখ্যাত লেখকেরা, যেমন নাট্যকার লোকে দে ভেগা, কবি ফ্রাই লুইস দে লেওন, কেভোদা প্রমুখ এমন সময় ও অভিজ্ঞতা ফুঁড়েই বেরিয়ে এসেছিলেন। এঁরা সবাই সম্মিলিতভাবে রেনেসাঁর আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবমনের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। পুরোনো যুগের ভাঙন এবং নতুন যুগের আবির্ভাবে স্পেন তখন সত্যি দিশাহারা ছিল।

বাইবেলের পরে সবচেয়ে অনূদিত ও পঠিত বই মিগেল দে সেরভানতেস সাভেদরার ‘দন কিহোতে দে লা মানচা’ কিংবা ‘দন কিহোতে’। রচনাটির আঙ্গিকের চেয়ে বিষয়বস্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বোদ্ধারা। কেননা বিষয়গত কারণেই সোয়া চার শ বছর ধরে তা সারা দুনিয়ার সাহিত্যরসিকের মন জয় করে আসছে।

আখ্যানে দেখা যায়, মধ্যযুগের ইউরোপীয় নাইটদের নিয়ে লেখা শিভালরিক রোমান্স পড়ে নিজের ভেতর এক কাল্পনিক জগৎ সৃষ্টি করেছিলেন লা মানচার গ্রামের জনৈক আলোনসো কিহানো। ফলে গরিব এই ভদ্রলোক নিজে নাইট হয়ে ওঠেন একদিন দন কিহোতে নাম নিয়ে। তাই কিহানোর হাড় জিরজিরে ঘোড়াটা হয়ে গেল ডাকসাইটে রোসিনান্তে, বাড়ির পুরোনো পোশাক পেল নাইটদের পরিচ্ছদের মর্যাদা। এটা-সেটা দিয়ে বর্ম, হাত-পায়ের সুরক্ষার কভার, এমনকি শিরস্ত্রাণও জোগাড় হয়ে গেল তাঁর। হয়তো বাড়ির কেউ আগে সৈনিক বা ডাকাত ছিল, তাই সহজে মিলে গেল এত সব। দন কিহোতে একদিকে যেমন ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার’ গোছের, অন্যদিকে জীবনে গুটিকয় মানুষ ছিল তাঁর নামমাত্র পরিজন। যেমন উনিশ বছর বয়সী এক ভাতিজি/ভাগনি, চল্লিশোর্ধ্ব এক গৃহপরিচারিকা, মাঠে কাজ করার এক লোক আর দুই বন্ধু: একজন গ্রামের অধস্তন পাদরি, অপরজন এক নাপিত। দন কিহোতের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, আপাত যৌনতায় অনভিজ্ঞ, নিজের ধারণায় নাইটদের শুদ্ধ প্রতিনিধি তিনি। যদিও কাছাকাছি থাকেন এমন এক গাট্টাগোট্টা চাষি মেয়ে আলদোনসা লোরেনসোর দিকে তাঁর বিশেষ নজর আছে। এই নারীকেই দন কিহোতে দুলসিনিয়া দেল তোবোসো নামক জনৈক অভিজাত ও মহীয়সী হিসেবে ভাবতে থাকেন। যিনি আবার তাঁর সুখস্বপ্নের আদর্শ নায়িকা। দন কিহোতে সব ধরনের পাগলামির ঊর্ধ্বে উঠে একসময় পরিচালিত করেন উদ্ভট সব নাইটসুলভ অভিযান।

স্পেনের জাতীয় গ্রন্থাগারের বাইরে সেরভানতেসের ভাস্কর্য

সম্পর্কিত নিবন্ধ