রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয়নি এখনও। এ ঘটনার তিনটি মামলার একটি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে আছে। সাক্ষী না আসার কারণে অন্য দুটির বিচার চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগও উঠছে।

এদিকে মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানা ছাড়া অন্য সবাই জামিনে মুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির বিচার নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। হাজারো ভুক্তভোগী শ্রমিক ও হতাহতের পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভারে আট তলাবিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে পড়লে ১ হাজার ১৩৬ পোশাক শ্রমিক নিহত হন। পঙ্গুত্ববরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন। জীবিত উদ্ধার করা হয় প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিককে। ঘটনার পরের দিন অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। দুর্নীতি দমন কমিশন ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে মামলা করে। হত্যা মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন কেবল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। অন্যদের মধ্যে সাতজন পলাতক এবং ৩১ জন জামিনে আছেন। 

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল হক আমিন বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে ভয়াবহ এই ট্র্যাজেডির বিচার আজও শেষ হয়নি। বিচার বিভাগেরও দায় রয়েছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।’ 

দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেছেন সাভারের শিউলি খানম। এক যুগেও বিচার না হওয়ায় তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমার ডান পাশ অবশ হয়ে গেছে। ভারতে গিয়ে তিনবার চিকিৎসা নিয়েছি, চার মাস পর আবার যেতে হবে।’ 

প্রায় সাত বছর আগে শিউলির স্বামী মারা গেছেন। এখন তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সুচিকিৎসা প্রত্যাশা করেন তিনি।

হত্যা মামলার পরিস্থিতি

হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভবন মালিক, গার্মেন্ট মালিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের ৪১ জনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। 

১৫ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন আগামী ১৯ মে।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো.

আবুল কালাম খান সমকালকে বলেন, ‘মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য এখনও নেওয়া হয়নি। বিচার শেষ করতে হলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।’

তিনি জানান, সাক্ষীরা হাজির না হলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে। এতে সাক্ষী অনুপস্থিতির সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে।

ইমারত আইনে মামলায় স্থগিতাদেশ

ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে করা মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জুন ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। তবে চার্জ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। এই স্থগিতাদেশ এখনও প্রত্যাহার না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইশতিয়াক হোসেন বলেন, ‘উচ্চ আদালত ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিগগির অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হবে।’

ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলায়ও ধীরগতি

রানা প্লাজা ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ জিয়াউর রহমানের আদালতে। ২০১৭ সালের ২১ মে সোহেল রানাসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন (জাহাঙ্গীর) সমকালকে বলেন, ‘গত ২৪ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী উপস্থিত হননি। আগামী ১২ মে পরবর্তী শুনানি হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স ক ষ য গ রহণ র ষ ট রপক ষ ভবন ন র ম ণ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত

ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বেতনের পেশার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পাইলট। ফ্রান্সে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ মাসিক বেতনের পেশা। জার্মানিতে জটিল ভূমিকার পাইলটেরা মাসে ২৮ হাজার ৯৬ ইউরো উপার্জন করেন। যুক্তরাজ্যে পূর্ণকালীন পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা মধ্যম আয়ে পঞ্চম স্থানে। ডেনমার্কে ২০২৩ সালে মাসিক বেতন ১৩ হাজার ৫২৩ ইউরো, দেশটির হিসাবে সপ্তম সর্বোচ্চ বেতন।

অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতনের বৈচিত্র্য

পাইলটদের বেতন দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। যুক্তরাজ্যে বেতন শুরু হয় বছরে ৫৪ হাজার ২৮৩ ইউরো (৪৭,০০০ পাউন্ড) থেকে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য এটি প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৩ ইউরো (১ ইউরো সমান ১৪১ টাকা ৭৭ পয়সা, ২২ অক্টোবর ২০২৫ হিসাবে) পর্যন্ত হতে পারে, জানিয়েছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্যারিয়ার্স সার্ভিস।

ইআরআই অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতার পাইলটরা এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞ পাইলটের চেয়ে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি আয় করেন। অর্থাৎ অভিজ্ঞ পাইলটরা প্রায় তিন গুণ বেশি উপার্জন করেন।

আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সিংয়ে নামার আগে এ পাঁচটি বিষয় ভাবুন১৯ অক্টোবর ২০২৫দেশভিত্তিক তথ্য

যুক্তরাজ্য

২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এএনএসের তথ্যানুসারে, পূর্ণকালীন ‘এয়ারক্রাফট পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার’-এর বার্ষিক আয় প্রায় ৯৫ হাজার ২৪০ ইউরো (৮০,৪১৪)। ইআরআইয়ের মতে, গড় বার্ষিক বেতন ৯০ হাজার ২৫৩ ইউরো (৭৮,১৪৬ পাউন্ড), লন্ডনের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৬২ ইউরো (১০০,০৬০ পাউন্ড)।

জার্মানি

জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের তথ্যমতে, গড় মাসিক বেতন ১২ হাজার ৫৬৬ ইউরো (বার্ষিক ১,৫০,৭৯২ ইউরো)। মধ্যম আয় ১০ হাজার ২০৭ ইউরো (বার্ষিক ১,২২,৪৮৪ ইউরো), অভিজ্ঞ ও বিশেষায়িত পাইলটদের ক্ষেত্রে তা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭২ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। ইআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটের গড় বেতন ৭৩,৭৮৫ ইউরো, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটদের জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৭ ইউরো।

ফ্রান্স

INSEE জানায়, ‘সিভিল এভিয়েশন টেকনিক্যাল ও কমার্শিয়াল ফ্লাইট অফিসার’দের গড় মাসিক বেতন ৯ হাজার ৩০০ ইউরো (বার্ষিক ১,১১,৬০০ ইউরো)। ERI অনুসারে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য গড় বেতন ১ লাখ ৯ হাজার ২৯২ ইউরো।

ছবি: এমিরেটসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ