ভোলার উদ্বৃত্ত গ্যাস পাইপলাইনে ঢাকা পর্যন্ত আনার প্রকল্প নিয়ে আগ্রহী রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাজপ্রম। এ ব্যাপারে তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্নীতিবাজ মহলের সহযোগিতায় বেশি দামে গ্যাসকূপ খননের কাজ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে গ্যাজপ্রমের বিরুদ্ধে। 

গ্যাস সংকট মেটাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় উৎস ভোলা। এই দ্বীপে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত ৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুটের (টিসিএফ) বেশি। বর্তমানে দিনে ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা কম হওয়ায় এবং সরবরাহ সুবিধা না থাকায় এর মধ্যে ১২ কোটি ঘনফুট অব্যবহৃত থাকছে। সিএনজি আকারে সীমিত পরিসরে গ্যাস ঢাকায় আনা হচ্ছে। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই উদ্বৃত্ত গ্যাস পাইপলাইনে ঢাকা পর্যন্ত আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। 
ভোলার গ্যাস পাইপলাইনে মূল ভূখণ্ডে আনার বিষয়টি কয়েক বছর ধরেই আলোচিত হচ্ছে। পাশাপাশি এলএনজি আকারেও আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তবে তা ব্যয়বহুল হওয়ায় পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাইপলাইনের রুট আংশিক পরিবর্তন সাপেক্ষে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ভোলা-বরিশাল-খুলনা পাইপলাইনের ভোলা-বরিশাল অংশ অপরিবর্তিত রেখে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা (আমিনবাজার) লাইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। এখন বরিশাল-ঢাকা লাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। 

সূত্র জানিয়েছে, গ্যাজপ্রম প্রতিনিধিরা পেট্রোবাংলা, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) ও জ্বালানি বিভাগে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। গ্যাজপ্রমের প্রকৌশলী ভোলা-ঢাকা-বরিশাল রুট ঘুরে দেখেছেন। জ্বালানি খাতের বিশেষ আইন বাতিল হওয়ায় জিটুজি ভিত্তিতে কাজটি পেতে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পর্যায়ে গ্যাজপ্রম যোগাযোগ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সমকালকে বলেন, দেশের জ্বালানি ঘাটতি মেটাতে সরকার নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। ভোলায় উদ্বৃত্ত গ্যাস মূল ভূমিতে কীভাবে আনা যায়, তা নিয়ে কাজ হচ্ছে। এলএনজি করে আনার কথা ভাবা হয়েছে।
 তবে পাইপলাইন বেশি উপযুক্ত হবে বলে মনে হচ্ছে। আগে প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে। এর পর ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি আসবে। 
অবশ্যই সরকার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ দেবে।

আলোচিত গ্যাজপ্রম
বিশ্বের জ্বালানি খাতে গ্যাজপ্রমের অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও এ কোম্পানি বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কাজ করে। এতে মানসম্মত কাজ হয় না বলে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাজপ্রমের কূপ খননের খরচও বেশি। বাপেক্সের কর্মকর্তারা জানান, তাদের একটি কূপ খনন করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, গ্যাজপ্রমকে দিয়ে খনন করতে খরচ হয় ১৫০ থেকে ১৮০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে তিনটি কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে দিতে হয়েছে ৫৪০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৭টি কূপ খনন করে কোম্পানিটি। তখনও বাপেক্সের চেয়ে দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি খরচ করতে হয়েছে পেট্রোবাংলাকে। 
গ্যাজপ্রমকে কাজ দিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের একজন উপদেষ্টাসহ একাধিক মন্ত্রী ও নেতা প্রভাব বিস্তার করতেন। তাদের তৎপরতায় গ্যাজপ্রম প্রথমে ২০১২ সালে দেশের ১০টি গ্যাসকূপ খননের ঠিকাদারি নেয়। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম দফায় খনন করা তিতাস-২০, তিতাস-২১, সেমুতাং-৬, বেগমগঞ্জ-৩ ও শাহবাজপুর-৪– এই পাঁচ গ্যাসকূপ উত্তোলন শুরুর অল্পদিন পরই বালু ও পানি উঠে বন্ধ হয়ে যায়। পরে বাপেক্স নিজেই সেগুলো সংস্কার করে গ্যাস উত্তোলন করে।

ভোলার সম্ভাবনা
ভোলার গ্যাসক্ষেত্র বেঙ্গল বেসিনভুক্ত। সেখানে যে ভূকাঠামোয় গ্যাস পাওয়া গেছে, তার ভূতাত্ত্বিক নাম ‘স্টেটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার’। দেশের অন্য সব গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে সুরমা বেসিনে। এই বেসিনের ভূতাত্ত্বিক নাম ‘অ্যান্টি ক্লেইন স্ট্রাকচার’। ১৯৯৫ সালে বাপেক্স ভোলার শাহবাজপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পায়। ২০০৯ সালের ১১ মে শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। শাহবাজপুর ও ভোলা– এ দুই গ্যাসক্ষেত্রে মজুত রয়েছে ২ দশমিক ০৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। স্থানীয় চাহিদা ৭ থেকে ৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস। দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ২০ কোটি ঘনফুট হওয়ায় প্রায় ১২ কোটি ঘনফুট গ্যাস অব্যবহৃত থাকে। সম্প্রতি ভোলায় গ্যাসের নতুন মজুত পাওয়া গেছে। দ্বীপের শাহবাজপুর থেকে ইলিশা পর্যন্ত ৬০০ বর্গকিলোমিটারে ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) সিসমিক জরিপ চালানো হয়। এতে ২ দশমিক ৪২৩ টিসিএফ উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত আবিষ্কৃত হয়েছে। চরফ্যাসনে দ্বিমাত্রিক (টুডি) সিসমিক সার্ভে করে ২ দশমিক ৬৮৬ টিসিএফ গ্যাসের মজুত পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম সমকালকে বলেন, ভোলা বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র। সঠিক অনুসন্ধান চালালে আরও মজুতের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘনফ ট গ য স ক প খনন র সরক র র ল ইন র বর শ ল হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক

একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।

যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষক

চৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।

যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়

ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।

তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।

দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী

সম্পর্কিত নিবন্ধ