মেরামতকাজ শুরু হলেও কাটছে না ভাঙনের ভয়
Published: 28th, April 2025 GMT
গত নভেম্বরে ভাঙন দেখা দিয়েছিল শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় অবস্থিত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধের ১০০ মিটারে। এর চার মাস পর ২৫ এপ্রিল ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে মেরামতকাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আসন্ন বর্ষায় ভাঙনের আশঙ্কা কাটছে না।
পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) জরিপের বরাতে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় বাঁধের কাছে নদীর গভীরতা বেড়েছে। ফলে তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বাকি এক কিলোমিটার অংশেও নদী বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে। সেখানে চলছে মাটির ক্ষয়। যে কারণে প্রায় ১১০ কোটি টাকা খরচে নির্মিত বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
অতীতে পদ্মায় সহায়সম্বল হারানো ইদ্রিস মাঝি অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন এই বাঁধের পূর্বপাশে। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়ার এ বাসিন্দা সব মিলিয়ে হারিয়েছেন ৩০ বিঘার মতো জমি। বর্ষার আগেই ভাঙন দেখা দেওয়ায় ইদ্রিসের আশঙ্কা, আবারও তাঁর অস্থায়ী বসতিও পদ্মায় হারাবেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটি টেকসই করার দাবি জানান।
পাউবো সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বিবিএ। এতে খরচ হয় প্রায় ১১০ কোটি টাকা। গত বছরের ৩ নভেম্বর ওই বাঁধের মাঝিরঘাট এলাকার ধস শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত নদীতে ধসে পড়ে প্রায় ১০০ মিটার অংশ। ওই এলাকার কংক্রিটের সিসি ব্লক তলিয়ে যায় পানিতে। এ ছাড়াও আশপাশেও ফাটল ধরে।
ভাঙনের পর বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পাউবোকে। ২৫ এপ্রিল থেকে তারা বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে সংস্কারের কাজ শুরু করে। তবুও আশঙ্কা কমছে না স্থানীয় বাসিন্দাদের। অছিমউদ্দিন মাদবরের কান্দির বাসিন্দা শুভ তারা (৪৫) বলেন, নদীতে জমি ও ভিটাবাড়ি ভাঙতে ভাঙতে তারা নিঃস্ব। বারবার জমি কিনে বসতি গড়েছেন। আবারও ভেঙেছে। কত বিঘা জমি হারিয়েছেন, তা মনে নেই। রাতে বাতাস ছাড়লে ঘুম আসে না, ভয়ে কলিজা ধড়ফড় করে।
রোববার সরেজমিনে পাঁচ-ছয়টি জায়গায় বাঁধের বালু মাটি ভেঙে নদীতে পড়তে দেখা যায়। বাঁধ সুরক্ষার জন্য সাজানো জিওব্যাগ থেকে বালু বের হয়ে পড়ছে নদীতে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার। পাশাপাশি চারটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক বসতবাড়িও তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাঁধপাড়ের বাসিন্দা হাতেম খাঁ বলেন, নদী একেবারে বাঁধের কাছে চলে এসেছে। গতবার বাঁধের অনেক জায়গা নিয়ে ভেঙেছে। এবার বর্ষায় মনে হয় পুরো বাঁধ ভাঙবে। সরকার বাঁধটি মজবুত করে তৈরি করে দিলে তাদের বাড়িঘর রক্ষা পাবে।
গৃহবধূ আলো বেগমের ভাষ্য, বাঁধটি এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এর শক্তি না বাড়ানো হলে তাদের বাড়িঘর পদ্মায় যাবে।
নাওডোবা ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জুলহাস খাঁ বলেন, যুগের পর যুগ ধরে তারা নদীভাঙনের শিকার। এই অঞ্চলের হাজারো মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে। বাঁধের পাশে নদী গভীর হওয়ায় আসন্ন বর্ষায় তীব্র ভাঙনের শঙ্কা ভর করেছে তাদের মনে। বাঁধটি দ্রুত টেকসই করে নির্মাণের দাবি তাঁর।
জেলা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বণিকের ভাষ্য, গতবারের ধসে পড়া বাঁধের ১০০ মিটার অংশের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। ৩৩ হাজার জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষার আগে মেরামত শেষ হওয়ার আশা করছেন। এলাকাবাসীর আশঙ্কা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি এটি দ্রুত পাস হবে। পাস হলে আমরা কাজ শুরু করতে পারব। তবে এই বর্ষায় পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। চেষ্টা করব, আগামী বর্ষার মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে।’
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসানের ভাষ্য, নাওডোবা জিরোপয়েন্ট এলাকায় ১০০ মিটার ভেঙে পড়া অংশে পাউবো ও বিবিএ যৌথভাবে সমীক্ষা চালায়। এতে দেখা গেছে, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় বাঁধের কাছে নদীর গভীরতা বেড়েছে। তাই তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বাকি এক কিলোমিটার অংশেও নদী কাছাকাছি চলে এসেছে, মাটির ক্ষয়ও হচ্ছে বেশি। ফলে পুরো বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ।
একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে তারেক হাসান বলেন, মজবুত করা না হলে সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এক ক ল ম ট র ১০০ ম ট র আশঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন
চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৩ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। লেনদেনে শেষে ডিএসইতে এ দিন ৩০০টি বা ৭৫.৩৮ শতাংশের বেশি শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরপতন হয়েছে।
এ দিন আগের কার্যদিবসের চেয়ে ডিএসইতে লেনদেন কমলেও সিএসইতে কিছুটা বেড়েছে। তবে উভয় পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম কমেছে।
আরো পড়ুন:
৭ কোটি টাকা সংগ্রহে লিও আইসিটি ক্যাবলসের কিউআইও’র আবেদন
বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আইসিএসবির প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অনেক দিন ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান দেখা গেলেও লেনদেন শেষে তা পতনে রূপ নেয়। সোমবার সকাল থেকেই ডিএসইএক্স সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় লেনদেনের শুরু হয়। লেনদেনের শেষ হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। তবে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন অনেক কমে গেছে।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৪.৮৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬১ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২.৩৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২১.৯৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে মোট ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪৫টি কোম্পানির, কমেছে ৩০০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৩টির।
ডিএসইতে মোট ৫১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৪৯.৫৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮৭.৯৭ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ২২৫ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ২.১৬ পয়েন্ট কমে ৮৯৬ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৪.২৫ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৬৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সিএসইতে মোট ১৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪২টি কোম্পানির, কমেছে ১২৬টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৫টির।
সিএসইতে ২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
ঢাকা/এনটি/বকুল