বন্যার আশঙ্কা মাথায় নিয়ে হবিগঞ্জ জেলায় চলছে ধান কাটার কাজ। ব্যস্ত হাতে মাঠের ফসল ঘরে তোলায় কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় বোরোচাষিরা। শ্রমিক সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে কার্যক্রম।
ধান কাটা মৌসুমের শুরুতেই এবার বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। যার কারণে দ্রুত মাঠের কাজ শেষ করতে শ্রমিকের খোঁজ শুরু করেন কৃষকরা। তবে সংকটের কারণে হতাশ হতে হচ্ছে তাদের। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে ধান কাটা। হাওরে জমির ধান পেকে গেলেও শ্রমিক সংকটের কারণে তা কাটতে পারছেন না কৃষকরা। যদিও কম্বাইন হারভেস্টারসহ স্থানীয় শ্রমিকের মাধ্যমে কিছু কিছু জমির ধান কেটে ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের কেউ কেউ। এরই মধ্যে আবার আগামী কয়েক দিন হবিগঞ্জসহ সিলেট বিভাগে ভারী বর্ষণ ও উজানের পানি নেমে আসার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। এমনটা হলে তলিয়ে যেতে পারে হাওরের নিচু এলাকা। শ্রমিক সংকট কাটাতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন তারা। 
সরেজমিন জেলার সবক’টি হাওরে দেখা গেছে একই দৃশ্য। পাকা ধানে ভরপুর ফসলের মাঠ। মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার জেলার হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই দ্রুত সময়ে গোলায় ধান তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। শ্রমিক সংকটের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। মাঠে কাজ করতে থাকা কৃষকরা এমনটাই জানিয়েছেন। সময়মতো ধান ঘরে তুলতে না পারার দুশ্চিন্তা তাদের মনে। এদিকে বন্যার কবলে পড়ার আশঙ্কায় অনেকে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে জমির ধান কাটছেন। 
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার জেলার ৯টি উপজেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৪ হেক্টর জমিতে তিন ধরনের বোরো ধান আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ৫০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর হাইব্রিড, উফশী জাতের ৭২ হাজার ৮০১ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হয় ৫০ হেক্টর জমিতে। হাইব্রিড জাতে হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৬৮ টন, উফশীতে ৬ দশমিক ৯৩ টন ও স্থানীয় জাতের ধান প্রতি হেক্টর থেকে ১ দশমিক ৯ টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এই হিসাব অনুযায়ী, হবিগঞ্জে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩৪৯ টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধানের হিসাবে গেলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫১৮ টনে।
শ্রমিক সংকট নিয়ে লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, হাওরে ধান পেকে গেছে। শ্রমিক না পাওয়ায় তা কাটাতে পারছি না। স্থানীয় শ্রমিকরা একদিকে যেমন মজুরি বেশি চাইছেন অন্যদিকে আবার তাদের সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে ধান কাটা ব্যাহত হচ্ছে। একই এলাকার কৃষক ফয়সল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাচ্ছি না। কৃষি উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ না ওঠার শঙ্কায় আছি।
বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের কৃষক তাহের মিয়া বলেন, প্রতিবছরই জেলার বাইরে থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসে। এবার এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত শ্রমিক আসেনি। যে কারণে সংকট তীব্র হয়েছে। শ্রমিক না পেয়ে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটাতে হচ্ছে।  
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.

আক্তারুজ্জামান বলেন, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আসতে শুরু করেছে। তারা এলে শ্রমিক সংকট কেটে যাবে। শ্রমিকের পাশাপাশি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। 
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমান জানান, বন্যা ও শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় জেলায় অতিরিক্ত ধান কাটার যন্ত্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন য র ক ষকর

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ