৫০ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মহাসমাবেশ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
Published: 20th, April 2025 GMT
ছয় দফা ও কুমিল্লায় হামলার প্রতিবাদে ৫০টি ইনস্টিটিউটে মহাসমাবেশ করেছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। এসব সমাবেশ থেকে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা আগামীতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
এদিকে, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি-সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো.
রাজধানী ঢাকায় রোববার দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মহাসমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। অবিলম্বে ছয় দফা মেনে নিতে তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে এ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাশফিক ইসলাম দেওয়ান সমকালকে বলেন, ‘শিগগির সারাদেশের পলিটেকনিকে থাকা আমাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করব। আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে। তার আগে আমাদের দাবি সরকার মেনে নেবে বলে বিশ্বাস করি। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
এর আগে আজ সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা ১১টার দিকে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে সমাবেশস্থলে যান।
সমাবেশে শিক্ষার্থীদের হাতে দাবি-দাওয়া সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তাতে লেখা ছিল, ‘মামা থেকে মাস্টার, মামা বাড়ির আবদার’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’ ইত্যাদি। ‘আমি কে তুমি কে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার,’ ‘তেরোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘দেশ গড়ার হাতিয়ার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার,’ ‘এক হও এক হও, পলিটেকনিক এক হও’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সমাবেশ এলাকা।
এ ছাড়া আজ খুলনা, সিলেট, পটুয়াখালী, বগুড়া, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুর থেকে সমকাল প্রতিনিধি ও ব্যুরো পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সমাবেশের খবর পাঠিয়েছেন।
কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন চার লাখেরও বেশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে– জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর, পাস করা শিক্ষার্থীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দিলে ব্যবস্থা, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় বাইরের জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ, আলাদা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন এবং টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইনস ট র ক
এছাড়াও পড়ুন:
আজ ‘মানুষ জমাতে চাওয়া’ কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুবার্ষিকী
মাত্র তিনটি কবিতার বই লিখে যিনি বাঙালির হৃদয়ে তুমুল আলোড়ন তুলে দিতে পেরেছেন তিনি হেলাল হাফিজ। আজ এই কবির মৃত্যুদিন। ২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বরে মারা যান হেলাল হাফিজ। ৭৬ বছর বয়সেও কবি ছিলেন নিঃসঙ্গ। একটি হোস্টেলে থাকতেন তিনি।
জীবনের শেষ দিকে এসে অনুভব করেছিলেন, ‘‘কেউ পাশে থাকা অনেক দরকার’’। প্রেসক্লাবেই কেটে গেছে কবির জীবনের সোনালি সময়। একটি সাক্ষাৎকারে কবি বলেছিলেন, ‘‘সারা দিন প্রেসক্লাবে কতজন দেখা করতে আসে, এভাবে দিন কেটে যায়। প্রেসক্লাব আমার সেকেন্ড হোম নেই আর, ফার্স্ট হোম’’। দিন শেষ হলে রাতে হোটেলে ফিরতেন হেলাল হাফিজ। আর তখনই নাকি একজন সঙ্গীর অভাব খুব বোধ করতেন।
আরো পড়ুন:
সিকদার আমিনুল হকের কবিতায় প্রেম ও নারী
রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা: দশক ছাড়িয়ে সমগ্রতার ঘণ্টাধ্বনি
কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। এর ১৭ বছর আগে তার কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় হেলাল হাফিজের লেখা ওই কবিতার প্রথম দুইটি লাইন ‘‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়; এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’ রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত হয়। এখনো পর্যন্ত এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশিবার ব্যবহৃত রাজনৈতিক স্লোগান।
হেলাল হাফিজ একা জীবন কাটাতে গিয়ে এবং জীবিকা জোগাতে জুয়াতে মনোযোগ দিয়েছিলেন। তার জুয়ার ভাগ্য ছিলো সুপ্রসন্ন। অনেক দিন পর্যন্ত এই জুয়াই ছিল হেলাল হাফিজের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম। শহুরে জীবনে হেলাল হাফিজ এক সময় ‘জেগেলো’র জীবনও যাপন করেছেন। তাও নাকি কবিতার কারণেই। সমাজের ধনী নারীরা টাকার বিনিময়ে কবিকে ভাড়া নিতে পারতেন। এ সব বিষয়ে হেলাল হাফিজ ছিলেন বরাবর অকপট।
তিনি এও বলেছিলেন যে, ‘‘ এই যে বোহেমিয়ান জীবন- আমার ক্ষেত্রে যা হয়েছে সেটা বাধ্যতামূলক। এইভাবে জীবনযাপনে আমি বাধ্য, আর কোনো উপায় ছিলো না আমার’’।
হেলাল হাফিজের জীবনে অনেক নারী এসেছেন। তাদের কেউ কেউ কবিতায় স্থান করে নিয়েছেন। কিন্তু হেলাল হাফিজ আমৃত্যু মার্তৃস্নেহের পিপাসায় কাতর ছিলেন। শৈশবে মাকে হারিয়েছিলেন, মায়ের স্মৃতিও মনে ছিলো না হেলাল হাফিজের। এই ছিলো তার একমাত্র অপ্রাপ্তি। জীবনে টাকা পয়সা জমানোর ইচ্ছা কোনোদিনই ছিলো না তার, কিন্তু মানুষ জমাতে চেয়েছিলেন কবি।
হেলাল হাফিজের কবি হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো মাতৃহীনতার বেদনা। সেই বেদনার প্রকাশই কবিকে বাংলা সাহিত্যের জগতে সমাদৃত করেছে। কবির কবিতায় অনেকে খুঁজে নিয়েছেন একান্ত আশ্রয়।
ঢাকা/লিপি