রাঙামাটি রাজবন বিহারে দুদিনের কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু
Published: 30th, October 2025 GMT
রাঙামাটির রাজবন বিহারে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে দুদিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
উদ্বোধনের পর চরকায় সুতা কেটে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর (পরার কাপড়) তৈরি কার্যক্রমের সূচনা করেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা মঞ্জুলিকা খীসা। এটি রাজবন বিহারের ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
এর আগে, বেইন ঘরে পঞ্চশীল প্রদান করেন প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এ সময় পূণ্যার্থীদের সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ।
রাজবন বিহারের কার্যকরী কমিটি সূত্রে জানা গেছে, রাজবন বিহারের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রায় ২০০টি বেইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে হাজারো নারী-পুরুষ চীবর প্রস্তুত কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। সারারাত ব্যাপী চীবর তৈরির কার্যক্রম চলবে।
বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর তৈরির প্রচলন করেছিলেন। তিন মাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার মধ্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর দান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বনভান্তের অনুপ্রেরণায় ১৯৭৬ সাল থেকে বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাঙামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।
রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা বলেন, ‘‘বৌদ্ধ যুগের আদলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চরকায় তুলা থেকে সুতা বের করে তাঁতে বুনে কাপড় তৈরি করা হয়। এই কাপড় বিশেষ কায়দায় সেলাই করে চীবর তৈরি করা হয়। তারপর তা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়। দান বছরের যেকোনো সময় করা যায়। কিন্তু, কঠিন চীবরদান করতে হয় আশ্বিনী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার মধ্যে।’’
কঠিন চীবরদান উৎসবকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা রাজবন বিহারে এসেছেন। তারা সঙ্গে নিয়ে আসছেন কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি কৃত্রিম গাছে ঝোলানো নগদ টাকা, বই-খাতা, সুঁই-সুতাসহ নানা দানসামগ্রী। এটিকে তারা ‘কল্প তরু’ বলে ডাকে। অনেকে দল বেঁধে বাদ্য বাজিয়ে, বৌদ্ধধর্মীয় সংগীত গেয়ে বিহার প্রাঙ্গণে এসেছেন। রাতব্যাপী বুদ্ধ নাটক, পালা কীর্তন নানান অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয় বিহার প্রাঙ্গণে। দুদিনের অনুষ্ঠানে লাখো পূণ্যার্থী অংশগ্রহণ করবেন। এই উৎসব ঘিরে বিহার প্রাঙ্গণ জুড়ে গ্রামীণ মেলা বসেছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে বৌদ্ধ সাধকদের চীবর দান এবং সন্ধ্যায় হাজার বাতি উৎসর্গের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হবে।
ঢাকা/শংকর/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব হ র প র ঙ গণ র জবন ব হ র র অন ষ ঠ ন দ ন কর
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরায় পূজা উপলক্ষে ৯০ ফুটের তোরণ, নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের
মাগুরায় শতবর্ষী কাত্যায়নী পূজা উপলক্ষে শহরের নতুন বাজার সেতুর ওপর নির্মিত হয়েছে প্রায় ৯০ ফুট উচ্চতার একটি বর্ণিল তোরণ, যা নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। আয়োজকদের দাবি, জেলায় সাধারণত এত উঁচু তোরণ চোখে পড়ে না। তোরণটির নির্মাণে কাজ করেছেন ৩০ জনের বেশি শিল্পী ও শ্রমিক। গতকাল সোমবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের এই উৎসব।
মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকার নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম পূজা উদ্যাপন কমিটির পক্ষ থেকে এই তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা হলেও মাগুরায় জাঁকজমকভাবে কাত্যায়নী পূজাই অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবছর শারদীয় দুর্গাপূজার এক মাস পরই মাগুরায় কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের সমাপনী হবে আগামী শুক্রবার।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, কাত্যায়নী পূজার সময় প্রতিবছর উৎসবের শহরে পরিণত হয় মাগুরা। এবারও গোটা শহরকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এবার পূজামণ্ডপ এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন তোরণ, প্যান্ডেল ও চোখধাঁধানো আলোকসজ্জা। দিনে ও রাতে পূজা মণ্ডপগুলোয় হাজারো মানুষের ঢল নামে। পূজামণ্ডপগুলো তৈরি করা হয়েছে প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্থাপত্যকলার আদলে। কয়েক শ পটুয়াশিল্পী প্রায় এক মাস পরিশ্রম করে এসব প্রতিমা, মণ্ডপ ও পূজার আনুষঙ্গিক সাজসজ্জা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার জেলায় ৮৭টি মণ্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে পৌর এলাকায় ২০টি, সদর উপজেলার অন্য এলাকায় ২০টি, শালিখায় ২৫টি, মহম্মদপুরে ১২টি এবং শ্রীপুরে ১০টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে পৌর এলাকার মণ্ডপগুলো ঘিরেই দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকে। পূজাকে ঘিরে প্রতিটি মণ্ডপে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
গতকাল সকালে নতুন বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দূর থেকে চোখ আটকে যাচ্ছে বর্ণিল এই তোরণে। মাথা উঁচু করে সেটি দেখার চেষ্টা করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী।
আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তোরণটির উচ্চতা প্রায় ৯০ ফুট ও প্রস্থ ৩০ ফুট। এটি বাঁশ, কাঠ, কর্কশিট ও নানা রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তোরণটির কাঠামোয় ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ৫৫০টি বাঁশ। খুলনার শিল্পী নিতাই বিশ্বাস এটির নকশা করেছেন এবং নির্মাণ করেছে স্থানীয় একটি ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান।
ডেকোরেটরটির স্বত্বাধিকারী তরুণ ভৌমিক বলেন, ‘কাত্যায়ানী পূজা মাগুরার বিশেষ একটি উৎসব। এখানে আমরা প্রতিবছর নতুন কিছু প্রদর্শনের চেষ্টা করি। এর আগে একই জায়গায় ৭০ থেকে ৭৫ ফুট উচ্চতার তোরণ নির্মাণ করেছিলাম। তবে এবার আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।’
শিল্পী নিতাই বিশ্বাস বলেন, তোরণটির বিশেষত্বই হচ্ছে এর উচ্চতা। এ ধরনের তোরণ দেশের কোনো প্রান্তেই তেমন একটা চোখে পড়ে না। জনবহুল একটি সেতুর ওপর এটির নির্মাণ করাটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেক দূর থেকে এটি চোখে পড়ছে। ৩০ জনের বেশি শিল্পী ও শ্রমিক প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে এটি তৈরি করেছেন।
নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাপাই শিকদার বলেন, ‘বড় আকারের তোরণ আমাদের কাত্যায়নী পূজার ঐতিহ্য। গত ১০ বছর লাইট বোর্ডের তোরণ নির্মাণ করা হতো। এবার আমরা আবার পুরোনো ঐতিহ্যে ফিরে গেছি। এবার এই তোরণ নির্মাণে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।’