নারী ক্রিকেটে আর খেলতে পারবে না ট্রান্সজেন্ডাররা
Published: 2nd, May 2025 GMT
নারী ও কিশোরী পর্যায়ের ক্রিকেটে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে শুধুমাত্র জৈবিকভাবে নারীরা (বায়োলজিক্যাল ফিমেল) মেয়েদের ক্রিকেটে অংশ নিতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে ইসিবি।
ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্টে ‘নারী’ শব্দটির সংজ্ঞা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক এক রায়ের প্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর আগে ফুটবল ও নেটবলে এমন নিয়ম চালু হয়েছিল। এবার ক্রিকেটেও যুক্ত হলো নতুন এই বিধিনিষেধ।
ইসিবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “শুধুমাত্র যাদের জৈবিক লিঙ্গ নারী, তারাই মেয়েদের ও কিশোরীদের ক্রিকেটে অংশ নিতে পারবেন। এটা অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে ট্রান্সজেন্ডার নারী ও কিশোরীরা মিশ্র ও ওপেন ক্রিকেট ম্যাচে খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন।”
আরো পড়ুন:
ভারত সিরিজ যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবেই হবে: ফাহিম
বাংলাদেশ-আরব আমিরাত টি-টোয়েন্টি সিরিজের সূচি প্রকাশ
এর আগে ইসিবি কেবলমাত্র পেশাদার পর্যায়ে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের নিষিদ্ধ করেছিল। যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এবার সেই নিষেধাজ্ঞা ছড়িয়ে দেওয়া হলো ঘরোয়া ও বয়সভিত্তিক স্তর পর্যন্ত।
ইসিবি জানায়, ঠিক কতজন খেলোয়াড় এই নিয়মে প্রভাবিত হবেন, তা নিয়ে তাদের কাছে কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই পরিবর্তনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাদের পাশে থাকবে এবং রিক্রিয়েশনাল ক্রিকেট বোর্ডগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সহায়তা করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমাদের রিক্রিয়েশনাল ক্রিকেটের নীতিমালায় বরাবরই চেষ্টা করা হয়েছে খেলাটি যেন সর্বজনীন থাকে। খেলোয়াড়দের উপভোগ নিশ্চিত করতে এবং যেকোনো ধরনের বৈষম্য দূর করতে আমরা কাজ করে এসেছি। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে পাওয়া নতুন দিকনির্দেশনা বিবেচনায়, আমরা মনে করছি এই পরিবর্তন এখন সময়োপযোগী।”
“আমরা স্বীকার করছি, এই সিদ্ধান্ত ট্রান্সজেন্ডার নারী ও কিশোরীদের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। তবে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাদের পাশে থাকব এবং এ পরিবর্তনের প্রভাব যাতে যতটা সম্ভব কম হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করব।”
ইসিবি আরও জানায়, তারা ব্রিটেনের ইকুয়ালিটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস কমিশনের (ইএইচআরসি) নতুন নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে এবং সেটি হাতে পেলে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হবে।
সবশেষে সংস্থাটি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, “ক্রিকেটে কোনো ধরনের বৈষম্য বা অপব্যবহারের জায়গা নেই। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, খেলাটি যেন সর্বদা সম্মান ও অন্তর্ভুক্তির চেতনায় পরিচালিত হয়।”
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট শুরু, আলোচনায় জীবনযাত্রার ব্যয় ইস্যু
অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।
নির্বাচনে বড় ইস্যু: এবারের নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন ব্যয় নিয়েও ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল আসতে কয়েক দিন, এমনকি সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। তবে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশটির ইলেকটোরাল কমিশন অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক ফল ঘোষণা শুরু করবে। মূলত এই প্রাথমিক ফল থেকেই ধারণা পাওয়া যাবে যে কে দেশটির পরবর্তী সরকার গঠন করবেন।
নির্বাচনে শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে না, বরং বিদেশে থাকা দেশটির ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারেন, সেজন্য ৮৩টি দেশে ১১১টি কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে। এর মধ্যে বার্লিন, হংকং, লন্ডন ও নিউইয়র্কে বিপুল সংখ্যক অস্ট্রেলিয়ানের বসবাস রয়েছে।
দেশটির ভোটারদের জন্য ভোট দেয়ার কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৮ বছর বয়সী সবার জন্য ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। কেউ ভোট দিতে ব্যর্থ হলে তাকে ১৩ ডলার জরিমানা গুনতে হবে। প্রতিনিধি পরিষদের ১৫০টি আসনের সবকটিতেই এবং সিনেটের ৭৬টির মধ্যে ৪০টি আসনে আজ নির্বাচন হচ্ছে।
দেশটিতে প্রধান রাজনৈতিক দল দুটি: অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি এবং রক্ষণশীল লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন। কোনও দলের সরকার গঠনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদের অন্তত ৭৬টি আসন পেতে হবে। সেটি সম্ভব না হলে দলগুলো বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী বা ছোট দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
দেশটিতে কয়েক দশক ধরেই রাজ্য ও ফেডারেল সরকার নির্বাচনে ছোট দলগুলো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২২ সালের নির্বাচনে প্রতি তিনজন ভোটারের একজন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বাইরে অন্যদের ভোট দিয়েছিলেন। লেবার, দ্যা লিবারেল, দ্যা ন্যাশনালস এবং দ্যা গ্রিন মোটামুটি আলোচনায় থাকে। যদিও আসলে ১২টি দল সিনেটে আর আটটি দল প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।
সিনেটর পলিন হানসন ১৯৯৭ সালে ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ওয়ান ন্যাশন পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। হানসন প্রায়ই নানা বিতর্কের কেন্দ্রে থাকেন। তিনি সিনেটে বুরকা পড়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছিলেন। তার দলের নীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। দ্য ন্যাশনালসের সাবেক সদস্য বব কাট্টের প্রায় ৫০ বছর ধরে এমপি এবং তিনি তার বক্তৃতার স্টাইলের জন্য পরিচিত। ২০১৭ সালে সমলিঙ্গের বিয়ের বিষয়ে গণভোটের সময়ে তিনি এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।
বিলিওনিয়ার ক্লাইভ পালমারের দলের নাম ছিলো ইউনাইটেড অস্ট্রেলিয়া পার্টি। গত নির্বাচনে প্রায় ৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেও মাত্র একটি আসন পেয়েছিলেন সিনেটে। এবার পালমার ট্রাম্পেট অফ প্যাটরিওটস পার্টিকে সমর্থন দিচ্ছেন। এছাড়া সেন্ট্রাল এলায়েন্স দলের একমাত্র এমপি হলেন রেবেকা শারকি। ইতোমধ্যেই তিনি কোয়ালিশন নেতা পিটার ডাটনের সাথে যোগসূত্র রাখবেন বলে জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্য সেবা ইস্যু
বিবিসির টিফানি টার্নবুল দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া থেকে লিখেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতির সূচনা হয়েছে প্রায় চার দশক আগে। সেখানে মেডিকেয়ার নামে একটি জনবীমা প্রকল্প চালু আছে। এর আওতায় উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা নাগরিকদের জন্য মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু বিষয়টি প্রায়ই জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়। কারণ প্রয়োজনের সময় অনেককেই এই সেবা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বলতে গেলে সর্বজনীন এই স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি অনেকটাই খুঁড়িয়ে হাঁটছে। সরকার যে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে তা যথেষ্ট হচ্ছে না। জেনারেল প্রাকটিশনারসহ স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট দেখা যাচ্ছে। সেবাপ্রার্থীদের জন্য অপেক্ষার সময় ক্রমশ দীর্ঘতর হচ্ছে। রোগীদের খরচও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশটিতে অনেকেই বিবিসিকে বলেছেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
অভিবাসন আলোচনায় কেন
অস্ট্রেলিয়ার জনগোষ্ঠীর তৃতীয় বৃহত্তম অংশেরই জন্ম দেশটির বাইরে। দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির পরিচিত 'মাইগ্রেশন ন্যাশন' হিসেবে, যেখানে অভিবাসীরা নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো বাসস্থান খরচ বাড়ছে। পিটার ডাটন বলেছেন তিনি অভিবাসীরা যেন সহজেই ভোট দিতে পারেন সেজন্য ফাস্ট ট্রাক সিটিজেনশিপ চালু করবেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সীমিত করার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি পাশ হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।