রিসার্চ পেপার বা গবেষণাপত্র হলো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপরে করা বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। কোনো বিষয়ে নতুনত্ব আনার জন্য গবেষণা করা হয়। বাস্তব জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান করাই হলো গবেষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য। থিসিস পেপার ও রিসার্চ পেপারের মধ্যে পার্থক্য হলো রিসার্চ পেপার নিজ উদ্যোগে করা হয়। এর জন্য কোনো সুপারভাইজার বা কমিটির দরকার নেই।
স্নাতক পর্যায়েই রিসার্চ পেপারের কাজ শুরু করে দেওয়া উচিত। কারণ, বিদেশে স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষার জন্য গুণগত গবেষণাপত্রের গুরুত্ব অনেক। আর কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করলে আপনার গবেষণাপত্র লেখার কাজ আরও সহজ হয়ে যায়। আপনি যদি কোনো গবেষণাপত্র লিখতে চান, তাহলে এর জন্য আপনার কিছু টুলস লাগবেই
সঠিক রিসার্চ পেপার খুঁজে পাওয়া অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। এ টুলগুলো সে কাজ সহজ করে।
Semantic Scholar
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সভিত্তিক একটি প্ল্যাটফর্ম, যা ২০০ মিলিয়নের বেশি রিসার্চ পেপারে অ্যাকসেস দেয়। এখানে দ্রুত সার্চ করে, পেপারের সামারি পড়ে রেফারেন্সসহ সংগ্রহ করতে পারবেন।
Smart Search
বিভিন্ন ধরনের ডেটাবেস স্ক্যান করে আপনার গবেষণার বিষয় অনুযায়ী সেরা কনটেন্ট সাজেস্ট করে।
Insight dev
মেডিকেল গবেষণায় প্রয়োজনীয় হাইপোথিসিস, সামারি ও এক্সপেরিমেন্টাল ডিজাইন সাজাতে সাহায্য করে।
Consensus / R Discovery / Scinapse যদি কোনো নির্দিষ্ট প্রশ্ন বা গবেষণার বিষয়ে তথ্য চান, তাহলে এ টুলগুলো AI ব্যবহার করে সরাসরি পেপার থেকে উত্তর দেয়।
লিটারেচার ম্যাপিং (Literature Mapping)
গবেষণার তথ্য একে অপরের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত, তা চিত্রায়ণের জন্য দরকার হয় লিটারেচার ম্যাপিং।
Research Rabbit
আপনি যে পেপারটি পড়ছেন, সেটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরও পেপার, লেখক বা বিষয়গুলোকে চেইনের মতো দেখায়।
Inciteful
বিভিন্ন পেপার কীভাবে একে অপরকে উদ্ধৃত বা সম্পর্কযুক্ত করেছে, তা তুলনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করে।
Open Knowledge Map
একটি টপিক দিলে সেটার সঙ্গে সম্পর্কিত পুরো জ্ঞানের মানচিত্র (knowledge map) তৈরি করে দেয়।
VOS Viewer
বিখ্যাত সাইটেশন সফটওয়্যার, যা বিভিন্ন গবেষণার মধ্যকার সাইক্রোমেট্রিক সংযোগ দেখায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
এক ভাই গুগল, আরেক ভাই মেটায়
চাটগাঁইয়া পোয়া, মেডিত ফইরলে লোয়া। এ কথা আবারও প্রমাণ করলেন চট্টগ্রামের দুই সহোদর ইয়ামিন ইকবাল ও মোহাইমিন ইকবাল। চট্টগ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই দুই তরুণ তাঁদের মেধা, অধ্যয়ন ও প্রচেষ্টায় এখন দুই বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। বিশ্বের লাখ লাখ তরুণ যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করার স্বপ্ন দেখে, সে রকম দুটি প্রতিষ্ঠানে ইয়ামিন ও মোহাইমিন কাজ করার সুযোগ পেয়ে প্রমাণ করেছেন বিশ্বমানের প্রযুক্তি–দুনিয়ায় জায়গা করে নেওয়া কেবল স্বপ্ন নয়, বাস্তবও হতে পারে। বড় ভাই ইয়ামিন এখন গুগলে সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, আর ছোট ভাই মোহাইমিন এ বছর ফেব্রুয়ারিতে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের সেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠান মেটায়। মেটার অধীন চারটি প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও থ্রেডে প্রতি মাসে ৪০০ কোটি ব্যবহারকারী নিয়মিত সক্রিয় থাকে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই নেট–দুনিয়ায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশের তরুণদের এক বিরাট অনুপ্রেরণার উৎসে পরিণত হলেন দুই ভাই।
চট্টগ্রাম নগরের দক্ষিণ পাহাড়তলীর চৌধুরীহাট এলাকার সাধারণ পরিবারে বেড়ে উঠেছেন দুই ভাই। শুরু থেকেই তাঁরা ভাবতে শুরু করেছেন, পড়ালেখা মানে শুধু স্কুল–কলেজে যাওয়া–আসা নয়, প্রতিদিনের পাঠাভ্যাস থেকে যে জ্ঞান অর্জন করা যায়, তাকে কাজে লাগাতে হবে। কিছু একটা করতে হবে। অনেক বড় কিছু করার স্বপ্ন তাঁদের সব সময় ছিল। ইয়ামিন ইকবাল পড়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট), বিভাগ—কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। বিশ্ববিদ্যালয়–জীবনের শুরু থেকেই তাঁর আগ্রহ ছিল প্রোগ্রামিং ও সমস্যা সমাধানে। সেই আগ্রহই তাঁকে নিয়ে যায় এক প্রতিযোগিতামূলক পথে, যার শেষপ্রান্তে অপেক্ষা করছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি কোম্পানি গুগল। ২০২০ সালে ইয়ামিন গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন। এটি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন দরজা খুলে দিয়েছিল—সেই একই পথে হাঁটলেন ছোট ভাই মোহাইমেন।
মোহাইমিন ইকবাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করেছেন ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে। বড় ভাইয়ের সাফল্য তাঁকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। বড় ভাইয়ের দেখাদেখি তাঁরও আগ্রহ জন্মে প্রোগ্রামিংয়ের ওপর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন এবং নিজের দক্ষতা বাড়তে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কোনো পুরস্কার পাব কি পাব না, জিতব কি না—এসব নিয়ে মোটেও ভাবতেন না। তিনি শুধু চেষ্টা করে গেছেন। এভাবে নিয়মিত সাধনার ভেতর দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। কিন্তু স্নাতক পাস করে বসে থাকার পাত্র নন তিনি। নিজ প্রচেষ্টায় উচ্চশিক্ষার চেষ্টা করতে থাকেন। অবশেষ যুক্তরাষ্ট্রের সান হোসে স্টেট ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান। বিদেশের মাটিতে গিয়ে অচেনা পরিবেশে শুরু করলেন এক নতুন জীবন। এক নতুন সংগ্রাম। শিক্ষার পাশাপাশি তাঁকে করতে হয়েছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। করতে হয়েছে চাকরির সন্ধান। সে এক কঠিন সময়। চাকরি পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। কারণ, সে সময় বিশ্বজুড়ে টেক কোম্পানিগুলো ছাঁটাই আর নিয়োগ স্থগিত করছিল।
মোহাইমিন বলেন, ‘এই কঠিন মার্কেটে ইন্টার্নশিপ পাওয়া খুবই টাফ ছিল। টেক কোম্পানিগুলো তখন ছাঁটাই করছিল, হায়ারিং প্রায় বন্ধ। হাজার হাজার আবেদনকারীর ভিড়ে মে ২০২৪-এ স্নোফ্লেক এ ইন্টার্নশিপ পেয়ে গেলাম। এটা আমার জন্য বিশাল জয় ছিল।’ সেই ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। চৌকস সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ শেখার সুযোগ পেলেন আর সময়কে কাজে লাগিয়ে পরিশ্রমের বিপরীতে কীভাবে কিছু অর্জন করতে হয় তা শিখলেন। এভাবে ইন্টার্নশিপও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কোম্পানিগুলো নিয়োগ বন্ধ রাখায় কোথাও থেকে পূর্ণকালীন চাকরির সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তবে হতোদ্যম হয়ে পড়েননি। আর যাই হোক নিজের জীবনবৃত্তান্তে স্নোফ্লেকের নামটা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটা তাঁর অনেক বড় সঞ্চয়। আশায় দিন কাটাচ্ছিলেন। আর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন বিভিন্ন কোম্পানিতে। একের পর এক বড় কোম্পানিগুলো তাঁর প্রোফাইলের দিকে নজর দিতে শুরু করে। এরপর এল সেই শুভক্ষণ। অক্টোবর ২০২৪-এ মাইক্রোসফট এবং নভেম্বরেই মেটা থেকে আসে পূর্ণকালীন চাকরির প্রস্তাব। অবশেষে এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন মেটায়।
মোহাইমিন তাঁর ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘বিশ্বের দুই টেক জায়ান্ট মেটা ও মাইক্রোসফটে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পেয়েছি। আমি মেটার অফার গ্রহণ করেছি। আমার আশা একদিন বাংলাদেশের নিজস্ব টেক জায়ান্ট থাকবে, যা সারা বিশ্ব ব্যবহার করবে।’ মোহাইমিনের সাফল্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সানাউল্লাহ চৌধুরী সে সময় মিডিয়ায় নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘মোহাইমিন শুরু থেকেই পরিশ্রমী ও মনোযোগী ছাত্র ছিল। মেটা ও মাইক্রোসফটে সুযোগ পাওয়া শুধু তার নয়, আমাদের দেশের জন্যও গর্বের বিষয়।’ ইয়ামিন ও মোহাইমিন কি শুধু দুটি চাকরি পেয়েছেন? না। এটা দুই তরুণের পরিশ্রম, দৃঢ়তা ও কাজের প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন। পরিবার তাঁদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে। মোহাইমিন বলেন, ‘আমাদের যা কিছু অর্জন তা হয়েছে আমার মায়ের অনুপ্রেরণায়।’
মায়ের এই বিশ্বাসই দুই সন্তানকে সাফল্যের এমন শিখরে নিয়ে গেছে। অগ্রজ ইয়ামিন সব সময় ছোট ভাইকে পথ দেখিয়েছেন। একসঙ্গে প্রোগ্রামিং নিয়ে আলোচনা, সমস্যা সমাধান ও কোড রিভিউ করা ছিল তাঁদের নিত্যদিনের কাজ। ইয়ামিন বর্তমানে গুগলে সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন, আর তাঁর অভিজ্ঞতাগুলো ছোট ভাইকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
এই দুই ভাইয়ের গল্প সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের প্রযুক্তি-প্রজন্মের গল্প। প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চাকরির সাক্ষাৎকার—সবকিছুই তাঁদের জন্য ছিল শেখার সুযোগ। তাঁরা প্রমাণ করেছেন, দেশের বাইরে গিয়ে বড় কিছু করার আগে নিজের ভেতরের সক্ষমতাকে জাগানোই আসল বিষয়।
মোহাইমিন তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘যারা গুগল, মেটা বা মাইক্রোসফটে কাজ করতে চায়, তাদের প্রোগ্রামিং মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অন্য বিভাগ থেকেও যদি প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতা থাকে, তবু সম্ভব।’
ইয়ামিন আর মোহাইমিনের সাফল্য বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে নতুন বিশ্বাস জাগিয়েছে। তাঁরা জানিয়ে দিলেন—সাফল্য কেবল বিদেশি নয়, দেশীয় মেধা দিয়েও সম্ভব। তাঁরা দুজনই বিশ্বাস করেন, একদিন বাংলাদেশের নিজস্ব প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নেবে।