বন্দরের চাঞ্চল্যকর সোহান হত্যা মামলার প্রধান আসামি  কাজল (৫৫)'কে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১১, সিপিএসসি কোম্পানি, আদমজীনগরে একটি অভিযানিক দল। গ্রেপ্তারকৃত কাজল বন্দর থানার সালেহনগর এলাকার মৃত সামছুদ্দিনের ছেলে।

রোববার (২০ এপ্রিল) দিবাগত রাত পৌনে ১ টায় মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর থানার মুন্সিগঞ্জ বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব-১১ তথ্য সূত্রে জানাগেছে, বন্দরের চাঞ্চল্যকর সোহান হত্যা মামলার তদন্তকালে নিজস্ব গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মুন্সিগঞ্জ বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার  প্রধান আসামী কাজলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

মামলার তথ্যসূত্রে আরো জানাগেছে, গত ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ইং তারিখ রাত সাড়ে ৮ টায় পরিকল্পিতভাবে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সালেহনগর এলাকার হীরা মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া দিনমজুর আব্দুস সালাম মিয়ার ছেলে সোহান (১৫)'কে কাজলসহ তার ছেলে রাজ এবং ২৫-৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল ধারালো অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নাসিক ২১নং ওয়ার্ডের রূপালী আবাসিক এলাকার মোস্তাক মিয়ার ২য় তলা বিল্ডিংয়ের নিচতলায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সোহান বন্দরে সড়কে যানজট নিরসনকর্মী হিসেবে কাজ করত। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে ১৫ অক্টোবর রাতে বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: হত য ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা

দেশের নারী ফুটবল দলের একের পর এক সাফল্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের স্বপ্ন জুগিয়ে যাচ্ছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায়। সেখানকার ছোট্ট গ্রাম রাঙাটুঙ্গীর মেয়েদের অনুপ্রেরণার নাম এখন ফুটবল। গ্রামটিকে পরিচিত করে তুলছে একদল অদম্য নারী ফুটবলার। আর তাদের এগিয়ে নিতে আছেন কোচ তাজুল ইসলাম। রোদ, বৃষ্টি, সামাজিক কটূক্তি—সবকিছু উপেক্ষা করে গ্রামের মাঠে প্রতিদিন বিকেলের নিয়মিত অনুশীলনে যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। 

২০১৪ সালে স্থানীয় টুর্নামেন্টে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কিছু মেয়ের ফুটবলপ্রেম দেখে তাজুল ইসলাম গড়ে তোলেন ‘রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমি’। সে সময় তাঁর এই উদ্যোগের জন্য তিরস্কার ও সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি; কিন্তু তাজুল ইসলাম, কোচ সুগা মুর্মু ও সাবেক স্থানীয় ফুটবলার জয়নুলের অবিরাম প্রচেষ্টায় সেই তিরস্কার ও সমালোচনা আজ গর্বে পরিণত হয়েছে।

মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এই একাডেমি থেকে উঠে আসেন মুন্নি আক্তার, সোহাগী, স্বপ্না রানী, সাগরিকা, কোহাতির মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়। বর্তমানে এই একাডেমি থেকে ২৩ জনের বেশি তরুণী জাতীয় দলসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ও লিগে খেলছেন। তাঁদের এই সাফল্য দেখে এখন গ্রামের মানুষ, এমনকি একসময়কার সমালোচকেরাও তাঁদের নিয়ে গর্ব করেন। রাঙাটুঙ্গীর মানুষের কাছে ফুটবল এখন শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা গ্রামের মেয়েদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।

জাতীয় দলের খেলোয়াড় কোহাতি কিসকু জানান, এ অবস্থানে আসা সহজ ছিল না। মাঠে আসার পথে তাঁদের অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে; কিন্তু কোচ ও প্রশিক্ষকদের উৎসাহ এবং নিজেদের দৃঢ় মনোবল তাঁদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁদের এই সাফল্য প্রমাণ করে, মেধা ও ইচ্ছাশক্তি সব ধরনের সামাজিক বাধা ভেঙে দিতে পারে।

তবে এই সাফল্যের পেছনেও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। তাঁদের অনুশীলনের মাঠটি এবড়োখেবড়ো, অনুশীলনের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম বা পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। অনেক খেলোয়াড়ের পরিবারের তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন। তাজুল ইসলাম নিজের অর্থায়নে একাডেমি চালালেও একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া এ আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখা কঠিন।

রাঙাটুঙ্গীর ফুটবল আন্দোলন প্রমাণ করে, একটি স্বপ্ন আর কিছু মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অপরিহার্য। মাঠের সংস্কার, খেলার সরঞ্জাম এবং খেলোয়াড়দের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি। আমাদের সবার প্রত্যাশা, রাঙাটুঙ্গীর মেয়েরা একদিন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেশের সম্মান বাড়াবে। ক্লাবটির পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে, সেটিই কাম্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ