এবার চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে একটি  হস্তীশাবক মেরে পুঁতে রাখার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব পুঁইছড়ি বশিরা বাপের বাড়িসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। তবে বন বিভাগ ঘটনাটি গণমাধ্যমে জানায়নি। আজ মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা মুঠোফোনে বিষয়টি জানালে বন বিভাগ এর সত্যতা স্বীকার করে।

ধারণা করা হচ্ছে, সপ্তাহখানেক আগে হস্তীশাবকটি মেরে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়; কিন্তু দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয় লোকজন গতকাল বন বিভাগকে খবর দেন। তখন হস্তীশাবকটি মাটিচাপা দেওয়ার বিষয়টি জানা যায়।

বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার সকালে স্থানীয় লোকজন পুঁইছড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব পুঁইছড়ি বশিরা বাপের বাড়িসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় একটি  মাটির স্তূপ দেখতে পান। স্তূপটি ঘাস দিয়ে ঢাকা ছিল। পরবর্তী সময়ে লোকজন বন বিভাগকে বিষয়টি জানালে তাঁরা মাটি খুঁড়ে হাতিটির দেহাবশেষ উদ্ধার করেন।

ধারণা করা হচ্ছে, হস্তীশাবকটির বয়স পাঁচ বছরের কম এবং এটি মাদি হাতি। বিদ্যুতের শক দিয়ে এটি মারা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা।

জানতে চাইলে জলদী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, ‘হস্তীশাবকটি মেরে পলিথিন মুড়ে পুঁতে রাখা হয়। আমরা খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ভেটেরিনারি সার্জন ও  প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্ত করিয়েছি। ময়নাতদন্তদের প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে গত ৬ এপ্রিল উপজেলার সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাংয়ের দমদমার পাহাড় এলাকার লিচুবাগানে একটি বন্য হাতি মেরে দাঁত ও নখ কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ওই ঘটনায় বাঁশখালী থানায় দুজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন চেচুরিয়া বিট কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। এ নিয়ে গত ১০ বছরে বাঁশখালীতে ১৭টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে উপজেলার কালীপুর রেঞ্জে ১১টি এবং জলদী রেঞ্জে ৬টি হাতির মৃত্যু হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের হামলা: বিস্ফোরণে ঘুম ভেঙে যায় মুজাফফরাবাদের বাসিন্দাদের

পাকিস্তানের যে কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত, তার মধ্যে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে আগে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন ঘুমাচ্ছিলেন; বিস্ফোরণের বিকট শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়।  

বিস্ফোরণের পর স্থানীয়রা তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন।

মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদের পাশে বসবাস করেন মোহাম্মদ ওহিদ। এই মসজিদটি ভারত হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে বলে দাবি করেছেন ওহিদ।

বিবিসি লিখেছে, ওহিদ বলেন, “আমি গভীর ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ একটি বিস্ফোরণ আমার ঘর কাঁপিয়ে দেয়।”

“আমি দৌড়ে রাস্তায় বের হই, দেখি অন্যরাও একইভাবে ছুটে বের হচ্ছে। কী ঘটছে, তা বোঝার আগেই আরো ক্ষেপণাস্ত্র এসে আঘাত হানে, চারদিকে আতঙ্ক আর বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।”

ওহিদ জানান, ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, “শিশুরা কাঁদছে, মহিলারা দিগদ্বিদিক ছুটছেন নিরাপদ জায়গার খোঁজে। আমরা সবাই আতঙ্কিত, জানি না কী করব। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে, চারপাশে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে আছে।”

ওহিদ বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত, তবে তিনি বুঝতে পারছেন না কেন একটি মসজিদ লক্ষ্যবস্তু করা হলো।

“এটা ছিল একটি সাধারণ মহল্লার মসজিদ, যেখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। এর চারপাশে কখনো কোনো সন্দেহজনক কিছু দেখিনি,” যোগ করেন ওহিদ।

বিবিসি লিখেছে, ভারত সরকার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৯টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে অবশ্য বলা হয়েছে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের ৫টি স্থানে আঘাত করেছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন লিখেছে, ৭ মে গভীর রাতে ভারতের এই হামলায় পাকিস্তানের অন্তত তিনজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। 

বিবিসি লিখেছে, ভারত সরকার বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যার লক্ষ্য পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও হামলা পরিচালিত হচ্ছে।

ভারত নিজস্ব আকাশসীমা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
বিবিসি লিখেছে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ তাদের দেশের জিও টিভিকে বলেছেন, “ভারত তাদের নিজস্ব আকাশসীমা থেকে পাকিস্তানের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই হামলাগুলো বেসামরিক এলাকায় আঘাত হেনেছে। ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে’ বলে ভারত যে দাবি করেছে, সেটি মিথ্যা।” 

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ২৬ জন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক। এই হামলায় পাকিস্তানের দায় দেখছে ভারত। নয়াদিল্লির অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের মদদ দেয় ইসলামাবাদ। এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তাতে সমর্থন দেয় ভারতের সব রাজনৈতিক দল।

সেই থেকে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই উত্তেজনার মধ্যেই ৭ মে গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে হামলা করল ভারত। এখন পাকিস্তান কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় বা জবাব দেয়, তারপর ওপর নির্ভর করছে বাকিটা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ