আশাশুনিতে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ জরুরি
Published: 4th, May 2025 GMT
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীপুর কুড়িকাউনিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের পাউবোর বেড়িবাঁধে আবার ভয়াবহ ভাঙনের খবর গভীর উদ্বেগজনক। গেল শুক্রবার ভোররাতে আচমকা এই ভাঙনে ২০০ ফুটের অধিক স্থানে বাঁধে চিড় ধরেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদের লবণাক্ত জল প্রবেশ করে অন্তত পাঁচটি গ্রামের মাঠ-ঘের, পুকুর, বসতভিটা ও ফসলের জমি সম্পূর্ণ তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবছর এমন বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর নিত্যদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বস্তুত আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন একাধিক দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। এর পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত পাউবোর বেড়িবাঁধ বারবার ভেঙে মানুষকে সর্বস্বান্ত করে তুলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারের প্রবল চাপ এবং অপরিকল্পিত ও দুর্বল নির্মাণ—সব মিলিয়ে এই বাঁধগুলো প্রতিবছর একাধিকবার ধসে পড়ে। ফলে মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই নতুন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে নির্মিত বেড়িবাঁধের অধিকাংশই প্রকৌশলগত ও বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে টেকসই নয়। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে একটি বিপর্যয় দেখা দিলে তা সারা অঞ্চলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে একটি বাঁধ ভাঙার মধ্য দিয়ে বহু গ্রাম, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও মাছের ঘের নিমেষে বিলীন হয়ে যায়। এবারের ভাঙনও সেই রকম একটি দুর্যোগের পূর্বাভাস দিচ্ছে।
অবশ্যই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অধিবাসীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। পাউবোর কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। তবে কেবল ঘটনার পরপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে এই গভীরতর সমস্যার সুরাহা হবে না। এখন প্রয়োজন পূর্বপরিকল্পিত, প্রকৌশলগতভাবে সংহত ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। প্রতিটি দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধকে আধুনিক প্রযুক্তি, জলবায়ুসহিষ্ণু উপকরণ ও ভৌগোলিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পুনর্নির্মাণ করতে হবে। স্থায়ী ব্যূহ না গড়লে উপকূলের মানুষের জীবন কখনোই নিরাপদ হবে না।
সঙ্গে সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ ও জীবনমান রক্ষার্থে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণমূলক জল ব্যবস্থাপনা, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী কাঠামো গঠন এবং দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি জোরদার করাও সমান জরুরি। কেবল সরকারি প্রকল্প ও বরাদ্দের ওপর নির্ভরশীল থেকে উপকূল রক্ষা সম্ভব নয়। এর জন্য চাই রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
স্মরণ রাখা প্রয়োজন, উপকূল বাংলাদেশের জন্য শুধু ভূগোল নয়—এটি আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা, পরিবেশসমতা ও সার্বিক অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। প্রতিনিয়ত উপকূলের মানুষের জীবিকা হুমকিতে পড়লে এর প্রভাব পুরো দেশের ওপর এসে পড়ে। তাই আশাশুনির প্রতাপনগর হোক এক সতর্কবার্তা। নোনাপানির সঙ্গে এ লড়াইয়ে এখনই আমাদের স্থায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। বিলম্ব মানেই সর্বনাশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইউসিবির ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে অনুষ্ঠিত এজিএমে ব্যাংকটির শেয়ারধারীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহীর।
ইউসিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন ইউসিবির স্বতন্ত্র পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন, পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. তানভীর খান, স্বতন্ত্র পরিচালক ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ।
গত বছরের ২৭ আগস্ট ইউসিবির পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে নতুন চেয়ারম্যান করা হয় ব্যাংকটির উদ্যোক্তা প্রতিনিধি শরীফ জহীরকে। এ ছাড়া নতুন পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে গঠিত ওই পরিচালনা পর্ষদের অধীনে এটিই ছিল প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমানে ইউসিবির অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। বার্ষিক সাধারণ সভায় এটিকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ পাঁচ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার বিষয়ে শেয়ারধারীরা সর্বসম্মত অনুমোদন দেন। পাশাপাশি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এবং কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন শেয়ার ইস্যুর বিষয়টিও সভায় অনুমোদন করা হয়।
সভায় পরিচালনা পর্ষদকে অতিরিক্ত মূলধন সংগ্রহের জন্য কৌশলগত অংশীদার খুঁজে বের করার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, এ জন্য তারা ব্যাংকিং, ডিজিটাল ব্যাংকিং, উন্নয়নমূলক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (ডিএফআই) ও সংশ্লিষ্ট খাতে অভিজ্ঞ ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে অবশ্যই এ কার্যক্রম বিদ্যমান সব নিয়ম মেনে ও প্রয়োজনীয় অনুমোদন সাপেক্ষে করতে হবে।
সভায় জানানো হয়, মাত্র ছয় মাসে ইউসিবি ৭ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার নিট আমানত এবং ৩ লাখ নতুন হিসাব খোলার মাধ্যমে যেভাবে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে, সে জন্য বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ারধারীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা শেষ করেন ইউসিবির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) ফারুক আহাম্মদ।