অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আদায়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনা এবং এ লক্ষ্যে করণীয় ঠিক করতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২–দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আজ শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন নজরুল ইসলাম খান।

১২–দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা করে কী ধরনের কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে তেমন কিছু করার দরকার হবে। কারণ, এই সরকারে যাঁরা আছেন এখন, তাঁদের তো আমরাই এ সরকারে বসিয়েছি এই প্রত্যাশায় যে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁরা ভূমিকা পালন করবেন এবং জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করবেন। কাজেই এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার প্রয়োজন আছে বলে তো আমরা মনে করি না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করবে। আর সে রকম যাতে কাজ করে, সে জন্য আমরা আমাদের মতামত ব্যক্ত করছি, তুলে ধরছি আপনাদের মাধ্যমে। সরকার শুনবে–জানবে, সে অনুযায়ী কাজ করবে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এর আগে একটা আলোচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) খুব স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এবং আপনারা দেখেছেন মাঝখানে এক দিন পত্রিকায় এসেছিলও এবং খানিকক্ষণ পরে সেটা বদলে যায়। তো ওনারা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। এবং এটাও বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মানে হলো ডিসেম্বরেও হতে পারে। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরে মধ্যেই নির্বাচন হবে। এ রকম একটা রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করা উচিত।’

ব্রিফিংয়ে ১২–দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আমাদের জোর দাবি, ডিসেম্বরে মধ্যেই এই নির্বাচন করা সম্ভব এবং সংগত; দেশবাসীর প্রত্যাশাও ঠিক তাই। আমরা আশা করি, অবিলম্বে সরকার যেন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করে। না হলে এই বিভ্রান্তি বাড়তেই থাকবে।’

ব্রিফিংয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের যারাই রাজপথে ছিল, সবার সঙ্গে তারা আলোচনার চেষ্টা করছে। এই আলোচনা শেষে তাঁরা সিদ্ধান্ত জানাবেন যে তাঁরা কী করবেন।

এ ছাড়া ১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির নেতারা কী কী বিষয়ে আলোচনা করেছেন, সে বিষয়গুলো ১২–দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

বেলা তিনটায় এই বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা চলে। বৈঠকে বিএনপির পক্ষে স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২–দলীয় জোটের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন বাংলাদেশ এলিডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিকল্পধারা বাংলাদেশের অধ্যাপক নুরুল আমির বেপারি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মুহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান প্রমুখ।

সন্ধ্যায় অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নজর ল ইসল ম খ ন ড স ম বর ব এনপ র সরক র র ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া

শীতের মৌসুম শুরু হলেও রাজধানীর বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ এবার কম। এ কারণে দামও চড়া। বাজারে অধিকাংশ সবজির কেজি ৮০ টাকার বেশি। কিছু সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে।

বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়টা মূলত গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুম। এ সময়ে প্রাণিজ আমিষ, অর্থাৎ মাছ, মাংস ও ডিমের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। তাতে সবজির ওপর চাপ বাড়ে। ফলে সবজির সরবরাহ মোটামুটি থাকলেও দাম থাকে চড়া। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে দামও কমতে শুরু করে। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে।

বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর শীতের আগাম সবজি আসতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগছে। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে চড়া দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ফুলকপি, শিমসহ শীতের আগাম কিছু সবজি আসতে শুরু করেছে। এতে এসব সবজির দামও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, অক্টোবরের শুরুতেই আগাম শীতের সবজি বাজারে আসার কথা। কিন্তু এবার বেশ দেরিতেই এসব সবজি বাজারে এসেছে।

দেশে সবজির অন্যতম উৎপাদনস্থল যশোর। যশোরের সদর উপজেলার নোঙরপুর গ্রামের কৃষক বদরুল আলম এ বছর ৪০ শতক জমিতে আগাম মুলা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ২৫ শতক জমির মুলা তিনি বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, আবহাওয়াগত কারণে এবার আগাম সবজি একটু দেরিতে চাষ হয়েছে। এ জন্য খেত থেকে সবজি তুলতেও দেরি হয়।

এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে আগাম শীতকালীন সবজি অক্টোবরের শেষে বাজারে আসা শুরু হয়েছে।আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ, অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে। এতে বাজারেও প্রভাব পড়েছে।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

কৃষিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর আগাম সবজি চাষে দেরি হওয়ার পেছনে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের টানা বৃষ্টির একটি ভূমিকা ছিল। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে হঠাৎ টানা বৃষ্টি হয়। সামনের বছরগুলোতেও এমন পরিস্থিতি আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তাঁরা।

এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে। ইমরান মাস্টার, সভাপতি, কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতি

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, দেশে ফসল উৎপাদন মূলত প্রকৃতিনির্ভর চাষাবাদ পদ্ধতিতে এবং খোলা মাঠে হয়। এ ক্ষেত্রে বৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে গত কয়েক বছরে দেশে বৃষ্টির ধরন পরিবর্তন হয়ে গেছে। কখনো খুব বেশি বৃষ্টি হয়, কখনো কম। এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে অন্যান্য সময় যেখানে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে চলে আসে, সেখানে এবার তা অক্টোবরের শেষে আসা শুরু হয়েছে। এটিই বাজারে সবজির দাম না কমার অন্যতম কারণ।

ভিন্ন দাবি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে দুই দফায় সবজির ক্ষতি হয়। এর মধ্যে গত আগস্টে প্রায় ১৮ দিনের বৃষ্টিতে ৩৫১ হেক্টর জমির এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ দিনে ১২৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, চলতি বছর শীতের আগাম সবজি আসতে উল্লেখ করার মতো দেরি হয়নি। স্থানভেদে কোথাও কয়েক দিন দেরিতে চাষ শুরু হয়েছে। তবে সেটি সার্বিক চিত্র নয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘আগাম সবজির সরবরাহ কম, এটি ব্যবসায়ীদের সাধারণ কথা। আমাদের তথ্য বলছে, শীতের আগাম সবজি ইতিমধ্যে বাজারে চলে এসেছে। দেশের সব বাজারেই এখন শীতের আগাম সবজি পাওয়া যায়। দামও সহনীয় হয়ে এসেছে। আগাম সবজি যদি কম থাকত, তাহলে দাম আরও চড়া থাকার কথা ছিল।’

বৃষ্টির কারণে সবজি আসতে দেরি হয়েছে কি না—এ প্রসঙ্গে ওবায়দুর রহমান বলেন,সারা দেশে একসঙ্গে টানা বৃষ্টি হয়নি। শুধু কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ রংপুরের কয়েকটি জেলা এবং চট্টগ্রামের কিছু জেলার নিচু এলাকায় অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়েছিল। এ ছাড়া বগুড়া, যশোর অঞ্চলে বৃষ্টির তেমন প্রভাব পড়েনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, চলতি বছর শীতকালে (রবি মৌসুম) প্রায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুমান করেছে তারা। এর মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে। যেসব জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে, সেখানে আবার সবজি চাষ হবে। গত বছর শীত মৌসুমে সব মিলিয়ে ৬ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরে সবজি চাষ হয়েছিল।

করণীয় কী

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টির অস্বাভাবিকতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে কৃষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। এ সত্যকে মেনে নিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি করা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো জরুরি।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষিতে প্রযুক্তিনির্ভর অভিযোজনের বিকল্প নেই। কম খরচে পলিথিনের শেড তৈরি করে সবজি চাষ করা সম্ভব, যা বৃষ্টি বা তাপমাত্রার পরিবর্তনে তেমন প্রভাবিত হয় না। পাতাজাতীয় শাকসবজি, মরিচ, টমেটো, বেগুন ও শসার মতো ফসল এতে সহজে উৎপাদন করা যায়। উৎপাদন স্থিতিশীল থাকলে সবজির সরবরাহ ঠিক থাকবে, কৃষকেরাও ভালো দাম পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ