জনবল সঙ্কটে ব্যহত ভোলাহাটের স্বাস্থ্যসেবা
Published: 26th, April 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও দক্ষজনবল না থাকার কারণে সেগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে না। দিনে দিনে সরঞ্জামগুলো অকেজো হয়ে পড়ছে। ফলে সরকারি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগিরা তাদের কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখানে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা বেশি দিন থাকতে চান না। ফলে শূন্যই থাকে পদগুলো।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩৭টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৯১ জন। ৪৬ জনের পদ ফাঁকা রয়েছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার, সহকারী সার্জনসহ ১৬টি শূন্য আছে। নেই নার্সিং সুপারভাইজারও। প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোর কিপার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, হেলথ এডুকেটর, কম্পিউটার অপারেটর, স্যাকমো, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফিজিও), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই), স্বাস্থ্য সহকারীসহ মোট ৬১টি পদের মধ্যে ১৬টিই শূন্য। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির নিরাপত্তা কর্মী, এমএলএসএস, মালি, ওয়ার্ডবয়, কুক, আয়া, ঝাড়ুদারসহ ২০টি পদের মধ্যে ১৩টিই শূন্য রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলাহাট উপজেলাটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর একটি। জেলা শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে উপজেলাটির অবস্থান। এখানে দেড় লক্ষ মানুষের বসবাস। তাদের জন্য আছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে জনবলের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট জানান, যথাযথ নিয়মেই ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ অন্য পদের জনবলকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে কাজ করতে অনাগ্রহে ফলে অন্য জায়গায় বদলির সিদ্ধান্ত নেন তারা। ফলে ফলে শূন্যপদ সহজে পূরণ হয় না। সেজন্য রোগিরা এখানে কাঙ্খিত সেবা পান না। বাধ্য হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয় তাদের।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আধুনিক কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও দক্ষজনবলের অভাবে সেগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে না। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক না থাকায় কেউ সেগুলো চালানোর দায়িত্ব নিতে পারছেন না। ফলে রোগিরা আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। বহির্বিভাগে ৪৭ প্রকার ওষুধের নাম লিখা থাকলেও রোগীদের দেওয়া হয় ২০-২৫ প্রকার ওষুধ। বহির্বিভাগে দৈনিক প্রায় ৩০০ করে রোগী হয়। দীর্ঘ লাইনে ভোগান্তিতে পড়ে রোগীরা। অধিক পরিমাণ রোগি দেখার চাপে থাকতে হয় চিকিৎকদের।
ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.
তিনি আরও বলেন, “আমাদের এখানে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমরা সরকারের সরবরাহ অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে।”
ঢাকা/শিয়াম/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ য কমপ ল ক স ভ ল হ ট উপজ ল সরঞ জ ম জনবল র থ কল ও সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।
হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।
যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।