Samakal:
2025-06-15@11:48:00 GMT

কত কিছু মনে আসে সাকুরা!

Published: 24th, April 2025 GMT

কত কিছু মনে আসে সাকুরা!

“সামাজামা নো কোতো অমোহিদাসু সাকুরা কা না” অর্থাৎ, “কত কিছু মনে আসে সাকুরা না কী?” জাপানের শ্রেষ্ঠ কবি মাৎসুও বাশোও রচিত একটি হাইকু। এই একটি হাইকুতে জাপানের সঙ্গে সাকুরার সম্পর্ক কী রকম, ধারণা করা যায়। কিন্তু এর চেয়ে আরও গভীরতর সাকুরা নামক ফুলের অপার সৌন্দর্য, মহিমা এবং বন্দনা সর্বস্তরের জাপানির মননে। বহু বছরের দেখা ও জানার কল্যাণে সাকুরা জাপানিদের মতো আজ আমারও আত্মার আত্মীয়। 
সাকুরা ফুল জাপানে বসন্তের প্রতীক, নবযৌবনের গান, নবজাগরণের আহ্বান। সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত সাকুরাকে ইংরেজিতে বলা হয় চেরি ব্লোজম। আর এই চেরি ব্লোজম দেখার জন্য জাপানিরা ঘর ছেড়ে বের হয় ভ্রমণে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশি পর্যটক ভিড় করেন সাকুরার সৌন্দর্য ও সাকুরা উৎসব উপভোগ করার জন্য। টোকিওসহ সারাদেশে রয়েছে নয়নাভিরাম অজস্র সাকুরা উদ্যান। যার অধিকাংশই গড়ে তোলা হয়েছে এদো যুগের সামুরাই শাসনামলে (১৬০৩-১৯৬৮ খ্রি:)। সামুরাই যোদ্ধারা অসম্ভব সাকুরাপ্রিয় ছিলেন। ওওশিমা সাকুরা এবং এদো হিগান নামক দুটি সাকুরা প্রজাতির সংমিশ্রণে (হাইব্রিড) নতুন সোমেইয়োশিনো সাকুরা নামক প্রজাতির জন্ম হয় এই যুগে। সামুরাই শাসকরা নতুন সাকুরার চারা জাপানব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে রাজধানী এদো (বর্তমান টোকিও), নারা, কিয়োতোসহ প্রধান প্রদেশগুলোতে গড়ে তোলেন অসংখ্য সাকুরা উদ্যান। বসন্তকালে সামুরাই শোওগুন (জেনারেল)সহ প্রাদেশিক সামন্ত-প্রভুরা পরিবার ও দলবল নিয়ে এইসব সাকুরা উদ্যানে কবিতা আবৃত্তি, গানবাজনা, পানাহারে মত্ত হয়ে উঠতেন। এই রীতি শুধু সামুরাই ও উচ্চকোটি মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন দেশব্যাপী এই সোমেইয়োশিনো সাকুরাই অধিকাংশ, সাকুরা বললে একেই বুঝায়। যাকে ঘিরে সাধারণ নাগরিকদের আনন্দ-উৎসব-উন্মাদনা। সোমেইয়োশিনো সাকুরা শুভ্র সাদার সঙ্গে ঈষৎ গোলাপি আভা মেশানো। পাতাবিহীন গাছে থোকা থোকা ঘন হয়ে ফোটে বলেই সৌন্দর্যটা গোলাপি উদ্ভাসে অত্যন্ত উজ্জ্বল দেখায়; যা সহজেই দৃষ্টিকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে।
আমার খুব মনে আছে ১৯৮৫ সালে আমি বিয়ের পর হানিমুন করতে যাই একদা প্রাচীন রাজধানী কিয়োতো শহরে। তখন ছিল বসন্তকাল। সাকুরা ফুটেছে সর্বত্র, উদ্যানে, পুকুরের পাড়ে, সুদৃশ্যমান মন্দিরের প্রাঙ্গণে, অভিজাত বণিকের কাঠের তৈরি নান্দনিক দ্বিতল বাড়ির প্রাচীর ঘেঁষে। থোকায় থোকায় ঘন হয়ে ফোটা সাকুরার কয়েকটি শাখা প্রাচীরের বাইরে উপচে পড়ে মৃদুমন্দ বাতাসে দুলছে আর ছোট ছোট রঙিন নাম না জানা পাখি অস্থির চিত্তে নাচানাচি করছে। কী অপূর্ব লাগছিল! 
রাস্তার দু’পাশে সারি সারি পত্রহীন সাকুরার বৃক্ষে হালকা গোলাপি রঙের আভায় চারদিক উদ্ভাসিত। গাড়িতে চড়ে যেতে যেতে তাই দেখছিলাম মুগ্ধ দৃষ্টিতে পড়ন্ত দুপুরে। যেদিকে চোখ যাচ্ছিল কেবলই দৃষ্টিজুড়ে সাকুরা আর সাকুরা। আর কোনো বৃক্ষ নেই! মাঠের মধ্যে, ঝরনার ধারে, বাড়ির প্রাঙ্গণে, নদীর তীরে জটলা বেঁধে তরুণ-তরুণীর দল উৎসবে মেতে উঠেছে। নানারকম ঐতিহ্যবাহী খাবার, কোমল পানীয়, বিয়ার, সাকে তথা জাপানি মদের স্বাদ গ্রহণ করত গানবাজনা-নৃত্যে মেতে উঠেছে। বাঁধভাঙা আনন্দ জোয়ারে ভেসে গিয়েছে আবালবৃদ্ধবনিতা। বিরতির জন্য যখন কোথাও গাড়ি থেমেছে নেমে দেখি ২৪ ঘণ্টার জন্য খোলা কনভেনিয়েন্স স্টোরগুলো, রেস্টুরেন্ট প্লাস্টিক ও কাগজের নকল সাকুরা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। শিশুদের পরনে গাঢ় গোলাপি জামার ওপর সাদা সাকুরা ফুলের মোটিফ। মেয়েরা সাকুরা অঙ্কিত বাহারি কিমোনো পরে ভ্রমণে বেরিয়েছে। কী প্রাণবন্ত আর সুন্দর লাগছিল তাদের!
বিকেলে গিয়ে যখন পৌঁছলাম কিয়োতো। আরাশিয়ামা নামক স্থানে সাকুরার জন্য প্রাচীনকাল থেকে খুবই বিখ্যাত। সেখানে সাকুরা বৃক্ষের নিচে বসে আমরা দু’জনে বিয়ার পান করলাম, সাকুরামোচি পিঠা খেলাম আরও নানা সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে। অর্থাৎ অন্যদের মতো আমরাও হানামি উপভোগ করলাম। সাকুরা মানেই হানামি। হানামি অর্থ ফুলদর্শন। অনেক প্রাচীন একটি রীতি। সন্ধ্যারাতে ছোট্ট হোটেল; যা একটি সবুজ উদ্যানের পাশে অবস্থিত। বারান্দায় বসে নৈশভোজ গ্রহণ করতে করতে দেখতে পেলাম পূর্ণিমার গোল চাঁদ উঠেছে সাকুরা বাগানের মাথার ওপরে। চাঁদের স্বর্ণাভ আলো আর সাকুরার হালকা গোলাপি আভা মিলেমিশে কী অপূর্ব মসলিনসৃদশ কোমল জোছনায় সারা আকাশ ছেয়ে গেছে! স্থানটিকে অমরাবতী বলে মনে হচ্ছিল। আজও সেই স্মৃতি নাড়া দেয় মনকে বসন্তে। 
এর পর আরও কতবার বসন্ত যাপন উপলক্ষে গিয়েছি বহুদূরে বিখ্যাত হটস্প্রিং রিজোর্ট হোটেল। পাহাড়ি ঝরনার পাদদেশে সাকুরা তার নিজস্ব আলোয় উদ্ভাসিত, দুলছে বাসন্তী বাতাসে। তার পাশে উষ্ণপ্রস্রবণে বিবস্ত্র হয়ে একা বুক ডুবিয়ে সাকে পান করার মধ্যে কী অদ্ভুত এক ভালো লাগা তা ব্যাখ্যা করা দুষ্কর! পলকা বাতাসে বারবার উড়ে এসে পড়েছে সাকুরার হালকা পাপড়ি সাকের পাত্রে। এ কি সাকুরার নীরব প্রেমস্পন্দন ছিল, জানি না? 
একসময় আমিও ভালোবেসে ফেললাম সাকুরাকে। তার উৎপত্তি, ইতিহাস, জাপানিদের সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে বইও লিখে ফেললাম। জাপানের নদী নারী ফুল নামে। ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে অনুধাবন করলাম, নদী সংস্কৃতি, নারী তথা গেইশা ও ওইরান (গণিকা) সংস্কৃতির সঙ্গে কী নান্দনিকভাবেই-না জড়িত সাকুরা। গ্রন্থ পড়ে যখন জানতে পেলাম, নিষিদ্ধ নগর য়োশিওয়ারা গণিকালয়ের গণিকারা বছরে দু-তিনবার শুধু সু-উঁচু প্রাচীরের বাইরে যাওয়ার স্বল্পকালীন ছুটি পেতেন, পিতামাতার শ্রাদ্ধে আর বসন্তকালে সাকুরা দর্শনে, তখন কেন জানি না বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠেছিল! সাকুরার প্রতি ভালোবাসার এ এক বিরল দৃষ্টান্ত। এতই শক্তিশালী সাকুরা নামের ফুল যে, প্রথিতযশা পণ্ডিত, গবেষক ও সাহিত্যিক সাকুরারোন বা সাকুরা তত্ত্ব নিয়ে কতই-না মাতামাতি করছেন শতশত বছর ধরে! এসব যত জানি ততই অভিভূত হই! বাকরুদ্ধ হই যখন শিশুরা সমস্বরে বলে সাকুরা ওয়া তোমোদাচি অর্থাৎ সাকুরা আমাদের বন্ধু। এমনটি বুঝি জাপানেই সম্ভব!
কোথায় নেই সাকুরা? বিয়েশাদি, জন্মমৃত্যু, কর্ম, সাধনা, সংগ্রাম, যুদ্ধবিগ্রহ, কৃষি, শিল্পকলা, সাহিত্য, সংগীত, ফ্যাশন, মানগা, অ্যানিমেশন, চলচ্চিত্র, নাটক, পর্যটন, ব্যবসা, গণমাধ্যম, যানবাহন, ক্রীড়া সর্বত্রই সাকুরা বন্দনা। ভালো লাগে যখন দেখি হাজার বছর ধরে কন্যাসন্তানের সাকুরা নামকরণ ঐতিহ্যটি আজও সমুন্নত।
ক্ষণজন্মা সাকুরা ফুলের বিদায়টা বড় করুণ, বিষণ্ণ। বাতাসে অনবরত উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে ঝরতে থাকে 
তার পাপড়ি। গাছের নিচে জমে জমে স্তূপ হতে থাকে। 
দেখতে দেখতে পৃথিবীতে তার স্বল্পায়ু ভ্রমণ দু’সপ্তাহের মধ্যেই মিলিয়ে যায়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দর র জন য বসন ত

এছাড়াও পড়ুন:

হু হু করে বাড়ছে অপরিকল্পিত ভবন, মিলছে না ময়লা ফেলার জায়গা

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, দেশের পুরোনো জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ অন্যতম। এখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য তাই বহন করে। কিন্তু এ নগরীর রাস্তাগুলো খুব সরু। পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলতে পারে না। হু হু করে গড়ে ওঠা ভবনগুলোও অপরিকল্পিত। নেই ময়লা ফেলার ভাগাড়। ডাম্পিং স্টেশনের জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে প্রেস ক্লাবের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার হলরুমে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ফল উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, এসব নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে রাজনীতিবিদদের। আমাদের মধ্যে বিভক্তি ও ভিন্ন মত থাকবে। তবে দেশের প্রশ্নে উন্নয়নের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা অপরিহার্য।

মৌসুমি ফল নিয়ে ফল উৎসব করেছে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব। এর মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু, লটকন, বরই, জাম, আনারসসহ বাহারি ফল। এ সময় মৌসুমি ফলের ঘ্রাণে ক্লাব আঙিনায় এক মোহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

ফল উৎসবে সভাপতিত্ব করেন প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি নওয়াব আলী। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি অধ্যাপক আবুল কাশেম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গোলাম মাসুম প্রধান, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন, জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল করিম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • হু হু করে বাড়ছে অপরিকল্পিত ভবন, মিলছে না ময়লা ফেলার জায়গা
  • ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার
  • ‘উৎসব’ নিয়ে আগ্রহ দর্শকের, শো বাড়ল দ্বিতীয় সপ্তাহে