তদন্তকারীরা যখন রাতারাতি নির্মিত একটি দেয়াল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন, তখন গোপন কারাগারটির কয়েকটি সেল (কারাপ্রকোষ্ঠ) খুঁজে পান।

কারাগারটিতে নতুন ইট বাঁধানো একটি প্রবেশপথের সন্ধান পাওয়া যায়; যা ছিল মূলত পেছনে লুকিয়ে থাকা জিনিস আড়াল করার একটি চেষ্টা। প্রবেশপথটি দিয়ে ভেতরে ঢুকলে, সরু করিডোর। ডানে-বাঁয়ে ছোট ছোট ঘর। চারপাশটা মিসমিসে অন্ধকার।

মীর আহমেদ বিন কাসেম ও গুমের শিকার হয়েও ভাগ্যক্রমে ফিরে আসা অন্যদের স্মৃতিচারণা ছাড়া তদন্তকারী দলটি হয়তো এ গোপন কারাগার কখনোই খুঁজে পেত না। অথচ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছেই এটির অবস্থান।

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেতার (শেখ হাসিনা) একজন সমালোচক মীর আহমেদ এ গোপন কারাগারে আট বছর বন্দী ছিলেন।

আরও পড়ুনমানুষ কত নির্মম হতে পারে, আয়নাঘর প্রসঙ্গে ড.

ইউনূস ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কারাগারে থাকার বেশির ভাগটা সময় মীর আহমেদের চোখ বেঁধে রাখা হতো। এ অবস্থায় শুনতে পাওয়া কিছু শব্দের কথা স্মরণে আছে তাঁর। উড়োজাহাজ অবতরণ করার সেই শব্দ তিনি স্পষ্ট মনে করতে পারেন।

মীর আহমেদের স্মৃতি তদন্তকারীদের বিমানবন্দরের কাছের একটি সামরিক ঘাঁটিতে যেতে সহায়তা করে। এ ঘাঁটির প্রাঙ্গণে থাকা প্রধান ভবনের পেছনে অপেক্ষাকৃত ছোট, সুরক্ষিত, জানালাবিহীন ইট ও কংক্রিটের একটি অবকাঠামো দেখতে পান তাঁরা। এখানে বন্দীদের আটকে রাখা হতো। কারাগারটি ছিল স্বাভাবিক দৃষ্টির অন্তরালে।

গণ–আন্দোলনের মুখে গত আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর আহমদ বিন কাসেমের মতো কয়েক শ ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির পর গোপন কারাগার থেকে অনেক বন্দী মুক্তি পান। আরও অনেকে বেআইনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছের ওই গোপন কারাগারসহ যারাই এমন কারাগারগুলো চালাত, তাদের একটি হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ইউনিট র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তদন্তকারীরা বলেন, এ ইউনিট হাসিনার সরাসরি নির্দেশে কাজ করত।

মীর আহমেদের স্মৃতি তদন্তকারীদের বিমানবন্দরের কাছের একটি সামরিক ঘাঁটিতে যেতে সহায়তা করে। এ ঘাঁটির প্রাঙ্গণে থাকা প্রধান ভবনের পেছনে অপেক্ষাকৃত ছোট, সুরক্ষিত, জানালাবিহীন ইট ও কংক্রিটের একটি অবকাঠামো দেখতে পান তাঁরা। এখানে বন্দীদের আটকে রাখা হতো। কারাগারটি ছিল স্বাভাবিক দৃষ্টির অন্তরালে।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জোরপূর্বক গুমের সব ঘটনা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন, সম্মতি বা নির্দেশে ঘটানো হতো।’

হাসিনার দল অবশ্য বলেছে, কথিত অপরাধগুলো তাঁর অজ্ঞাতসারে ঘটানো হয়েছে। তাই এসবের দায় তাঁর নয় এবং সামরিক কর্তৃপক্ষ একাই এটির দেখভাল করেছে। তবে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে সেনাবাহিনী।

সাত মাস হলো মুক্তি পেয়েছেন আহমেদ বিন কাসেম ও অন্যরা। কিন্তু যাঁরা ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে তাঁরা এখনো আতঙ্কিত। জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় যুক্ত ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে কর্মরত এবং তাঁদের কাউকেই এখনো ধরা হয়নি।

আহমেদ বিন কাসেম বলেন, টুপি ও মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে কখনো যান না তিনি। বলেন, ‘আমি যখন বাইরে থাকি, তখন ক্ষতির আশঙ্কায় সব সময় সতর্ক থাকতে হয়।’

ঢাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে একটি আয়নাঘর পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন উপদেষ্টাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আয়নাঘরটিতে বন্দীদের ‘নির্যাতনে ব্যবহৃত একটি চেয়ারও’ পাওয়া যায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র আহম দ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ