বগুড়ার ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে মামলা আপসের জন্য চাপ দেওয়া ও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এই আদেশ দেন ধুনট আমলি আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. লোকমান হাকিম। ঘটনা তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। 

বেলকুচি গ্রামের মৃত আবু তাহেরের মেয়ে তাসলিমা খাতুনের সঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার থলবাড়ি গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মুনজুর আলমের ১৩ বছর আগে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন মোহরে বিয়ে হয়। এ দম্পতির তাওহিদ (৯) ও তানজিদ (৬) নামে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। 

তাসলিমার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই মুনজুর আলম তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। নির্যাতন সইতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি দুই সন্তানের ভরণপোষণ চেয়ে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মুনজুর আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত ৩১ ডিসেম্বর মুনজুর লোকজন নিয়ে তাঁর বাবার বাড়িতে এসে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন এবং মারধর করার চেষ্টা করেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে মুনজুর অটোরিকশা ফেলে পালিয়ে যান। পরে মারধরের অভিযোগ নিয়ে ধুনট থানায় গেলে ওসি মামলা আপসের দিন ধার্য করে মুনজুরের অটোরিকশাটি ঘটনাস্থল থেকে থানায় নিয়ে আসেন। 

তাসলিমা বলেন, ‘নির্ধারিত দিনে থানায় গিয়ে জানতে পারি, টাকার বিনিময়ে অটোরিকশাটি মুনজুরকে ফিরিয়ে দিয়েছেন ওসি। পরে ওসির সঙ্গে দেখা করলে এক লাখ টাকার বিনিময়ে আদালত থেকে অভিযোগ তুলে নিতে বলেন এবং আপস-নিষ্পত্তি করে দেওয়ার বিনিময়ে কিছু খরচ চান। এ প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বাড়ি ফিরে আসি। পরে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে মুনজুরের আটক করা অটোরিকশাটি থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’ 

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খ্রিষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের কোনো নোটিশ বা আদেশ পাইনি। পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

সাইদুল আলম তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, স্বামীর সঙ্গে বিরোধের জেরে তাসলিমা দুই সন্তান নিয়ে ধুনটে বাবা-মা’র কাছে থাকেন। তিন মাস আগে তাঁর স্বামী সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তখন মারামারির ঘটনা ঘটলে তিনি তাঁর অটোরিকশা রেখে পালিয়ে যান। পরে অটোরিকশাটি থানায় আনা হয়। পরে মুনজুর তাঁর কাগজপত্র দেখিয়ে অটোরিকশা নিয়ে যান। পরে তাসলিমা ভরণপোষণের জন্য মামলা করতে এলে তাঁকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মামলা আপস করে দেওয়ার জন্য টাকা-পয়সা চাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক

একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।

যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষক

চৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।

যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়

ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।

তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।

দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী

সম্পর্কিত নিবন্ধ