‘ছেলেরে সাজায়-গোছায় স্কুলে দিয়ে আসছিলাম। এক ঘণ্টা পরই স্কুল থেকে ফোন করে বলে, এখুনি আসেন। দৌড়ায় স্কুলে গিয়ে দেখি, চারদিকে নিস্তব্ধ। স্কুল ছুটি দিয়ে দিছে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। একজন এসে বলল, রোহান চোখে ব্যথা পাইছে, প্রিন্সিপালের রুমে। সেখানে গিয়ে দেখি, আমার ছেলের চোখে ব্যান্ডেজ করে শোয়ায় রাখছে।’

২৮ এপ্রিল কুমিল্লার তিতাস উপজেলার নিজ বাড়িতে বসে এ কথাগুলো বলছিলেন ফারহান ইসলাম রোহানের (৭) মা মায়া আক্তার। প্রথম আলোর সঙ্গে কথাগুলো বলার সময় তাঁর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছিল।

মায়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর স্কুলশিক্ষকের স্কেলের আঘাতে তাঁর ছেলের ডান চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসার জন্য আট মাস ধরে ছেলেকে নিয়ে ছোটাছুটি করছেন তাঁরা। ছেলের চোখে দুবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আঘাতে তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে গেছে।

শিশুটির বাবা রবিউল ইসলাম, তিনি ওমানপ্রবাসী। রবিউল-মায়া দম্পতির সন্তান ফারহান ঘটনার সময় উপজেলার বাতাকান্দি এলাকার সেবা মাল্টিমিডিয়া স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। এই তথ্য জানিয়ে মায়া বলেন, স্কুলটির সহকারী শিক্ষক রাহাতুল ইসলাম সৌরভ (২৫) ফারহানের দিকে স্কেল ছুড়ে মেরেছিলেন।

মায়া তাঁর তিন সন্তান নিয়ে স্বামীর পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামে থাকেন। ফারহানের যমজ বোন রয়েছে। এই বোন মাদ্রাসায় পড়ে। আর বড় বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী।

ঘটনার বিষয়ে ফারহানের চাচা মোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন, শিক্ষক রাহাতুল ক্লাসে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। ফারহানসহ ক্লাসের শিশুশিক্ষার্থীরা হইচই করলে শিক্ষক প্রচণ্ড রেগে যান। তিনি প্রথমে স্কেল দিয়ে ফারহানের পিঠে বাড়ি দেন। এতে স্কেল ভেঙে যায়। শিক্ষক নিজের জায়গায় ফিরে যাওয়ার পরও হইচই বন্ধ হচ্ছিল না। তখন তিনি আরও রেগে যান। শিক্ষক ভাঙা স্কেলটি ফারহানের দিকে ছুড়ে মারেন। স্কেলটি ফারহানের ডান চোখে গিয়ে লাগে।

এ ঘটনায় গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষক রাহাতুলের বিরুদ্ধে তিতাস থানায় অভিযোগ করেন ফারহানের মা। অভিযোগে গুরুতর আঘাত করে চোখ নষ্ট করার কথা বলা হয়। অভিযোগটি মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছে তিতাস থানার পুলিশ। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩২৬ ধারায় করা এই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা-সংক্রান্ত নীতিমালা ২০১১’ জারি রয়েছে। এই নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাগাদাও দিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের চড়-থাপ্পড় দেওয়া, চুল টানা, কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা, ‘নিল ডাউন’ করে রাখা, দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে রাখা, স্কেল বা বেত দিয়ে মারার মতো শারীরিক শাস্তি দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আর ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে সবার সামনে হাস্যাস্পদ করাসহ নানান মানসিক শাস্তি তো হরহামেশাই চলে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুলে শিশুসন্তানেরা পড়ে জানিয়ে এক মা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্তানেরা প্রায়ই অভিযোগ করে যে শিক্ষক বকা দেন। তারা একদিন স্কুলেও যেতে চাইছিল না। তিনি শিক্ষকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শিক্ষক উল্টো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।

রাজধানীর খ্যাতনামা একটি স্কুলে মেয়েরা চুল ঠিকভাবে বেঁধে না গেলে বড় ক্লাসের শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাথায় তেল ঢেলে দেওয়ার ‘রেওয়াজ’ আছে বলে অভিযোগ করেন আরেক অভিভাবক। অন্যদিকে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা শাসনের নামে ছাত্রদের ভয়াবহভাবে মারধর করছেন—এমন ভিডিও প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা যায়।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ ৩০ এপ্রিল পালিত হচ্ছে শিশুদের শারীরিক শাস্তি বিলোপের আন্তর্জাতিক দিবস। শিশুদের প্রতি সব ধরনের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলাই দিবসটির লক্ষ্য।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বাংলাদেশ পরিচালিত মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯ অনুসারে, জরিপের সময়ের মাসখানেক আগে ২ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রায় ৮৯ শতাংশ শিশু পরিবারের সদস্যদের হাতে শারীরিক শাস্তির শিকার হয়েছে। ৩০ শতাংশের শাস্তি গুরুতর ছিল। মা ও শিশুর লালন–পালনকারীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ মনে করেন, শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেওয়ার দরকার আছে। জরিপে ৭০ হাজারের বেশি শিশু এবং সাড়ে ৫৩ হাজারের বেশি মা ও শিশু লালন–পালনকারী অংশ নিয়েছিলেন।

‘পুতের ভবিষ্যৎ-স্বপ্ন সব গেল’

ছেলে ফারহানের ঘটনা শুনে বাবা রবিউল দেশে এসেছিলেন। তিন মাস তিনি দেশে থেকে ছেলের চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি করেন।

শিশুদের পেটানো হয়—এমন স্কুলে কেন ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন, এ নিয়ে এখন আফসোস মা মায়া আক্তারের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পুতের এত বড় ক্ষতি কইরা দিল। আমার পুতেরে শেষ কইরা ফালাইল। পুতের ভবিষ্যৎ, স্বপ্ন সব গেল।’

কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্না থামাতে পারছিলেন না মায়া আক্তার। ছেলের চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বড় আশা নিয়ে ভারত গেছিলাম। ডাক্তাররা বলছে, এই চোখ আর ভালো হবে না।’

পরিবারটি বলছে, ঘটনার পর এলাকার একজন চিকিৎসকের কাছে ফারহানকে নিয়ে গিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই চিকিৎসক শিশুর অবস্থা ভালো না জানিয়ে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন। এরপর তাঁরা প্রথমে কুমিল্লায়, পরে ঢাকার ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানে অস্ত্রোপচার হয়। পরে ঢাকার আরও দুটি হাসপাতালসহ চট্টগ্রামে তার চিকিৎসা করানো হয়। ভারতের হায়দরাবাদ ও চেন্নাইয়ের দুটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারসহ দেড় মাস চিকিৎসা শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে ফারহানকে নিয়ে দেশে ফেরেন মা। এখন দেশে চিকিৎসক দেখাচ্ছেন।

ফারহানের চিকিৎসার পেছনে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানায় পরিবারটি। ফারহানকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার দক্ষিণ আকালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু সে এখন এক চোখে কিছু দেখছে না। পড়তে গেলে তার মাথাব্যথা করে। তাই চিকিৎসকেরা তাকে পড়াশোনায় চাপ না দিতে বলেছেন।

ফারহানের মা মায়া আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন পর্যন্ত আসামি গ্রেপ্তার হলো না। তিনি এই ঘটনার বিচার চান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তিতাস থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.

কাউছার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামি পলাতক। আমরা তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’

স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকের পরিবার যা বলছে

স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা মো. শামীম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মিটমাটের জন্য বলেছিলাম। চিকিৎসা আমরা করাব বলেছিলাম। কিন্তু ফারহানের পরিবার কোনো আলোচনায় বসতে রাজি নন। তাঁরা বলেছেন, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাবেন। তো চিকিৎসা করাক।’

এটা কি মিটমাট করার বিষয়—এই প্রশ্ন করলে শামীম সরকার বলেন, ‘ছেলেটার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। সে ক্ষতি তো আর পূরণ করা সম্ভব নয়।’

স্কুলের শিক্ষকেরা এভাবে শিক্ষার্থীদের মারধর করেন কি না জানতে চাইলে শামীম সরকার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মারধর করা সম্পূর্ণ নিষেধ। এরপরও ওই শিক্ষক কেন এই কাজ করলেন, জানি না। ঘটনার পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

শিক্ষক রাহাতুলের মুঠোফোনে কল করলে এক নারী ধরেন। তিনি নিজের নাম বলেন শিল্পী আক্তার। পরিচয় দেন রাহাতুলের মা বলে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে ইচ্ছা করে তো কাজটা করে নাই। বাচ্চারা চিল্লাচিল্লি করছিল, রাগের মাথায় স্কেল ছুড়ে মারছে।’

শিল্পী আক্তার জানান, রাহাতুল কুমিল্লার হোমনা ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র। ঘটনার ১০ মাস আগে রাহাতুল ওই স্কুলে চাকরি নিয়েছিলেন। রাহাতুলের বাবা মো. মোতাকাব্বির স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক।

ফারহানের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রসঙ্গে শিল্পী আক্তার বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য খরচ লাগলে দেব। আমরা চাই, ঘটনাটির একটি মীমাংসা হোক। কিন্তু ওই পরিবার (ফারহানের) কোনো আলোচনাতেই বসতে চায় না।’

‘কোনো শিক্ষার্থীকে আঘাত করতে পারেন না শিক্ষক’

বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম ‘দ্য গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ টু এন্ড অল করপোরাল পানিশমেন্ট অব চিলড্রেন (জিআই)’ শিশুদের শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে ২০০১ সালে প্রচারাভিযান শুরু করে। ২০২০ সাল থেকে এই প্ল্যাটফর্ম ‘এন্ড করপোরাল পানিশমেন্ট’ নামে কাজ করে। এই প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে ২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়, স্কুলে শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে জারি হওয়া নীতিমালাকে আইনে রূপ দেওয়া দরকার। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বাংলাদেশে বাড়ি, দিবাযত্নকেন্দ্র, অভিযুক্তদের রাখার প্রতিষ্ঠানে (শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র) এখনো শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ হয়নি।

তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমাইয়া মমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারহানের ঘটনাটির পর প্রশাসনের তরফ থেকে তদন্ত কমিটি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এটা কিন্ডারগার্টেন স্কুল বলে প্রশাসনের এখানে সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ কম। অভিযুক্ত শিক্ষক ও তাঁর পরিবারকে ডাকা হয়েছিল। শিক্ষক আসেননি। কোনো শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে আঘাত করতে পারেন না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক চ ক ৎসক উপজ ল র য গ কর র জন য পর ব র ইসল ম ঘটন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে ফারইস্টকে বিদায় করে এআইইউবিকে ফাইনালে তুললেন রাজীব

ইস্পাহানি-প্রথম আলো তৃতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি)।

জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ প্রথম সেমিফাইনালে টুর্নামেন্টের গত আসরের রানার্সআপ এআইইউবি জিতেছে রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে। টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের রানার্সআপ ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিপক্ষে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে ম্যাচটি ছিল ২-২ সমতায়। এরপর টাইব্রেকারে এআইইউবি জেতে ৬-৫ গোলে।

টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপার চূড়ান্ত লড়াইয়ের টিকিট পেয়েছে এআইইউবি। নির্ধারিত সময়ে দুবার পিছিয়ে ম্যাচে ফিরেছে তারা, টাইব্রেকারেও একপর্যায়ে পিছিয়ে ছিল দলটি। টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে এআইইউবিকে ফাইনালে তুলে নেন গত মৌসুমে দেশের শীর্ষ লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলা গোলকিপার রাজীব ইসলাম।

জাতীয় স্টেডিয়ামে গোটা ম্যাচজুড়েই ছিল টান টান উত্তেজনা। টাইব্রেকারে প্রথম চারটি শটে দুই দলই গোল করে। এআইইউবির আজিজুল হক অনন্তর নেওয়া পঞ্চম শট পোস্টে লাগে। এরপর এআইইউবির গোলকিপার রাজীব প্রতিপক্ষ গোলকিপার আরমান হোসেনের শট আটকে দলকে ম্যাচে রাখেন। তখন স্কোর দাঁড়ায় ৪-৪।

এরপর সাডেন ডেথের প্রথম শটে দুই দলই গোল করে, ৫-৫। কিন্তু সাডেন ডেথে ষষ্ঠ শটে এআইইউবি গোল করলেও ফারইস্টের সালমান গোল করতে পারেননি। তাঁর শট আটকে দেন এআইইউবির গোলকিপার রাজীব। আরমান ও সালমান দুই ভাই।

দুজনই টাইব্রেকারে শট মিস করেন। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলে জেতে এআইইউবি।

ফারইস্টের দুর্ভাগ্য, দুবার এগিয়ে গিয়েও এবং টাইব্রেকারে লিড নিয়েও তারা জিততে পারেনি। পারেনি এআইইউবির গোলকিপার রাজীব ইসলামের দৃঢ়তায়। জয়ের পর গোলকিপার রাজীবকে নিয়ে এআইইউবি মেতে ওঠে উল্লাসে। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন এআইইউবির জয়ের নায়ক রাজীব।

মূল ম্যাচে এআইইউবির প্রাধান্য ছিল। তবে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে তারা জিততে পারেনি। ৩০ মিনিটে গোল করে ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দল নিয়ে মাঠে নামা ফারইস্টকে এগিয়ে দেন ব্রাদার্সের ফরোয়ার্ড মেরাজ প্রধান।

বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে প্লেসিং করেন তিনি। ৪৪ মিনিটে সেই গোল শোধ করেন এআইইউবির আরিফুল হক। ৫৪ মিনিটে আবার গোল করে ফারইস্টকে এগিয়ে নেন মেরাজ। তবে দ্রুতই সেই গোল শোধ হয়ে যায়। ৫৯ মিনিটে গোলাম রাব্বি গোল করে ম্যাচে ২-২ সমতা ফেরান। এরপর ম্যাচ গড়ায় সরাসরি টাইব্রেকারে, যেখানে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে এআইইউবি।

ফারইস্ট আজ তাদের কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়কে পায়নি। বাংলাদেশ লিগে খেলা থাকায় খেলতে পারেননি আবাহনীর ফরোয়ার্ড আসাদুল মোল্লা, একই দলের গোলকিপার পাপ্পু হোসেন, পুলিশের মিডফিল্ডার এমএস বাবলু, ফকিরেরপুলের ফরোয়ার্ড স্বাধীন হোসেন, প্রথম বিভাগের ডিফেন্ডার লিহান উদ্দিন এবং অধিনায়ক আল আমিন ও সেনাবাহিনীর গোলকিপার আশরাফুল।

ফারইস্ট পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগে খেলা শুধু মেরাজকে। সেই মেরাজ দুই গোল করেও দলকে জেতাতে পারেননি।

অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগের আরামবাগের মিডফিল্ডার ওমর ফারুক মিঠু ও আক্কাস আলী, মোহামেডানের স্ট্রাইকার সৌরভ দেওয়ান, ডিফেন্ডার আজিজুল হক ও জাহিদ হাসানকে পেয়েছে এআইইউবি। আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় খেলতে পারেননি রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার আলফাজ মিয়া।

ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান ও জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, টুর্নামেন্টের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মো. মঞ্জুর ই খোদা তরফদার, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের বিপণন মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য, জাহিদ হাসান এমিলি ও মামুনুল ইসলাম।

গত বছর ফাইনালে এআইইউবি হেরে যায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাছে। এবার তাদের ফাইনালের প্রতিপক্ষ হবে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দল। ম্যাচটি আজই জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ