গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশকে ৮৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে গতকাল দুটি চুক্তি সই করেছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বে টার্মিনাল গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা ও জাতীয় সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণে সহায়তা করার লক্ষ্যে দুটি চুক্তি সই করেছে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ। মোট ৮৫ কোটি ডলারের দুটি ঋণ চুক্তি সই হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশবিষয়ক অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, টেকসই উন্নয়নের ধারায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশে মান শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ করে প্রতিবছর শ্রমবাজারে যে প্রায় ২০ লাখ তরুণ প্রবেশ করছেন, তাঁদের জন্য এই শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি অত্যাবশ্যক। এ ছাড়া এই ঋণের অংশ হিসেবে বাণিজ্য ও রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে উত্তরণে এবং চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করা হবে। তিনি মনে করেন, এই পদক্ষেপ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (৬৫ কোটি ডলার) সামুদ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা ও কার্যকারিতা বাড়বে। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচ ও সময় কমিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এই প্রকল্প। প্রকল্পে থাকছে ছয় কিলোমিটার জলবায়ু-সহিষ্ণু ঢেউনিরোধক এবং বন্দরে প্রবেশপথের মতো অপরিহার্য অবকাঠামো। গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি হলে বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। তাতে বন্দরে জাহাজ প্রবেশ ও বেরোনোর সময় কমবে। পরিণামে দৈনিক এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ ডলার সাশ্রয় হবে।

এই বে টার্মিনালে বাংলাদেশের মোট ৩৬ শতাংশ কনটেইনার ওঠা–নামা করা হবে। এতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত হতে পারবেন।

অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এই প্রকল্পে নগদ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি ৪৫ লাখ মানুষের জীবিকার উন্নয়নে সহায়তা করা হবে। এর মূল লক্ষ্য থাকবে তরুণ জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে আক্রান্ত অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষেরা। নগদ সহায়তার সঙ্গে এই প্রকল্পে দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রায় ২৫ লাখ মানুষের কর্মযোগ্যতা ও আয় বৃদ্ধির সক্ষমতা তৈরি করা হবে এই প্রকল্পে।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দেশের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে দৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারি আছে। এই প্রকল্পগুলো দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাত মোকাবিলা করা এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের নিশ্চিত অপরিহার্য ভূমিকা পালন করবে।

চুক্তিপত্রে বাংলাদেশের পক্ষে শাহরিয়ার সিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে গেইল মার্টিন স্বাক্ষর করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই প রকল প ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ