এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না: নজরুল ইসলাম খান
Published: 19th, April 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আদায়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনা এবং এ লক্ষ্যে করণীয় ঠিক করতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২–দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আজ শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন নজরুল ইসলাম খান।
১২–দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা করে কী ধরনের কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে তেমন কিছু করার দরকার হবে। কারণ, এই সরকারে যাঁরা আছেন এখন, তাঁদের তো আমরাই এ সরকারে বসিয়েছি এই প্রত্যাশায় যে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁরা ভূমিকা পালন করবেন এবং জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করবেন। কাজেই এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার প্রয়োজন আছে বলে তো আমরা মনে করি না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করবে। আর সে রকম যাতে কাজ করে, সে জন্য আমরা আমাদের মতামত ব্যক্ত করছি, তুলে ধরছি আপনাদের মাধ্যমে। সরকার শুনবে–জানবে, সে অনুযায়ী কাজ করবে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এর আগে একটা আলোচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) খুব স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এবং আপনারা দেখেছেন মাঝখানে এক দিন পত্রিকায় এসেছিলও এবং খানিকক্ষণ পরে সেটা বদলে যায়। তো ওনারা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। এবং এটাও বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মানে হলো ডিসেম্বরেও হতে পারে। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরে মধ্যেই নির্বাচন হবে। এ রকম একটা রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করা উচিত।’
ব্রিফিংয়ে ১২–দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আমাদের জোর দাবি, ডিসেম্বরে মধ্যেই এই নির্বাচন করা সম্ভব এবং সংগত; দেশবাসীর প্রত্যাশাও ঠিক তাই। আমরা আশা করি, অবিলম্বে সরকার যেন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করে। না হলে এই বিভ্রান্তি বাড়তেই থাকবে।’
ব্রিফিংয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের যারাই রাজপথে ছিল, সবার সঙ্গে তারা আলোচনার চেষ্টা করছে। এই আলোচনা শেষে তাঁরা সিদ্ধান্ত জানাবেন যে তাঁরা কী করবেন।
এ ছাড়া ১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির নেতারা কী কী বিষয়ে আলোচনা করেছেন, সে বিষয়গুলো ১২–দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
বেলা তিনটায় এই বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা চলে। বৈঠকে বিএনপির পক্ষে স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২–দলীয় জোটের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন বাংলাদেশ এলিডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিকল্পধারা বাংলাদেশের অধ্যাপক নুরুল আমির বেপারি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মুহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান প্রমুখ।
সন্ধ্যায় অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নজর ল ইসল ম খ ন ড স ম বর ব এনপ র সরক র র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার, বাড়ি ফিরছেন লাখো মানুষ
রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে গতকাল বুধবার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চারপাশে যে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এরপরই বিভিন্ন দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া লাখো মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।
রাশিয়ার কামচাতকা উপদ্বীপের কাছে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু অংশে চার মিটার (১২ ফুট) পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। জাপান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইকুয়েডর পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সরে উঁচু স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়।
সুনামি সতর্কতা জারির পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের ১২১টি বন্দরের মধ্যে ৬৫টির কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপ কর্তৃপক্ষ এ দ্বীপে সব ফ্লাইটের চলাচল বাতিল করে।
তবে যতটা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমনটা ঘটেনি। সুনামি দেখা গেলেও ঢেউয়ের উচ্চতা কম ছিল। পরে একের পর এক দেশ সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার করে বা হ্রাস করে এবং উপকূলবাসীদের জানিয়ে দেয় যে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেন।
জাপানে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে উঁচু স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছিল। পরে সতর্কতা কমানো বা বাতিল করা হয়।
জাপানে সুনামি সতর্কতা জারির পর এক নারী গাড়ি চালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় সেটি পাহাড়ের খাড়িতে পড়ে গেলে তিনি মারা যান। সেখানে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাপানের গণমাধ্যম।জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সাময়িকভাবে খালি করে ফেলা হয়েছিল। ২০১১ সালে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও ভয়ংকর সুনামিতে কেন্দ্রটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জাপানে সুনামি সতর্কতা জারির পর এক নারী গাড়ি চালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি পাহাড়ের খাড়িতে পড়ে গেলে তিনি মারা যান। সেখানে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাপানের গণমাধ্যম।
চিলিতে ১৪ লাখ মানুষকে উঁচু স্থানে সরে যেত বলা হয়েছিল। সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। চিলির উত্তর উপকূলে মাত্র ২ ফুট উচ্চতার ঢেউ দেখা গেছে।
সুনামিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাশিয়ায়। রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেখানে জলোচ্ছ্বাস সেভেরো-কুরিলস্ক শহরের বন্দর প্লাবিত হয়েছে এবং স্থানীয় মাছ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র পানিতে ডুবে গেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো ভিডিও ফুটেজে ভবন ও ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রের পানির তোড়ে ভেসে যেতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুনরাশিয়ার পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় ৮.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি৩০ জুলাই ২০২৫মেয়র আলেক্সান্ডার ওভস্যাননিকভ বলেছেন, জলোচ্ছ্বাসের পানি শহরের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত পৌঁছায়, যা তটরেখা থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে অবস্থিত।
তবে এবারের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১১ সালে হওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় সামান্য। ২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামিতে জাপানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হন।
গতকালের ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ পরই ক্লিউচেভস্কয় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয় বলে জানিয়েছেন রুশ বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুনরাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর জাপানে সুনামির আঘাত৩০ জুলাই ২০২৫আঞ্চলিক ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ সংস্থা বলেছে, গতকালের ভূমিকম্প ছিল কামচাতকা অঞ্চলে ১৯৫২ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী। সংস্থাটি ৭ দশমিক ৫ মাত্রা পর্যন্ত পরাঘাতের বিষয়ে সতর্ক করে।
চিলিতে ১৪ লাখ মানুষকে উঁচু স্থানে সরে যেত বলা হয়েছিল। সেখানে কোনো ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। চিলির উত্তর উপকূলে মাত্র ২ ফুট উচ্চতার ঢেউ দেখা গেছে।এদিকে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলেছে, গতকালের ভূমিকম্প ১৯০০ সালের পর রেকর্ডকৃত ১০টি সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের মধ্যে একটি।
এই ভূমিকম্পের পর রাশিয়ার জনবিরল দূর পূর্বাঞ্চলে একাধিক পরাঘাত অনুভূত হয়। এর একটি ছিল ৬ দশমিক ৯ মাত্রার।
ইউএসজিএস বলেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত একটি পরাঘাত ৭ মাত্রার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫৯ শতাংশ।
আরও পড়ুনশক্তিশালী ১০ ভূমিকম্পের দুটিই আঘাত হানে রাশিয়ায়, আজকেরটি কততম২১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনরাশিয়ার পূর্ব উপকূলে ভূমিকম্প: সরিয়ে নেওয়া হলো ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের৩০ জুলাই ২০২৫