সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীপুর কুড়িকাউনিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের পাউবোর বেড়িবাঁধে আবার ভয়াবহ ভাঙনের খবর গভীর উদ্বেগজনক। গেল শুক্রবার ভোররাতে আচমকা এই ভাঙনে ২০০ ফুটের অধিক স্থানে বাঁধে চিড় ধরেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদের লবণাক্ত জল প্রবেশ করে অন্তত পাঁচটি গ্রামের মাঠ-ঘের, পুকুর, বসতভিটা ও ফসলের জমি সম্পূর্ণ তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবছর এমন বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর নিত্যদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বস্তুত আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন একাধিক দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। এর পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত পাউবোর বেড়িবাঁধ বারবার ভেঙে মানুষকে সর্বস্বান্ত করে তুলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারের প্রবল চাপ এবং অপরিকল্পিত ও দুর্বল নির্মাণ—সব মিলিয়ে এই বাঁধগুলো প্রতিবছর একাধিকবার ধসে পড়ে। ফলে মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই নতুন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে নির্মিত বেড়িবাঁধের অধিকাংশই প্রকৌশলগত ও বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে টেকসই নয়। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে একটি বিপর্যয় দেখা দিলে তা সারা অঞ্চলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে একটি বাঁধ ভাঙার মধ্য দিয়ে বহু গ্রাম, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও মাছের ঘের নিমেষে বিলীন হয়ে যায়। এবারের ভাঙনও সেই রকম একটি দুর্যোগের পূর্বাভাস দিচ্ছে।

অবশ্যই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অধিবাসীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। পাউবোর কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। তবে কেবল ঘটনার পরপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে এই গভীরতর সমস্যার সুরাহা হবে না। এখন প্রয়োজন পূর্বপরিকল্পিত, প্রকৌশলগতভাবে সংহত ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ। প্রতিটি দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধকে আধুনিক প্রযুক্তি, জলবায়ুসহিষ্ণু উপকরণ ও ভৌগোলিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পুনর্নির্মাণ করতে হবে। স্থায়ী ব্যূহ না গড়লে উপকূলের মানুষের জীবন কখনোই নিরাপদ হবে না।

সঙ্গে সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ ও জীবনমান রক্ষার্থে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণমূলক জল ব্যবস্থাপনা, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী কাঠামো গঠন এবং দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি জোরদার করাও সমান জরুরি। কেবল সরকারি প্রকল্প ও বরাদ্দের ওপর নির্ভরশীল থেকে উপকূল রক্ষা সম্ভব নয়। এর জন্য চাই রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

স্মরণ রাখা প্রয়োজন, উপকূল বাংলাদেশের জন্য শুধু ভূগোল নয়—এটি আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা, পরিবেশসমতা ও সার্বিক অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। প্রতিনিয়ত উপকূলের মানুষের জীবিকা হুমকিতে পড়লে এর প্রভাব পুরো দেশের ওপর এসে পড়ে। তাই আশাশুনির প্রতাপনগর হোক এক সতর্কবার্তা। নোনাপানির সঙ্গে এ লড়াইয়ে এখনই আমাদের স্থায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। বিলম্ব মানেই সর্বনাশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানের আবদালি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা

পাকিস্তান আজ শনিবার আবদালি ক্ষেপণাস্ত্র–ব্যবস্থার সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য। এই ক্ষেপণাস্ত্র ৪৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ছিল সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি যাচাই এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত নেভিগেশন ও গতি-সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত দিকগুলো পরীক্ষা করা।

আইএসপিআর জানায়, এই উৎক্ষেপণ ‘এক্স সিন্ধু’ নামে একটি সামরিক মহড়ার অংশ ছিল। মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন আর্মি স্ট্র্যাটিজিক ফোর্সেস কমান্ডার (এএফএসসি), স্ট্র্যাটিজিক প্ল্যান ডিভিশন ও এএফএসসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এবং পাকিস্তানের কৌশলগত সংস্থাগুলোর বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা।

পাকিস্তানের আইএসপিআর ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সফল উৎক্ষেপণের জন্য সেনা, বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অভিনন্দন জানান।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় পাকিস্তানের কৌশলগত বাহিনীর প্রস্তুতি ও প্রায়োগিক দক্ষতায় পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন তাঁরা।

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলাকে ঘিরে যখন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছে, ঠিক তখন ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ পরীক্ষা চালানো হলো। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক ছিলেন। এটিকে ২০০০ সালের পর অন্যতম ভয়াবহ হামলা বলা হচ্ছে।

পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে ভারত দাবি করেছে, এই হামলার সঙ্গে আন্তসীমান্ত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। পাকিস্তান এই অভিযোগ প্রমাণহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চীনকে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো হারাতে পারবে না আমেরিকা
  • পাকিস্তানের আবদালি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা