বাজারে বেশির ভাগ সবজির দাম ৭০ টাকার ওপরে
Published: 24th, April 2025 GMT
এ বছর শীত মৌসুমে সবজির দাম কম ছিল। কোনোটির দাম এত তলানিতে নেমেছিল যে, কৃষকের উৎপাদন খরচ ওঠেনি। বাড়তি খরচের কারণে কোথাও কোথাও কৃষক ক্ষেত থেকে সবজি তোলেননি। শীত মৌসুমের সবজি নিয়ে গত তিন-চার মাস সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে যে স্বস্তি ছিল, তা আর নেই। বাজারে এখন বেশির ভাগ সবজির দাম ৭০ টাকার ওপরে। পাশাপাশি বাড়তির তালিকায় রয়েছে পেঁয়াজ ও ডিম।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কারওয়ান বাজার ও নাখালপাড়া সমিতি বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারে এখন প্রতি কেজি পটোল, ঢ্যাঁড়শ, শালগম, ঝিঙা, চিচিঙ্গার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। উচ্ছে ও বেগুন কিনতে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এর চেয়ে বেশি দর দেখা গেছে বরবটি ও কাঁকরোলের। গ্রীষ্মকালীন এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। শজিনার দর সব সময় কিছুটা বেশি থাকে। এর কেজি দেখা গেছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। গাজর ও টমেটোর কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। দাম বেড়েছে শসারও। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। আলুর দর এখনও কম। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকায়। সবজির দাম বাড়লেও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে। তখন বেশির ভাগ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে ছিল।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হয়ে এসেছে। এখন গ্রীষ্মকালীন কিছু সবজি আসা শুরু হয়েছে। এগুলোর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি। দামও শুরুর দিকে একটু বেশি থাকে। তাদের ভাষ্য, এবার শীত মৌসুমে সবজির দাম অনেক কম ছিল। এতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলে এখন তারা কিছুটা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা দুলাল আহমেদ সমকালকে বলেন, শীতের সবজি শেষ। এখন যেসব সবজি আসছে, সেগুলোর দাম সব সময় বেশি থাকে। তাছাড়া এবার কৃষক দাম পায়নি। অনেকে দাম না পেয়ে সবজি রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। তারা এখন কিছুটা বাড়তি দাম নেওয়ার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, দর কমে যাওয়ায় এ বছর অনেক কৃষকের লোকসান হয়েছে।
এখন যেসব সবজি আসছে, সেগুলোর উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেশি। সে জন্য কৃষক দাম একটু বেশি নিচ্ছেন।
এক সপ্তাহ ধরে চড়া পেঁয়াজের বাজার। এ সময় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের প্রতি কেজি
পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লায় এ দাম আরও বেশি। এ ছাড়া হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের কেজি কেনা যাচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়।
রোজার শুরু থেকে কমতে শুরু করে ডিমের দাম। এক পর্যায়ে ফার্মের ডিমের ডজন ১১৫ টাকায় নেমে এসেছিল। তবে তিন-চার দিন ধরে বাড়ছে। বর্তমানে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম (বাদামি রং) বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়।
গত সপ্তাহে প্রতি ডজন কেনা গেছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়।
রোজার শেষদিকে এসে মুরগির দাম বেড়েছিল। তবে এখন অনেকটা কম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও সোনালি জাতের মুরগি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
কয়েকদিন ধরে বাজারে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিলেন আমদানিকারকরা। গত ১৫ এপ্রিল বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করা হয়। দাম বাড়লেও বাজারে চাহিদার তুলনায় বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা কম দেখা গেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ রদর সবজ র দ ম ৭০ থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।