আশুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিকদের অবস্থান
Published: 26th, April 2025 GMT
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ‘ন্যাচারাল উল ওয়্যারস লিমিটেড’ নামের একটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার কারখানার ফটকে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) সৈয়দ মিলাদুল হুদা স্বাক্ষরিত এক নোটিশে আজ শনিবার থেকে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পূর্বঘোষণা ছাড়াই কারখানা বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে এবং খুলে দেওয়ার দাবিতে কারখানার পাশে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান নেন শ্রমিকেরা।
কারখানার ফটকে টানানো নোটিশে বলা হয়, ‘ন্যাচারাল উল ওয়্যারস লিমিটেডে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে সব বেতন–ভাতা ও ওভারটাইম পরিশোধের পরেও শ্রমিকদের দাঙ্গাহাঙ্গামা, জোরপূর্বক কাজ বন্ধ রাখা ও বেআইনি ধর্মঘট, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা ও কারখানার সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ১৩ (১) অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হলো। কারখানা পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে নোটিশের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ পরে জানানো হবে।’
এদিকে কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে ও দ্রুত কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আজ সকালে কারখানার পাশে একটি মাঠে অবস্থান নেন শ্রমিকেরা। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। কারখানার শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, মিথ্যা অভিযোগ তুলে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, মূলত বেতন নিয়ে সমস্যা। প্রতি মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে বেতন দেওয়ার কথা। কিন্তু কয়েক মাস ধরে সময়মতো বেতন দিচ্ছে না। প্রতি মাসেই আন্দোলন করে বেতন নিতে হয়। গত মার্চ মাসের বেতন চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধের কথা থাকলেও মালিকপক্ষ একটি সেকশনের বেতন দেয়। বাকিদের ২২ এপ্রিল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেতন না দেওয়ায় সবাই কাজ বন্ধ করে দেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্য শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়। আজ (শনিবার) সকালে কারখানার এসে দেখেন কারখানা বন্ধ।
আরেক শ্রমিক বলেন, কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কারখানার পাশের মাঠে অবস্থান নিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। মালিকের সঙ্গে কথা বলে কারখানা কবে খুলবে জানাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার বেতন পরিশোধ নিয়ে কারখানায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাতে কারখানা বন্ধের একটি নোটিশ টাঙিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকেরা আজ সকালে এসে কারখানা বন্ধ দেখতে পেয়ে পাশের মাঠে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা চলে যান। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।