গত নভেম্বরে ভাঙন দেখা দিয়েছিল শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় অবস্থিত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধের ১০০ মিটারে। এর চার মাস পর ২৫ এপ্রিল ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে মেরামতকাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আসন্ন বর্ষায় ভাঙনের আশঙ্কা কাটছে না। 
পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) জরিপের বরাতে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় বাঁধের কাছে নদীর গভীরতা বেড়েছে। ফলে তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বাকি এক কিলোমিটার অংশেও নদী বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে। সেখানে চলছে মাটির ক্ষয়। যে কারণে প্রায় ১১০ কোটি টাকা খরচে নির্মিত বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। 
অতীতে পদ্মায় সহায়সম্বল হারানো ইদ্রিস মাঝি অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন এই বাঁধের পূর্বপাশে। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়ার এ বাসিন্দা সব মিলিয়ে হারিয়েছেন ৩০ বিঘার মতো জমি। বর্ষার আগেই ভাঙন দেখা দেওয়ায় ইদ্রিসের আশঙ্কা, আবারও তাঁর অস্থায়ী বসতিও পদ্মায় হারাবেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটি টেকসই করার দাবি জানান। 
পাউবো সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বিবিএ। এতে খরচ হয় প্রায় ১১০ কোটি টাকা। গত বছরের ৩ নভেম্বর ওই বাঁধের মাঝিরঘাট এলাকার ধস শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত নদীতে ধসে পড়ে প্রায় ১০০ মিটার অংশ। ওই এলাকার কংক্রিটের সিসি ব্লক তলিয়ে যায় পানিতে। এ ছাড়াও আশপাশেও ফাটল ধরে।
ভাঙনের পর বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পাউবোকে। ২৫ এপ্রিল থেকে তারা বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে সংস্কারের কাজ শুরু করে। তবুও আশঙ্কা কমছে না স্থানীয় বাসিন্দাদের। অছিমউদ্দিন মাদবরের কান্দির বাসিন্দা শুভ তারা (৪৫) বলেন, নদীতে জমি ও ভিটাবাড়ি ভাঙতে ভাঙতে তারা নিঃস্ব। বারবার জমি কিনে বসতি গড়েছেন। আবারও ভেঙেছে। কত বিঘা জমি হারিয়েছেন, তা মনে নেই। রাতে বাতাস ছাড়লে ঘুম আসে না, ভয়ে কলিজা ধড়ফড় করে।
রোববার সরেজমিনে পাঁচ-ছয়টি জায়গায় বাঁধের বালু মাটি ভেঙে নদীতে পড়তে দেখা যায়। বাঁধ সুরক্ষার জন্য সাজানো জিওব্যাগ থেকে বালু বের হয়ে পড়ছে নদীতে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার। পাশাপাশি চারটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক বসতবাড়িও তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। 
বাঁধপাড়ের বাসিন্দা হাতেম খাঁ বলেন, নদী একেবারে বাঁধের কাছে চলে এসেছে। গতবার বাঁধের অনেক জায়গা নিয়ে ভেঙেছে। এবার বর্ষায় মনে হয় পুরো বাঁধ ভাঙবে। সরকার বাঁধটি মজবুত করে তৈরি করে দিলে তাদের বাড়িঘর রক্ষা পাবে।
গৃহবধূ আলো বেগমের ভাষ্য, বাঁধটি এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এর শক্তি না বাড়ানো হলে তাদের বাড়িঘর পদ্মায় যাবে। 
নাওডোবা ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জুলহাস খাঁ বলেন, যুগের পর যুগ ধরে তারা নদীভাঙনের শিকার। এই অঞ্চলের হাজারো মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে। বাঁধের পাশে নদী গভীর হওয়ায় আসন্ন বর্ষায় তীব্র ভাঙনের শঙ্কা ভর করেছে তাদের মনে। বাঁধটি দ্রুত টেকসই করে নির্মাণের দাবি তাঁর।
জেলা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বণিকের ভাষ্য, গতবারের ধসে পড়া বাঁধের ১০০ মিটার অংশের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। ৩৩ হাজার জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষার আগে মেরামত শেষ হওয়ার আশা করছেন। এলাকাবাসীর আশঙ্কা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি এটি দ্রুত পাস হবে। পাস হলে আমরা কাজ শুরু করতে পারব। তবে এই বর্ষায় পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। চেষ্টা করব, আগামী বর্ষার মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে।’
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসানের ভাষ্য, নাওডোবা জিরোপয়েন্ট এলাকায় ১০০ মিটার ভেঙে পড়া অংশে পাউবো ও বিবিএ যৌথভাবে সমীক্ষা চালায়। এতে দেখা গেছে, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় বাঁধের কাছে নদীর গভীরতা বেড়েছে। তাই তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বাকি এক কিলোমিটার অংশেও নদী কাছাকাছি চলে এসেছে, মাটির ক্ষয়ও হচ্ছে বেশি। ফলে পুরো বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ।
একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে তারেক হাসান বলেন, মজবুত করা না হলে সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এক ক ল ম ট র ১০০ ম ট র আশঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ