রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার মসনদে গেলে দলীয় স্বার্থের কথা ভেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করে না। সে জন্য বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিতের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে তাদের শঙ্কা, গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারের হাতে স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীভূত না হলে ভবিষ্যতেও হীন স্বার্থে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

আজ শুক্রবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো.

আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

গত বছরের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্কারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। দীর্ঘ আলোচনা ও গবেষণার পর কমিশনগুলো তাদের সংস্কার প্রস্তাব সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করে। এসব কমিশনের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে তা বাস্তবায়নের নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

তবে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবে থাকা অধস্তন আদালতের জন্য পৃথক সচিবালয় করার প্রস্তাবটি অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তা আবারও দলীয়করণের দিকে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে স্বাধীন বিচার বিভাগের বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম ও প্রধান অনুষঙ্গ হলো স্বাধীন বিচার বিভাগ। বিগত দিনে বিচার বিভাগকে কীভাবে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে ন্যায়বিচারকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে, তার নজির আমরা সবাই লক্ষ করেছি।’

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীন বিচার বিভাগের বিষয়ে ১৯৯৯ সালে মাসদার হোসেন মামলায় প্রদত্ত নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার আংশিক বাস্তবায়ন হয়। এরপর আর কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাইনি। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখতে পাই যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার মসনদে গেলে দলীয় স্বার্থের কথা ভেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা আর চিন্তা করে না। এ জন্য বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল এক সুবর্ণ সুযোগ বলে আমরা মনে করি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটিশ আমল থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণ ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হলেও মাঝখানে পাকিস্তান আমল ও পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও কোনো সরকারই তা বাস্তবায়নের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

প্রধান বিচারপতি কর্তৃক বিচার বিভাগ সংস্কারে ১২ দফা প্রস্তাবসহ রোডম্যাপ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে বিবৃতিতে সংস্কার কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব স ব ধ নত সরক র র জন য ব র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ