অষ্টগ্রামের বিস্তীর্ণ হাওরের বুকে ধান কাটার উৎসব
Published: 23rd, April 2025 GMT
সময়টা শনিবার দুপুর। কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের নোয়াগাঁও গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠে ২২ জন ধাওয়াল সবুজ রঙের জার্সি গায়ে বোরো ধান কাটছিলেন। তাঁদের কেউ আঁটি বেঁধে মাথায় তুলে দিচ্ছিলেন, কেউ সেগুলো মাথায় নিয়ে কৃষকের বাড়ির উঠানে পৌঁছে দিচ্ছিলেন। কড়া রোদে শরীরে বেশ ঘাম হচ্ছিল। তবে এর মধ্যেই কারও কারও কণ্ঠে ঝরছিল গানের সুর।
সোনালি ধানের সঙ্গে রঙিন জার্সি—এ দুইয়ে মিলে হাওরের ফসলি মাঠে এক অন্য রকম সৌন্দর্য। ২২ সদস্যের দলটির প্রধান ছাহের উদ্দিন। রঙিন জার্সি গায়ে ধান কাটার কারণ জানান ছাহের। তিনি বলেন, ‘হাওরে ফসল হয় বছরে একবার। বোরো ধান। এরপর সারা বছর অপেক্ষা। ধান কাটা শুরু মানে একটা মাস ভালা থাকা। এবার ভালা ধান হইছে। ভালা ধান হইলে কৃষক খুশি। আবার আমরারও লাভ। শুধু কৃষক আনন্দ করব ক্যান? কষ্টের কাজেও মনে আনন্দ ধইরা রাখার লাইগা জার্সি কিনছি, নিজেদের টেহায়।’
ধান কাটা দলের সদস্যরা মনে করেন তাঁদের পরিহিত জার্সি সবাইকে জোটবদ্ধ রাখার প্রতীক। এটি মনে যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি পরস্পরের সম্পর্ককেও মজবুত করে। সদস্য অলি আহমেদ বললেন, ‘ভাই ভাই সম্পর্ক বানায় এই জার্সি।’
কিশোরগঞ্জের হাওরে এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার হেক্টরপ্রতি অন্তত ১০ মণ ধান বেশি হচ্ছে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের। অষ্টগ্রামের সব হাওরের হিসাব একই। চিটা হয়নি। এখন পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান ৮০ ভাগ পাকা হয়ে গেলে কেটে ফেলার কৃষি বিভাগের পরামর্শের পর কাটায় গতি এসেছে। এই অবস্থায় যেদিকে চোখ যায়, কেবল সোনালি ধানের শিষ দোল খাওয়ার দৃশ্য।
আঁটি বেঁধে ধান মাথায় করে কৃষকের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন ধাওয়ালরা। শনিবার অষ্টগ্রামের বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকায়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।