জীবনের ভার আর যেন সইতে পারছেন না ৭০ বছর বয়সী ফাতেমা বেগম। পা দুটি নিষ্ক্রিয়, একটি হাত ভাঙা। অপর হাতে টানিয়ে রাখা দড়ি ধরে রাখতে হয় শারীরিক ভারসাম্য। দীর্ঘ দুই বছর ধরে জীর্ণ ঘরে এভাবেই রয়েছেন শেষ যাত্রার অপেক্ষায়। মনে হচ্ছে জীবন এখন তার কাছে শুধুই একটি বোঝা।
পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই তার। স্বামী মহির সকল মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে গেছেন কুড়ি বছর আগে। সন্তানহীন ফাতেমা এখন ঠাঁই নিয়েছেন জামালপুর পৌরসভার ছনকান্দা হরিপুর ঈদগাহ মাঠে পাশেই কড়ই গাছের নিচে একটি ঝুপড়ি ঘরে। পরের জমিতে, নিরাশ্রয় জীবনের নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে।
স্থানীয়রা জানান- ফাতেমা বেগমের স্বামী-সন্তান নেই। আগে লোকজনের কাছে টাকা-পয়সা চেয়ে কোনো রকমে জীবন চলছিল। দুই বছর ধরে পায়ে ও এক হাতে শক্তি পায় না। এখন ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকেন। বিছানা নেই, তাই মাটিতেই থাকতে হয়। যেখানে থাকেন সেখান থেকে নড়াচড়াও করতে পারেন না। আশপাশের কেউ যদি খাবার দিয়ে যায়, তাহলে খেতে পারেন। না দিলে উপোস থাকেন। তাকে এখান থেকে উদ্ধার করে কোন বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলে হয়তো শেষ জীবনটা একটু ভালো থাকতে পারবেন।
ফাতেমা বেগমের প্রতিবেশী মো.
ফাতেমা বেগমের আরেক প্রতিবেশী কল্পনা বেগম বলেন, “উনার কষ্ট আমাদের সহ্য হয় না। আমরা তাকে যতটা পারি সাহায্য করি। কিন্তু আমরাও তো গরিব। আমাদের তো বেশি সাধ্য নাই।”
প্রতিবেশীর দয়ার থালাতেই ক্ষুধা মেটে ফাতেমার, কিন্তু তার চিকিৎসার ভার নেওয়া তাদের সাধ্যের বাইরে। তাই এখন ভরসা সমাজের হৃদয়বান মানুষ ও সরকারের সহানুভূতি।
মো. শফিকুল ইসলাম নামে ফাতেমা বেগমের একজন প্রতিবেশী বলেন, “এই সমাজের এত ধনী লোক। তাদের নজরে ফাতেমা বেগম আসে না। ধনীদের উচিত ফাতেমা বেগমের পাশে দাঁড়ানো। এছাড়া সরকারের সুদৃষ্টিও প্রয়োজন।”
বিষয়টি নজরে আনার সাথে সাথে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা নিয়ে ফাতেমা বেগমের দোরগোড়ায় ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত শহীদ পিংকি। এছাড়াও তার চিকিৎসা ও দেখভালের দায়িত্ব নেন নিজের কাঁধে।
জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত শহীদ পিংকি বলেন, “আপনার মাধ্যমে খবরটি পাওয়ার সাথে সাথে আমি এখানে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা নিয়ে এসেছি। তবে এটি তার জন্য পর্যাপ্ত নয়। আমি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সাথে কথা বলে ফাতেমা বেগমের চিকিৎসা ও দেখভালের স্থায়ী একটি ব্যবস্থা করব। তাকে যদি ভালো একটি বৃদ্ধাশ্রমে দেওয়া যায়, তাহলে মনে হয় সবচেয়ে ভালো হবে। এই বিষয়ে আমি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক
একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।
যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষকচৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।
যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।
তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।
দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী