প্রত্যাহারের আদেশের পর কাদের তরমুজ খেতে বললেন ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি
Published: 20th, April 2025 GMT
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুর রহমানকে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছে। গত শুক্রবার পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে তাঁকে রংপুরের রিজার্ভ ফোর্সে সংযুক্ত করে গতকাল শনিবার কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বদলির আদেশের পর আজ রোববার সকালে ওসি শহিদুর রহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘মিথ্যা গল্প সাজিয়ে লাভ নেই, উপকার আমারই হবে। প্রতিটি গল্পই এক একটা সাক্ষী। বুজলে বুজ, না বুজলে খেয়ে নে তরমুজ।’ তাঁর ওই পোস্ট ঘিরে ঠাকুরগাঁওয়ে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে।
সদর থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১১ নভেম্বর সদর থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন শহিদুর রহমান। এর কয়েক দিন পর বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। ২ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও শহরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে মতবিনিময়ের সময় কয়েকজন সাংবাদিক ওসির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। তখন বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এরপর গতকাল রাতে ওসি শহিদুর রহমানকে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়।
ওসি শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে সরব ছিলেন সাংবাদিক জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ওসি শহিদুর মামলা–বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ নিয়ে তাঁরা গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও করেছেন। এরপরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা বিষয়টি বিএনপির মহাসচিবের কাছে উপস্থাপন করেন। এসব করে তাঁরা তাঁর (শহিদুর) উপকার করেছেন, তিনি হয়তো ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সেটি বোঝাতে চেয়েছেন। বদলির পর এখন তিনি (শহিদুর) তাঁদের তরমুজ খেয়ে শান্ত থাকতে বলেছেন।
এ বিষয়ে ওসি শহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বদলির পর ফেসবুকে কেউ কেউ না বুঝেই নানা কিছু লিখছেন। তাঁদের জন্যই ওই কথাগুলো লিখেছি।’
জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ফেসবুক খুব একটা দেখি না। তাই ওসির পোস্ট নজরে আসেনি। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে কী লিখলেন, সেটা তাঁর নিজস্ব বিষয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদর থ ন ঠ ক রগ ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।